কাতার বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা যেমন আছে, তেমনি আছে বিতর্কও, যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকেই। গত বছর গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়, কাতারে বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম, মেট্রোরেল, রাস্তা ও হোটেল নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সাড়ে ছয় হাজার শ্রমিক মারা গেছেন।
এ ছাড়া নারীদের অধিকার ও সমলিঙ্গের সম্পর্কের বিষয়ে কাতারের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন অনেক দিনের। কাতার বিশ্বকাপের প্রতিটি স্টেডিয়ামেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যার প্রভাব পড়তে পারে জলবায়ু পরিবর্তনেও। এসব অভিযোগে কারণে কাতারে বিশ্বকাপ হওয়ায় অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন। বিশ্বকাপ দোরগোড়ায় এলেও সেই আন্দোলন এখনো চলছে।
বুন্দেসলিগায় গত অক্টোবরে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও স্টুটগার্টের মধ্যকার ম্যাচে বড় প্ল্যাকার্ড হাতে হাজার হাজার দর্শক কাতার বিশ্বকাপকে বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘বয়কট কাতার ২০২২’। এই ক্যাম্পেইনের উদ্যোক্তা স্টেভান শিমার—তিনি নিজে খেলেন জার্মানির একটি অপেশাদার লিগে।
শিমারের দাবি, বিশ্বকাপের আগে আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে এই আন্দোলন। বিশ্বকাপ বন্ধ করার স্বপ্ন এখন আর না দেখলেও শিমার ও অন্যরা নিজেদের মতো করে বয়কট করছেন কাতার বিশ্বকাপ, ‘আমরা কাতার বিশ্বকাপের কোনো খেলাই দেখব না। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল চলার সময় আমরা আমরা বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করছি। আমরা চাই বিভিন্ন পানশালা ও ক্লাবও বিনোদনের জন্য ভিন্ন কিছু আয়োজন করুক।’
এরই মধ্যে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক সাবেক তারকা ফুটবলারও। তাঁদের একজন ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মানির অধিনায়ক ফিলিপ লাম। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কাতারে না যাওয়ার কারণ জানিয়েছেন এই ফুটবলার, ‘একজন অফিশিয়াল প্রতিনিধি কিংবা একজন ভক্ত হিসেবেও আমি কাতারে যাচ্ছি না। যে দেশকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেই দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনা করা উচিত।’
কাতার বিশ্বকাপ শুধু যে ফুটবল সম্প্রদায়ের প্রতিবাদের মুখে পড়েছে, তা নয়, গত অক্টোবরে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যানসি ফাইসির কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রতিবাদ জানান। এমনকি দোহায় থাকা জার্মান রাষ্ট্রদূতের কাছেও লিখিত অভিযোগও দেয় তারা। রাজনৈতিক এই চাপ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে কাতার। চলতি মাসে ন্যানসি ফাইসির কাতার সফর করেন। সেখানে সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেয় কাতার সরকার। সে আশ্বাসে অবশ্য জার্মান সরকারের মন অনেকটাই গলেছে।
কয়েক দিন আগেই ফিফা মাঠের বাইরের বিতর্ক ভুলে সবাইকে ফুটবলে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। এমনকি ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান ফিফার সুরেই কথা বলেছেন। তাতে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে চাইলেও পারছে না কাতার। কারণ, এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট জানিয়ে দিয়েছেন, ফিফার কথায় তাঁরা চুপ থাকবেন না। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন। তাই কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে বিতর্ক সহজেই যে থামছে না, তা বলতেই হচ্ছে। এখন মাঠের খেলায় বিতর্কটা এড়াতে পারলেই হয়!