চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে শেষ বাঁশি বাজতে একই মিলানকে দেখা গেল দুই রূপে। মিলানের লাল অংশকে হতাশায় মুড়ে দিয়ে চলল নীলের উৎসব। সান সিরোর গ্যালারিতেও নীলের উদ্যাপনে চাপা পড়ে গেল লালের আর্তনাদ। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন একটি উপাখ্যান লিখতে চাওয়া এসি মিলান শিবিরে তখন রাজ্যের হতাশা।
চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘ক্যামব্যাকের’ গল্প তো কম দেখা যায়নি। কিন্তু এই রাতে গল্পটা সমান্তরালই থাকল, যা হওয়ার কথা ছিল তাই হলো। প্রথম লেগে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা ইন্টার দ্বিতীয় লেগেও জিতল ১-০ গোলে। তাই এই ম্যাচকে ঘিরে নাটকীয়তার স্বপ্ন দেখা ফুটবল রোমান্টিকদের রক্তচাপও শেষ পর্যন্ত আর বাড়েনি। হিসাব–নিকাশ সরল রেখেই ফাইনালে পৌঁছে গেল ইন্টার।
ইউরোপিয়ান মঞ্চে ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন মিলানের জন্য রাতটা হতাশার হলেও বর্তমান ছন্দ ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সকে বিবেচনায় নিলে সেমিফাইনালে খেলাকেও দারুণ অর্জন বলতে হয়। মৌসুম শেষে এই অর্জনে গর্বিতও হতে পারত তারা। কিন্তু গন্ডগোলটা বাঁধছে অন্য জায়গায়। এবার না হয় সেমিফাইনাল খেলে নিজেদের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে মিলান বিদায় নিল, কিন্তু আগামী মৌসুমে কী হবে? পরের মৌসুমে মিলান আদৌ চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারবে তো?
পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালেই মিলবে আসল চোখ রাঙানিটা। সিরি ‘আ’র পয়েন্ট তালিকায় বর্তমানে এসি মিলানের অবস্থান ৫ নম্বরে। পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে হলে এসি মিলানকে থাকে হবে শীর্ষ চারে। ৩ ম্যাচ হাতে থাকা মিলানের জন্য কাজটা অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন।
এরই মধ্যে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা নাপোলির শীর্ষে থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলাটা নিশ্চিত। ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকা জুভেন্টাসেরও দ্বিতীয় দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। তিন ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট পেলে কোনো সমীকরণ ছাড়া ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে যেতে পারবে ‘তুরিনের বুড়ি’রা।
মিলানকে হারিয়ে যে ইন্টার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে গেছে তাদের পয়েন্ট ৩৫ ম্যাচে ৬৬। পরের তিন ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট পেলে তাদেরও তরি পার হয়ে যেতে পারে। মিলানের মূল লড়াইটা হতে পারে লাৎসিওর সঙ্গে। ৩৫ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৬৫। লাৎসিওর পরের তিনটা ম্যাচই নিচের সারির দলের সঙ্গে। সে তিন ম্যাচে তারা খেলবে উদিনেসে, ক্রিমোনেসে ও এম্পোলির বিপক্ষে।
এই তিন ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট পেলেও উতরে যাবে রোমের ক্লাবটি। তাই মিলানকে এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে অতিনাটকীয় কিছুর ওপরই নির্ভর করতে হবে। যেখানে তাদের ভাগ্য আপাতত অনেকগুলো ‘যদি’ ‘কিন্তু’র ওপর ঝুলে আছে। মিলান পরের তিন ম্যাচ খেলবে সাম্পদোরিয়া, জুভেন্টাস ও ভেরোনার সঙ্গে। তবে আরেকটি পথে মিলানের ভাগ্য খুলতে পারে। সম্প্রতি জুভেন্টাসের নতুন করে শাস্তিতে পড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদি তেমনটা হয়, তবে সেরা চারে না থেকেও কপাল খুলতে পারে মিলানের।
প্রশ্ন হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত মিলান যদি চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার টিকিট না পায় তখন কী হবে? ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো এরই মধ্যে আতঙ্কিত হওয়ার মতো খবরই দিচ্ছে। লা গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্তের একটি প্রতিবেদন বলছে, যদি মিলান শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে না পারে, তবে আগামী মৌসুমের পুরো ম্যানেজমেন্টের ছাঁটাই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী মৌসুমে দলটি ইউরোপ সেরার মঞ্চে যেতে ব্যর্থ হলে খেলোয়াড়ি ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে মিলান। চলতি মৌসুমে সেমিফাইনালে খেলার কারণে বেশ ভালো আয় হয়েছে মিলানের। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মৌসুমে মিলানের চ্যাম্পিয়নস লিগ না খেলা হবে ক্লাবটির জন্য বড় ধাক্কা। আর শেষ পর্যন্ত তেমনটা হলে বড় ঝড়ই যাবে মালদিনি-মাসারা-পিওলির নেতৃত্বাধীন ম্যানেজমেন্টের ওপর।