প্রতিপক্ষের গোল সামলাতেই ‘কূল’ পান না গোলরক্ষকেরা, আবার গোল করবেন কখন? সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্তে থাকেন বলে গোলরক্ষকদের গোল করার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
সাধারণত দুই ক্ষেত্রে গোলরক্ষকেরা গোল করতে পারেন। একটি হচ্ছে, লম্বা করে বাড়ানো বল, যা সোজাসুজি যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের ভুলে জালে জড়ায়। আরেকটি হচ্ছে ম্যাচের শেষ দিকে নিজেরাই প্রতিপক্ষের ডি–বক্সে চলে গেলে। যখন গোল হজমের ভয়ের চেয়ে গোল করাটা বেশি জরুরি, তখনই দেখা দেয় এ ধরনের দৃশ্য।
প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে গোলরক্ষকদের গোলের ঘটনা বেশ কয়েকটিই আছে। এখন পর্যন্ত ৬ বার।
পিটার স্মাইকেল
অ্যাস্টন ভিলা–এভারটন, ২০ অক্টোবর ২০০১
প্রিমিয়ার লিগে গোল করা প্রথম গোলরক্ষক পিটার স্মাইকেল। ডেনমার্কের কিংবদন্তি গোলরক্ষক তখন অ্যাস্টন ভিলায় খেলেন। ২০০১ সালের ২০ অক্টোবর গুডিসন পার্কে অ্যাস্টন ভিলা তখন ৩–১ গোলে পিছিয়ে। মৌসুমের সেটি প্রথম দিক, লিগ পয়েন্ট তালিকায় বড় কোনো হেরফের হওয়ার অঙ্ক নেই। এমন ম্যাচে সাধারণত গোলরক্ষকেরা পোস্ট ছেড়ে প্রতিপক্ষের ডি–বক্সে যাওয়ার ঝুঁকি নেন না। কিন্তু স্মাইকেল নিলেন, তা–ও কর্নার থেকে ‘কিছু করা যায় কি না’ ভাবনা থেকে। দাঁড়িয়েছিলেন এভারটন গোলপোস্টের এক পাশে। কর্নার থেকে আসা বল গেল ঠিক তাঁর কাছেই। দক্ষ স্ট্রাইকারের মতো ভলিতে বল জালে পাঠিয়ে দেন স্মাইকেল। অ্যাস্টন ভিলা গোলরক্ষকের গোলে বেশ মজা পায় এভারটনের সমর্থকেরাও। তালি দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয় স্মাইকেলকে।
ব্রাড ফ্রিডেল
ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স–চার্লটন অ্যাথলেটিক, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪
চার্লটন অ্যাথলেটিক তখন ২–১ গোলে এগিয়ে। অন্তত একটি পয়েন্ট তুলতে এক গোল দরকার ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের। ম্যাচের শেষ দিকে ব্ল্যাকবার্ন কর্নার পেলে সেখানে ছুটে যান গোলরক্ষক ফ্রিডেল। কর্নারে বল বাড়ানো হয়েছিল লম্বা করে। তবে একটা পর্যায়ে গোলমুখে জটলায় চলে আসে বল, ঠিক ফ্রিডেলের সামনেই। বল জালে জড়িয়ে দিয়ে যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যুক্তরাষ্ট্রের এই গোলরক্ষক। কিছুক্ষণ পরই অবশ্য মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখতে হয় তাঁকে। যোগ করা সময়ে ফ্রিডেলকে ফাঁকি দিয় আরেকটি গোল দিয়ে দেয় চার্লটন। ব্ল্যাকবার্ন মাঠ ছাড়ে হার নিয়ে।
পল রবিনসন
টটেনহাম–ওয়াটফোর্ড, ১৭ মার্চ ২০০৭
