২০২০ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লিভারপুল
২০২০ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লিভারপুল

লিভারপুল এবার প্রিমিয়ার লিগ জিতবে, কেন মনে করছেন সমর্থকেরা

‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’—প্রচলিত প্রবাদটিকে লিভারপুল সমর্থকেরা একটু ঘুরিয়ে বলতেই পারেন, ‘বিশ্বাসে মেলায় ট্রফি, তর্কে বহুদূর!’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম সবে মাঠে গড়িয়েছে। শিরোপাধারী ম্যানচেস্টার সিটির শুরুটা হয়েছে চ্যাম্পিয়নদের মতোই। লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে বার্নলিকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে সিটি। পেপ গার্দিওলার দলের টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা জয়ের পক্ষে বাজি ধরার লোকই বেশি।

অন্যদিকে লিভারপুল নিজেদের প্রথম ম্যাচে চেলসির সঙ্গে  ড্র করেছে ১-১ গোলে। তবে বলতে গেলে প্রিমিয়ার লিগের পুরো মৌসুমটাই বাকি। তাই লিভারপুল–সমর্থকদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যেকোনো মুহূর্তে পাশার দান বদলে যায় বলেই তো এটা বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল লিগ। তবে লিভারপুল–সমর্থকেরা এখনই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন এবার লিগ জিতবে তাঁদের প্রিয় দল। ক্লপের দলের লিগ শিরোপা-ভাগ্যের একটা তত্ত্বও বের করে ফেলেছেন তাঁরা। তত্ত্বটা হলো, ক্লপের দলে জাপানি ফুটবলারের উপস্থিতি।

লিভারপুলে হঠাৎ ‘জাপানি-ইফেক্ট’ সামনে আনার কারণ ওয়াতারু এন্দোর আগমন। জাপান জাতীয় দলের অধিনায়ক এন্দোকে ১ কোটি ৯০ লাখ ইউরোর (২২৬ কোটি টাকা) বিনিময়ে জার্মান ক্লাব স্টুটগার্ট থেকে নিয়ে এসেছে লিভারপুল। গ্রীষ্মকালীন দলবদলে এন্দোকে নিয়ে ৩ জন খেলোয়াড় কিনল মার্সিসাইডের ক্লাবটি। এর আগে তারা কিনেছে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ও হাঙ্গেরির দমিনিক সোবোসলাইকে।

লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন জাপানের অধিনায়ক ওয়াতারু এন্দো

শুরুতে এন্দোকে কেনার কোনো পরিকল্পনা ছিল না লিভারপুলের। তাদের চোখ ছিল মোইসেস কাইসেদো ও রোমিও লাভিয়ার ওপর। কিন্তু চেলসির ‘টাকার গরমের’ সঙ্গে পেরে ওঠেনি। কাইসেদো-লাভিয়াকে দুজনকেই কিনে নিয়েছে চেলসি।

এখন লিভারপুল–সমর্থকেরা মনে করছেন, এন্দোকে অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়াতেই শুধু লাভবান হয়নি তাঁদের দল; বরং তাঁর আগমনে ২০২৩-২৪ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জেতাও নিশ্চিত হয়ে গেছে! কীভাবে?

ক্লপ আর কাগাওয়া যখন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে ছিলেন

ক্লপ এখন পর্যন্ত দুটি ক্লাবের হয়ে ৩ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ৩ বারই তাঁর দলে ছিলেন কোনো না কোনো জাপানি। ২০১১ ও ২০১২ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে জার্মান বুন্দেসলিগা জেতান ক্লপ। তাঁর দলে ২০১০-১১ মৌসুমেই যোগ দেন শিনজি কাগাওয়া, যাঁকে জাপানের সর্বকালের সেরা মিডফিল্ডার মনে করেন অনেক ফুটবল বোদ্ধা।

