পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল পাড়ি দেওয়া তাঁর নেশা। সুযোগ পেলেই চলে যান প্রকৃতির কাছে। কখনো পাহাড়-পর্বতে, কখনো বনে-জঙ্গলে। সান্তিয়াগো সানচেজকে এ নেশা এতটাই পেয়ে বসেছিল, স্পেন থেকে হেঁটেই রওনা দিয়েছিলেন কাতারে! উদ্দেশ্য? ফিফা বিশ্বকাপ মাঠে বসে দেখা।
কিন্তু পথিমধ্যে বেধেছে বিপত্তি। ভিসা না থাকায় সান্তিয়াগো সানচেজকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে ইরানের প্রশাসন। ইরানের একটি টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, কুর্দিস্তান প্রদেশের সীমান্তবর্তী শহর সাকেজে ২ অক্টোবর আটক করা হয় স্পেনের নাগরিক সান্তিয়াগোকে। তাঁর সঙ্গে একজন অনুবাদক ছিলেন। এরপর দুজনকে নেওয়া হয় রাজধানী তেহরানের একটি কারাগারে। এখন সেখানেই আছেন তাঁরা।
বছরের শুরুতে সান্তিয়াগোর কাতারযাত্রার খবর স্পেনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। রিয়াল মাদ্রিদের এই পাঁড় ভক্তকে সবাই শুভকামনা জানান। ৬ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাপথে সব সময় সর্বশেষ অবস্থানের তথ্য তিনি জানাতেন ইনস্টাগ্রামে। বেশ কয়েকটি ভিডিও ও ছবি আপলোড করেছেন। শেষ বার্তায় লিখেছেন, ‘এখানে (ইরানে) গরম একটু বেশি। তবে ঠিক আছি।’
২ অক্টোবর ইরানের সীমান্তবর্তী প্রদেশ কুর্দিস্তানে পৌঁছান ৪১ বছর বয়সী সান্তিয়াগো। পরিবারের সঙ্গে সেদিনই শেষবার যোগাযোগ হয় তাঁর। এর পর থেকেই নিখোঁজ। কোনোভাবেই সান্তিয়াগোর সন্ধান না মেলায় ১৭ অক্টোবর নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেন তাঁর মা-বাবা। এগিয়ে আসেন তেহরানে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত। তাঁর হস্তক্ষেপেই খোঁজ মেলে সান্তিয়াগোর।
সান্তিয়াগোর মা সেলিয়া কোগেদোর বলেন, ‘প্রথম কয়েক দিন আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম না। কিন্তু ৮-৯ দিন পর আমার মেয়ে ও তার কাছের বন্ধুরাও যখন খোঁজ দিতে পারল না, তখন নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’
সান্তিয়াগোর বন্ধু মিগুয়েল মনে করেন, ইরানে চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভের জেরে তাঁর বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ওকে আটকে রাখতে চাইবে। ওরা (ইরান সরকার) চায় না, ভেতরকার খবর বাইরের মানুষ জানুক।’
সান্তিয়াগো চেয়েছিলেন, ইরানে পৌঁছে তেহরানভিত্তিক কোনো টিভি চ্যানেলে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে সাক্ষাৎকার দেবেন। এরপর বন্দর আব্বাসে গিয়ে নৌকায় পারস্য উপসাগর পাড়ি দিয়ে কাতারে প্রবেশ করবেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর দুঃসাহসিক যাত্রার সফল সমাপ্তি ঘটত।
কাতার বিশ্বকাপ শুরু ২০ নভেম্বর। এর আগে বন্দী দশা থেকে মুক্তি মিলবে তো সান্তিয়াগোর?