দুই দশকে বাংলাদেশের ফুটবলই পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা। সাফ জেতার বছরের ১৪৪ ফিফা র্যাঙ্কিং থেকে বাংলাদেশ এখন ১৯২ নম্বরে।
যেটা সত্যি, যেটা বাস্তব, সেটাই আগে মেনে নেওয়া ভালো। সাফ ফুটবলে এবার বাংলাদেশ বড় কিছু করবে, এ আশা বাড়াবাড়ি। বেশ বাড়াবাড়ি। বড় কিছু বলতে যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে, তা বোধ হয় ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
অথচ দুই দশক আগেও সাফ খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের কাছে শিরোপাই হতো একমাত্র চাওয়া। হ্যাঁ, সেই চাওয়া খুব বেশি পূরণ হয়নি। সাফ আসলে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র একবারই, ২০০৩ সালে। দুইবার হয়েছে রানার্সআপ—১৯৯৯ ও ২০০৫ সালে। কিন্তু তারপরও তখন অন্তত দলটা আশা জাগিয়ে খেলতে যেত এই টুর্নামেন্টে। হাভিয়ের কাবরেরার এই দল আসলে সেই আশাও জাগাতে পারছে না।
শুধু কাবরেরার এই দল কেন, ২০০৯ সালের পর কোনোবারই বাংলাদেশ সাফের গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি। শেষ ২০২১ সালে অবশ্য গ্রুপ পর্ব ছিলও না, টুর্নামেন্ট হয়েছিল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। চার ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল মাত্র একটি, টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থানে থেকে। আর এবার তো ইতিহাসের সবচেয়ে ‘কঠিন’ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নেপালের মতো দলগুলোর বাইরেও এবার সাফে অতিথি হিসেবে খেলছে কুয়েত আর লেবানন। এমনিতেই ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ আমাদের কাছে কঠিন প্রতিপক্ষ; এর ওপর কুয়েত, লেবানন—মধ্য এশিয়ার শক্তিশালী দুই দলের উপস্থিতি। প্রত্যাশা থাকে কী করে!
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিশাল ফারাক অবশ্য সব সময়ই ছিল দেশের ফুটবলে। এমনকি সেই তথাকথিত ‘স্বর্ণযুগে’ও। যখন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ছাড়া আর কোনো দেশই শক্তিতে বাংলাদেশের ওপরে ছিল না, তখনো তো জাতীয় ফুটবল দল প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি দেশের মানুষের। তখনো বাংলাদেশ নেপালের কাছে হেরেছে, পাকিস্তানের কাছে হেরেছে। নইলে কি আর সাফ গেমসের ফুটবলে সোনার পদক জিততে ১৫ বছর লাগে!
১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া সাফ গেমসের ফুটবলে বাংলাদেশ সোনা জিতেছে ১৯৯৯ সালে। তত দিনে ভারত তো বটেই, নেপাল, পাকিস্তানও অন্তত দুইবার করে সোনা জিতে গেছে। ১৯৯৩ থেকে শুরু হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে (প্রথম আসরের নাম ছিল সার্ক গোল্ডকাপ) বাংলাদেশ প্রথম অংশ নেয় ১৯৯৫ সালে, চ্যাম্পিয়ন হতে লাগে আট বছর।
২০০৩ সালে দেশের মাটিতে শিরোপা জেতার পর দুই দশক পেরিয়েছে। এই সময়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে আরও আটবার, প্রতিবারই বাংলাদেশের গল্পটা আক্ষেপ আর আহাজারির। সাফের এই ব্যর্থতা একটা সূচকমাত্র, আসলে তো এই দুই দশকে বাংলাদেশের ফুটবলই পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা।
সাফ জেতার বছরের ১৪৪ ফিফা র্যাঙ্কিং থেকে বাংলাদেশ এখন ১৯২ নম্বরে। পিছিয়ে থাকা মালদ্বীপ, নেপালও এখনো বাংলাদেশের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। এখন নেপালকে হারানো মানেই যেন বড় কিছু করে ফেলা, মালদ্বীপ ‘কঠিন দল’ হয়ে গেছে বহু বছর আগেই। এই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে তারপরও বড় কিছুর আশা শুধু অতি আবেগপ্রবণ সমর্থকেরাই করতে পারেন। কিংবা তাঁরাও হয়তো সাহস করছেন না তেমন কিছুর আশা করার!
তবু একটা করে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আসে আর এ দেশের ফুটবলপ্রেমীরা আশায় বুক বাঁধেন। এবার হয়তো দলটা আশা করার ‘সাহস’টা অন্তত ফিরিয়ে দেবে। গত কয়েক বছরে প্রতিপক্ষের পরীক্ষা নেওয়া কিছু স্মৃতি ঘুরেফিরে আসে মনের মধ্যে।
২০১৯ সালে কলকাতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ৬৭ হাজার দর্শকের সামনে ভারতকে প্রায় হারিয়ে দেওয়া কিংবা মালয়েশিয়ায় গত বছর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে দারুণ লড়াই। ২০২১ সালে কাতারে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সেই ম্যাচ কিংবা শেষ সাফে ভারতের বিপক্ষে ১০ জন নিয়ে সেই লড়াই।
এসব পারফরম্যান্স এবার বেঙ্গালুরুতে একসঙ্গে করতে পারলে হয়তো ফিরবে এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের স্বপ্ন দেখার সেই সাহসও।