২০১৫ সালে স্বদেশি ক্লাব ডর্টমুন্ডের পাট চুকিয়ে লিভারপুলের কোচ হন ক্লপ। দলটিকে প্রথম ৩ মৌসুমে কোনো ট্রফি এনে দিতে না পারলেও ২০১৯ সালে এনে দেন তিনটি—উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপ আর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। কিন্তু অলরেডদের প্রিমিয়ার লিগ জয়ের দীর্ঘ অপেক্ষাটা যেন কিছুতেই ফুরাচ্ছিল না।

জাপানি উইঙ্গার মিনামিনোর আগমনের পর লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতাতে পেরেছেন ক্লপ

অবশেষে এক জাপানিকে দলে এনেই ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল ক্লাবটির আক্ষেপ ঘোচান ক্লপ। ২০২০ সালে অস্ট্রিয়ান ক্লাব রেড বুল সাল্‌জবুর্গের কাছ থেকে জাপানি উইঙ্গার তাকুমি মিনামিনোকে ছাড়িয়ে নেয় লিভারপুল। তিন দশকের খরা কাটিয়ে সে বছরই প্রিমিয়ার লিগ জেতে ক্লাবটি। আর এবার লিভারপুলে যোগ দিলেন আরেক জাপানি এন্দো। সেই হিসেবে আগামী মৌসুমে তাদেরই তো প্রিমিয়ার লিগ জেতার কথা!

গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর এন্দো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘একটি চমৎকার ক্লাবের অংশ হতে পেরে আমি খুব খুশি। অ্যানফিল্ডে লিভারপুল–সমর্থকদের সামনে খেলতে তর সইছে না। শিগগিরই দেখা হবে।’

এন্দোর লিভারপুলে আসার খবরে টুইটার ছেয়ে গেছে। গোল ডটকম, ব্লিচার রিপোর্ট, ইএসপিএন এফসি, স্পোর্টস বাইবেলসহ ফুটবলবিষয়ক অনেক সংবাদমাধ্যম লিভারপুলের জার্সিতে তাঁর ছবি পোস্ট করেছে।

সেসব পোস্টেই এক সমর্থক লিখেছেন, ‘শিনজিকে (কাগাওয়া) নিয়ে ডর্টমুন্ডে দুটি, তাকিকে (মিনামিনো) নিয়ে লিভারপুলে একটি। তার মানে এবার এন্দোকে নিয়েও...এটাই গণিত।’ তাঁর সেই টুইটে আরেকজনের মন্তব্য, ‘আপনি কি তাহলে বোঝাতে চাইছেন, এবার সুযোগ আসছে...!’

আরেক টুইটার ব্যবহারকারীর মন্তব্য, ‘ইয়ুর্গেন ক্লপ জাপানিকে ছাড়া কখনোই লিগ শিরোপা জেতেননি। লিভারপুল ফুটবল ক্লাবে আপনাকে স্বাগত, ওয়াতারু এন্তদো’। অন্য একজনের মন্তব্য এমন, ‘এন্দো লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন...শিরোপা পাওনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এন্দোকে এভাবেই দলে স্বাগত জানিয়েছেন ক্লপ

বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৮টায় অ্যানফিল্ডে বোর্নমাউথের মুখোমুখি হবে লিভারপুল। এ ম্যাচ দিয়ে অলরেডদের জার্সিতে এন্দোর অভিষেক হতে পারে। ডিফেন্সিভ মিড-সেন্টার ব্যাক দুই জায়গাতেই খেলতে পারেন এন্দো।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০-২১ মৌসুম থেকে বুন্দেসলিগায় অ্যারিয়াল ডুয়েলে জয়, পা দিয়ে বল বিপদমুক্ত করা, হেডে বল বিপদমুক্ত করা ও অ্যাটাকিং থার্ডে বলের দখল—সবকিছুতেই সবার ওপরে আছেন এন্দো। কে জানে, রেকর্ডটা লিভারপুলের জার্সিতেও ধরে রাখতে পারলে সমর্থকদের ‘জাপানি-ইফেক্ট’-এর তত্ত্বটাও হয়তো ফলবে!