মাত্র ৩২ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল ছেড়ে দিয়েছেন এডেন হ্যাজার্ড
মাত্র ৩২ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল ছেড়ে দিয়েছেন এডেন হ্যাজার্ড

রোনালদোর চেয়ে যেখানে নেইমার ও নিজেকে এগিয়ে রাখেন হ্যাজার্ড

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তাঁর চেয়ে বড় খেলোয়াড়—এটা মানতে দ্বিধা নেই এডেন হ্যাজার্ডের। তবে একটা জায়গায় পর্তুগিজ তারকার চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখেন সাবেক বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। এগিয়ে রাখেন ব্রাজিলের নেইমারকেও।

মাত্র ৩২ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানানো সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বলেছেন, রোনালদোর মতো ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তাঁর কখনোই ছিল না। নিজেকে ফিট রাখতে জিমে সময় কাটানো কিংবা মনোবিদের দ্বারস্থ হওয়ার পর্যায়েও যেতে চাননি।

ফরাসি ক্লাব লিল ও ইংলিশ ক্লাব চেলসি ঘুরে ২০১৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখান হ্যাজার্ড। তাঁকে দেওয়া হয় আগের মৌসুমে মাদ্রিদ ছেড়ে যাওয়া রোনালদোর ৭ নম্বর জার্সি। তবে রিয়ালের প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি হ্যাজার্ড। একের পর এক চোটে ছন্দ হারিয়েছেন। পাশাপাশি ছিল পর্যাপ্ত অনুশীলন না করা, বেশি ওজন ও রিয়ালের খেলার ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা। শেষ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাকি থাকতেই ২০২৩ সালের জুনে রিয়াল ছেড়ে দেন তিনি। ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাব তাঁকে নেওয়ার আগ্রহ দেখালেও যাননি কোথাও।

গত অক্টোবরে পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া এই ফরোয়ার্ড সম্প্রতি লেকিপের সঙ্গে কথা বলেছেন। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে মেসি বনাম রোনালদোর প্রসঙ্গও উঠে আসে।

হ্যাজার্ড অন্য অনেকের মতো মেসি–রোনালদোকে এক কাতারে দেখেন না, স্পষ্টতই এগিয়ে রাখেন আর্জেন্টাইন তারকাকে। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রোনালদোর সঙ্গে নিজের তুলনাও টানেন হ্যাজার্ড, ‘আমি মনে করি, মেসি একজনই। বার্সেলোনা তারকার খেলা দেখতে আমার ভালো লাগে। সে ইতিহাসের সেরা। ওর কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। ক্রিস্টিয়ানো আমার চেয়ে বড় খেলোয়াড়। কিন্তু “পিওর ফুটবল”–এর কথা বললে, আমার চেয়ে বড় বলে মনে করি না। নেইমারও (আমার চেয়ে) বড় হতে পারে। কিন্তু সে (রোনালদো) আমার চেয়ে বড় নয়। আর মাদ্রিদে আশপাশে যারা খেলে, তারাও সেরা। বিশেষ করে ক্যারিয়ার বিবেচনায় বেনজেমা, মদরিচ সেরা ছিল। ক্রুস, ডি ব্রুইনারাও আছে। এরা সবাই ফুটবল রাঙিয়েছে।’

রিয়ালে থাকাবস্থায় বেশির ভাগ সময় চোটের সঙ্গে লড়তে হয়েছে হ্যাজার্ডকে

‘পিওর ফুটবল’–এর দিক থেকে হ্যাজার্ড নিজেকে যাঁর তুলনায় এগিয়ে রাখছেন, সেই রোনালদো ৩৯ বছর বয়সেও খেলে চলেছেন। কিন্তু ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ক্লাব ফুটবলে ১৬৮ ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৩৩ গোল করা হ্যাজার্ড ফুটবল ছেড়ে দিয়েছেন ৩২ বছরেই।

এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত না করার পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছেন হ্যাজার্ড, ‘(রোনালদোর মতো) লম্বা ক্যারিয়ার আমার চাওয়া ছিল না। ম্যাচ খেলা, এরপর এক ঘণ্টা ঠান্ডা জলে ডুবে থাকা—এসব আমি চাইনি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বাড়িতে যাওয়া, কার্ড খেলা, একটু পানীয় পান—আমি এসব নিয়েই থাকতে চেয়েছি। আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে বাগানে দুই ঘণ্টা বাগানে খেলতে চেয়েছি। ওটাই আমার রিকভারি। ক্রিস্টিয়ানো একজন ভালো ফুটবলারের উদাহরণ, আরও অনেকেই আছে। আমি যদি ওর মতো হতে চাইতাম, তবে পুড়ে যেতাম। প্রতি তিন দিনে একবার জিমে যেতে চাইনি আমি। তিন ঘণ্টা মনোবিদের সঙ্গেও সময় কাটাতে চাইনি।’

ছোটবেলা থেকেই রিয়াল মাদ্রিদে খেলার স্বপ্ন ছিল হ্যাজার্ডের। কিন্তু সুযোগ পাওয়ার পর স্বপ্নের ক্লাবটিতে কেন সফল হতে পারেননি, সে ব্যাখ্যায় ৭৬ বলে ৭ গোল করা হ্যাজার্ড বলেন, ‘এটা কিছুটা দাম্ভিক দল। আমি ও রকম কিছু নই। এমনকি অন্যান্য ক্লাবের তুলনায় তারা যে ধরনের ফুটবল খেলে, সেটাও আমার ঠিক পছন্দ নয়। কিন্তু রিয়ালে খেলা আমার স্বপ্ন ছিল। ওখানে যাওয়া ছাড়া আমার ক্যারিয়ার শেষ করতে পারতাম না। আমার মতো করে খেলে সফল হতে চেয়েছিলাম। তবে এতে বোঝা যায়, রিয়াল মাদ্রিদ যেকোনো কিছুর চেয়েই বড়। সেখানে ভালো করাটা কঠিন। আমার সম্ভবত আরও অনুশীলন করা দরকার ছিল।’

চেলসিতে সাত মৌসুম কাটিয়ে যাওয়া হ্যাজার্ডের কাছে স্প্যানিশ লিগকেও কঠিন মনে হয়েছিল, ‘প্রিমিয়ার লিগে খেলাটাকে সম্মান করা হয়। খুব বাজে ট্যাকল করে না। কিন্তু স্পেনে এটা বাজে। সবচেয়ে নিষ্ঠুর ব্যাপার হচ্ছে, এখানে নির্দয় আচরণ দেখা যায়। আমি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে এসবে জড়াইনি।’