পল রবিনসন যখন বলে শট নেন, তাঁর ভাবনাতেই ছিল না গোল হবে। টটেনহাম গোলরক্ষক লম্বা করে বল বাড়িয়েছিলেন, ফেলতে চেয়েছিলেন ওয়াটফোর্ডের ডি–বক্সের দিকে। শট নেওয়ার পর দেখা গেল এগিয়ে আসা ওয়াটফোর্ড গোলরক্ষক বেন ফস্টার হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বল তাঁর মাথার ওপর দিয়ে জালে যায়। সেটি ছিল ম্যাচে টটেনহামের দ্বিতীয় গোল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৩–১ গোলে জেতে টটেনহাম।
টিম হাওয়ার্ড
এভারটন–বোল্টন ওয়ান্ডারার্স, ৪ জানুয়ারি ২০১২
এই গোলে টিম হাওয়ার্ডের যত না অবদান, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বাতাসের। এভারটন গোলরক্ষক টিম হাওয়ার্ড নিজের ডি–বক্স থেকে লম্বা করে শট নেন। বোল্টন গোলপোস্টের প্রায় ৩০ গজ দূরে বাউন্স করে বলটি। এরপর বাতাসে দিক পরিবর্তন করে বোল্টন গোলরক্ষক অ্যাডাম বোগডানের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় জালে। গোল হজম করা দল তো বটেই, অবাক হয়ে যান হাওয়ার্ড নিজেই। ম্যাচে এই গোলটি হয়েছিল ৬৩ মিনিটে। তবে হাওয়ার্ডের দল শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। শেষ দিকে দুই গোল করে বোল্টনই তিন পয়েন্ট তুলে নেয়। যদিও মৌসুম শেষে ১৮তম হয়ে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করে বোল্টন।
আসমির বেগোভিচ
স্টোক সিটি–সাউদাম্পটন, ২ নভেম্বর ২০১৩
প্রিমিয়ার লিগে গোলরক্ষকদের পঞ্চম গোল এটি। তবে এর বিশেষত্ব হচ্ছে, দ্রুততম। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার ১৩.৬৪ সেকেন্ডেই গোল করে ফেলেন স্টোক সিটির গোলরক্ষক আসমির বেগোভিচ। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের দ্রুততম গোলগুলোর একটি এটি। খেলা শুরুর পর সতীর্থের ব্যাক পাসে বল যায় স্টোক সিটি গোলরক্ষক বেগোভিচের কাছে। প্রথম স্পর্শে বলে লম্বা করে শট নেন তিনি। সাউদাম্পটন ডি–বক্সের সামনে বল বাউন্স করে চলে যায় জালের দিকে। এগিয়ে আসা সাউদাম্পটন গোলরক্ষক আর্তার বোরুচ বুঝতেই পারেননি বল কোথায় আসছে। যতক্ষণে বুঝেছেন, কিছুই করার ছিল না।
আলিসন বেকার
লিভারপুল–ওয়েস্ট ব্রম, ১৬ মে ২০২১
প্রিমিয়ার লিগে গোলরক্ষকদের গোলের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী ছিল আলিসন বেকারের গোল। মৌসুমের শেষ দিক তখন। লিভারপুল তখনো শীর্ষ চারের মধ্যে ঢুকতে পারেনি। এমন এক সময়ে ম্যাচের ৯৫ মিনিট পর্যন্ত ওয়েস্টব্রমের সঙ্গে ১–১ সমতায় ছিল লিভারপুল। কর্নার পাওয়ার পর ওয়েস্টব্রম ডি–বক্সে ছুটে যান আলিসন। বল এসেছিল ঠিক তাঁর কাছে। দারুণ হেডে বল জালে জড়িয়ে লিভারপুলকে পূর্ণ পয়েন্ট এনে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক।
সেদিন লিভারপুলকে শুধু ম্যাচই জেতাননি আলিসন, মৌসুমটাও বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। ওই মৌসুমে লিভারপুলের তৃতীয় হওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল আলিসনের সেই গোলটি।