দুই দলের অধিনায়ককে ডেকে রেফারিকে দিয়ে টস করান ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া দিলান (কালো স্যুট)
দুই দলের অধিনায়ককে ডেকে রেফারিকে দিয়ে টস করান ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া দিলান (কালো স্যুট)

যাঁর জন্য কমলাপুরে টস–কাণ্ড, কে এই ম্যাচ কমিশনার জয়াসুরিয়া

ভুল মানুষের হতেই পারে। তাই বলে এমন ভুল! টাইব্রেকার থামিয়ে টসে বিজয়ী দল নির্ধারণ! বিস্ময়কর এ কাণ্ড ঘটিয়ে এখন আলোচনায় শ্রীলঙ্কার ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া দিলান।

গতকাল কমলাপুর স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের ফাইনালে জয়াসুরিয়ার টস-কাণ্ড গোটা ফুটবল বিশ্বেই বিরল। ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত দুই দলই টাইব্রেকারে ১১টি করে শট নিয়ে সব কটিতেই গোল করেছে। টাইব্রেকারে ১১-১১ সমতার পর ম্যাচ কমিশনার দুই দলের অধিনায়ককে ডেকে টস করতে বলেন নেপালি রেফারিকে। রেফারি টস করেন। টসে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ বেঁকে বসে। কারণ, টসের কথা বাইলজে নেই। এ নিয়ে আড়াই ঘণ্টার অচলাবস্থা কাটিয়ে শেষমেশ রাত প্রায় ১১টার দিকে দুই দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে হলো ম্যাচ কমিশনারের ভুল? বাইলজে আছে, গ্রুপ পর্যায়ে পয়েন্ট, হেড টু হেড, গোল—সবই সমান হয়ে গেলে শেষ আশ্রয় ‘টস অব কয়েন’। কিন্তু টাইব্রেকার টস করার নিয়ম নেই। তবে কোনোভাবে যদি টাইব্রেকার নেওয়া না যায়, যেমন দর্শক মাঠে ঢুকে গেলেন, প্রাকৃতিক কোনো সংকট হলো, সে ক্ষেত্রে জয়ী দল বাছতে শেষ উপায় টস। কিন্তু টাইব্রেকার নেওয়া যাবে না, এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি গতকালের ফাইনালে।

তাহলে জয়াসুরিয়া কেন এ সিদ্ধান্ত নিলেন? কী ছিল তাঁর মাথায়? জানতে চাইলে সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে জানি না। বলতে পারব না, কী ছিল তাঁর মাথায়। তবে আমি যেটা মনে করি, ১১টা করে গোল সমান হওয়া মানুষের জীবনে একবার ঘটে কি না সন্দেহ। অপ্রত্যাশিত একটা পরিস্থিতি হওয়ায় ম্যাচ কমিশনার হয়তো কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।’

মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব–১৯ ফাইনালের ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া দিলান (বাঁয়ে)

এ পরিস্থিতে আরেকটু সময় নিতে পারতেন তিনি। বাইলজ দেখতে পারতেন।এএফসিকে ফোন করতে পারতেন। কিন্তু ১১টি শটে এসে কেন থামতে হলো? আনোয়ারুল হক বলেন, ‘একটা দলের ১১ জনই শট নিয়ে ফেললে আবার নতুনভাবে লিস্ট করে মারবে দুই দল। এটা চলতেই থাকবে। এটাই নিয়ম। রেফারি তো ১২তম শটটা নিতে গিয়েছিল। কারণ, সে জানত। কিন্তু ভুলটা করেছে ম্যাচ কমিশনার। যাহোক, এটা আসলে একটা ভুল।’

এমন অভিনব ভুল করা কে এই ৫০-ঊর্ধ্ব জয়াসুরিয়া? জানা গেছে, তিনি ফিফা-এএফসির সিনিয়র ম্যাচ কমিশনার। এএফসির পুরস্কারও পেয়েছেন। কোচিং লাইসেন্স করিয়ে ফুটবলে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন আর কোচিংয়ে নেই। অতীতে সুনামের সঙ্গে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন জানিয়ে আনোয়ারুল হক বলেছেন, ‘ম্যাচ কমিশনার হিসেবে তিনি আমার চেয়ে সিনিয়র। আমার ধারণা, ১৭-১৮ বছর ধরে এ কাজ করেন। তাঁকে চিনি, জানি। অতীত রেকর্ড ভালো। আমি নিজেও ১৪ বছর ছিলাম ম্যাচ কমিশনার। ৬৫ পেরিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের গত বছর অবসরে পাঠায় এএফসি। তাতে আমিও আছি।’

তিনি (ম্যাচ কমিশনার) বললেন, “আমার আশপাশে বসা সবাই বলছিল...এরপর এটা হবে, ওটা হবে। টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি না হলে টস। আমি ওটাই ভেবে নিচে নেমে টস করতে বলি।” তিনি আসলে নিয়ম পড়েননি। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, আমার জন্যই এ ঘটনা হয়েছে।
আনোয়ারুল হক, সাধারণ সম্পাদক, সাফ

এ ম্যাচের জন্য জয়াসুরিয়াকে ম্যাচ কমিশনার নিয়োগ দেয় সাফ। সাফ সাধারণত নিরপেক্ষ কাউকে নিতে চায়। তবে সাফের একটা সিদ্ধান্ত আছে, ম্যাচ কমিশনার সাফ অঞ্চল থেকেই নিতে হবে। সাফ থেকে নিতে হলে সাফ তাদেরই নেয়, যাঁরা এএফসির ম্যাচ কমিশনার।

দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। ট্রফি নিচ্ছেন ভারত ও বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা

কিন্তু ম্যাচ কমিশনার পর্যাপ্ত নেই এ অঞ্চলে। আনোয়ারুল হক এ সমস্যা বড় করে দেখেন, ‘সাফের টুর্নামেন্টে ম্যাচ কমিশনার নিয়োগ দিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা, সব দেশে ম্যাচ কমিশনার নেই। বাংলাদেশে যেমন আমি অবসর নেওয়ার পর আর কেউ নেই। নেপাল, পাকিস্তানেও ম্যাচ কমিশনার নেই। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কায় দুজন করে। ভুটানে একজন। ভারতে ৪-৫ জন। ফলে দরকারের সময় ম্যাচ কমিশনার পাওয়া যায় না। নিরপেক্ষ দেশের ম্যাচ কমিশনার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও নিরপেক্ষ মনে করে শ্রীলঙ্কার এই ম্যাচ কমিশনারকে ফাইনালটা দেওয়া হয়। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে কে জানত!’

উল্লেখ্য, এই টুর্নামেন্টে আরেকজন ম্যাচ কমিশনার ছিলেন, তিনি ভারতের। আর রেফারি অ্যাসেসর (পারফরম্যান্স মূল্যায়ন) বাংলাদেশের তৈয়ব হাসান।

জয়াসুরিয়া তাঁর অমন কাণ্ডের পর সাফের কাছে কী বলেছেন, জানতে চাইলে আনোয়ারুল হক বলেন, ‘তিনি বললেন, “আমার আশপাশে বসা সবাই বলছিল...এরপর এটা হবে, ওটা হবে। টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি না হলে টস। আমি ওটাই ভেবে নিচে নেমে টস করতে বলি।” তিনি আসলে নিয়ম পড়েননি। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, আমার জন্যই এ ঘটনা হয়েছে।’