বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা গতকালই বলেছিলেন, মেলবোর্নের পুনরাবৃত্তি ঢাকায় হতে দেবেন না বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। আজ কিংস অ্যারেনায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালোই প্রতিরোধ গড়েছিল বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলা, সাবেক এশীয় চ্যাম্পিয়নদের শক্তি-সামর্থ্যের তুলনায় যোজন যোজন পিছিয়ে থাকার পরও আজ একেবারে উড়ে যায়নি কাবরেরার দল। ২-০ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে লড়াইটা ঠিকই করেছেন তপু বর্মণ, ইসা ফয়সাল, সোহেল রানা, মোরছালিন, রাকিবরা।
অস্ট্রেলিয়া এমন একটা দল, যাদের হোম কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে আটকানো সহজ নয়। কারণ, বাংলাদেশের ফুটবলারদের তুলনায় তাদের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্কিল যে অনেক বেশি। তারপরও ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলাররা অস্ট্রেলীয় দলের সঙ্গে বুটে বুটে টক্কর দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দল গোলের সুযোগ তৈরি করেছে যথেষ্টই। কিন্তু সেদিক দিয়ে ব্যর্থতা কিছুটা ছিল অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড কুসিনি ইয়েঙ্গি, নেস্তর ইরানকুন্দা, মিচেল ডিউকদের। বাংলাদেশের রক্ষণ বারবার ফাঁকি দিলেও গোলটাই তাঁরা বের করতে পারেননি প্রথমার্ধের ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এর মধ্যে রাকিব হোসেন, মোরছালিনরা সাহস করে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু স্কিলে পেরে ওঠেননি অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার কাই রোলেস, রায়ান স্ট্রেইন ও হ্যারি শুটারদের সঙ্গে।
জামাল ভূঁইয়াকে একাদশের বাইরে রেখেই আজ মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। জামাল এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি ম্যাচই খেলেছেন। তবে মাঝমাঠে মোহাম্মদ হৃদয়, সোহেল রানা সিনিয়র, সোহেল রানা জুনিয়র চেষ্টা করেছেন। যদিও জামালকে দ্বিতীয়ার্ধের ৫৫ মিনিটে কোচ চোট পাওয়া সোহেল রানা জুনিয়রের জায়গায় মাঠে নামিয়েছেন।
৩০ মিনিট পর্যন্ত স্কোরলাইন গোলশূন্য। কিংস অ্যারেনার দর্শকেরা যখন কিছুটা উজ্জীবিত, তখনই গোল আদায় করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। আগামী মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখে খেলতে যাবেন নেস্তর ইরানকুন্দা, ডান প্রান্তে তাঁর পাস থেকে বল পেয়ে আইদিন রুচতিচ গোলে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝখানে সেই শট ডিফেন্ডার মেহেদী হাসানের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলকিপার মিতুল মারমাকে বোকা বানায়। মেহেদী অনেক সময় ও জায়গা পেয়েছিলেন। তিনি বলটা উড়িয়েই মারতে পারতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর।
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় গোলটি পায় ম্যাচের ৬২ মিনিটে। একটি সম্মিলিত আক্রমণ থেকে জর্ডান ব্রস বাংলাদেশের গোলমুখে যে ক্রস ফেলেন, তাতে খুব সহজেই মাথায় ছুঁইয়ে গোল করেন কুসিনি ইয়েঙ্গি। ছয় ফুটের ওপর লম্বা ইয়েঙ্গিকে হেডটি করতে খুব বেগ পেতে হয়নি। পুরো ম্যাচেই রক্ষণে লো ব্লক করে অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণগুলো ব্যর্থ করে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাতাসে ভাসা বল নিয়ে যে শঙ্কা আগে থেকে ছিল, সেটিই সত্যি হলো ৬২ মিনিটে।
দ্বিতীয়ার্ধে চারটি বদল আনেন বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তারিক কাজীর বদলে নামেন শাকিল আহমেদ, সাদউদ্দিনের জায়গায় রিমন হোসেন, সোহেল রানা সিনিয়রের জায়গায় চন্দন রায়। এরপর ইসা ফয়সালের জায়গায় নামেন রহমত মিয়া। উদ্দেশ্য পরিষ্কার—গোল খাওয়া যাবে না, যেকোনো মূল্যেই গোলের ব্যবধান কম রাখতে হবে। সেই উদ্দেশ্য আজ সফল।
অস্ট্রেলিয়ার ডাগআউটে তাদের কোচ গ্রাহাম আরনল্ড দাঁড়িয়ে ছিলেন উদ্বেগময় চেহারা নিয়ে। মেলবোর্নে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া দল, ঘরের মাঠে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, সেটিই ছিল উদ্বেগের কারণ। আজকের ম্যাচে গ্রাহাম আরনল্ডের সেই চেহারাই বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু।
ঢাকায় মেলবোর্নের পুনরাবৃত্তি হয়নি, এটাই–বা কম কী!