কলম্বিয়ার অধিনায়ক হামেস রদ্রিগেজ (বাঁয়ে) ও ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন
কলম্বিয়ার অধিনায়ক হামেস রদ্রিগেজ (বাঁয়ে) ও ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন

কেইন–রদ্রিগেজ: এত কাছে তবু এত দূর

সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না। কারও কারও সঙ্গে তো যেন সৌভাগ্য আড়ি কেটে বসে থাকে। হ্যারি কেইনের কথাই বলা যাক। ইংল্যান্ড অধিনায়কের ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলির ওজন কম নয়, গোলের পর গোল করে বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট থেকে শুরু করে কত পুরস্কারই না জিতেছেন। কিন্তু ফুটবল তো ব্যক্তিগত খেলা নয়, এখানে দলীয় অর্জনই সবার ওপরে। আর সেই দলীয় অর্জনের খাতাতেই কেইনের নামের পাশে কিছু নেই, একদমই আনকোরা সেই পাতা।

কেইন ক্লাব ফুটবলে বেশির ভাগ সময়েই খেলেছেন টটেনহামে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি সর্বশেষ কী জিতেছে, সেটি তো গবেষণার বিষয় হয়ে গেছে। গত মৌসুমে টটেনহাম ছেড়ে জার্মান পরাশক্তি বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিলেন কেইন। বায়ার্নের ছোঁয়ায় কোথায় কেইনের ভাগ্য পাল্টাবে তা নয়, উল্টো কেইনের ছোঁয়াতেই যেন পাল্টে গেল বায়ার্নের ভাগ্য। পুরো মৌসুমেই কিছুই জিততে পারল না সর্বশেষ ১১ মৌসুমেই বুন্দেসলিগার চ্যাম্পিয়নরা।

কিছু একটা জয়ের সুযোগ জাতীয় দলের হয়েও হারিয়েছেন কেইন। ২০২০ ইউরোর পর ২০২৪ ইউরোতেও রানার্সআপ ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো কেইনের ইংল্যান্ডকে। ২০২১ সালে ফাইনালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হারা ইংল্যান্ড পরশু রাতে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে হারল স্পেনের কাছে। ক্লাব ফুটবলে বায়ার্নের হয়ে ভবিষ্যতে কিছু জয়ের সম্ভাবনা এখনো আছে। তবে জাতীয় দলে হয়ে কেইনের ক্যারিয়ারটা সম্ভবত ‘এত কাছে তবু এত দূরে’ অনুভূতি নিয়েই শেষ করতে হচ্ছে।

এবারও রানার্সআপের পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে হলো হ্যারি কেইনকে

পরশু ফাইনালে হারের পর ৩০ বছর বয়সী কেইনের বুক চিরে যেন বেরিয়ে এল সেই দীর্ঘশ্বাস, ‘দলের জন্য আরেকটি কঠিন মুহূর্ত এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও। শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবেও অনেক কঠিন একটি টুর্নামেন্ট গেছে। এত কাছে এসেও জিততে না পারা! এখন আমরা (মানসিকভাবে) তলানিতে আছি। আমরা ট্রফি জেতার পথ বের করতে পারিনি। এটা লম্বা সময় ধরে যন্ত্রণা দেবে।’

৬০ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠের বাইরে চলে যাওয়া কেইন পরে কথা বলেছেন আইটিভির সঙ্গে। সেখানে নিজের যন্ত্রণার কথা শুনিয়েছেন আবারও, ‘আমরা ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে এসেছিলাম, কিন্তু সেই ভিত্তিটাকে শক্ত করতে পারিনি। পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এবার পরের ধাপে যেতে পারলাম না, জিততে পারলাম না।’

দল জিততে না পারলেও একেবারে খালি হাতে ফিরছেন না কেইন। ৩ গোল করে আরও পাঁচজনের সঙ্গে যে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট জিতেছেন।

কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হাতে কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজ

কেইনরা যখন দেশের হয়ে আরেকটি ফাইনাল হারের যন্ত্রণায় পুড়েছেন, আটলান্টিকের ওপারে মায়ামিতে কয়েক ঘণ্টা পর একই যন্ত্রণা ভোগ করেছেন আরেকজন—হামেস রদ্রিগেজ। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ নিয়েই কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল নিতে মঞ্চে উঠেছিলেন কলম্বিয়ান তারকা। কেইনের মতো তাঁরও যে জাতীয় দলের হয়ে কিছুই না জিতে ক্যারিয়ার শেষ করার শঙ্কা! ২৩ বছর পর কোপার ফাইনালে ওঠা রদ্রিগেজের কলম্বিয়ার টানা ২৮ ম্যাচের অজেয় ধারাকে থামিয়েই যে কোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

বয়স হয়ে গেছে ৩৩, কলম্বিয়াও তো আর হররোজ ফাইনালে ওঠে না। কাজেই মোটামুটি ধরেই নেওয়া যায় যে দেশের হয়ে রদ্রিগেজের কিছু জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। সেটি বুঝেই কিনা ম্যাচের পর কিছু শোনা যায়নি রদ্রিগেজের কাছ থেকে। অবশ্য ওই নীরবতাই আবার বুঝিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছু।

তবে এখনো শিরোপাহীন কেইনের চেয়ে দুঃখবোধটা একটু কম হওয়ার কথা রদ্রিগেজের। চ্যাম্পিয়ন হতে কেমন লাগে সেটি তো তাঁর অজানা নয়। দেশের হয়ে কিছু না জিততে পারলেও ক্লাব ফুটবলে তো জিতেছেন কত কিছুই। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা রদ্রিগেজ লিগ শিরোপাও কম জেতেননি।