জুরিখে অবস্থিত ফিফা সদরদপ্তর
জুরিখে অবস্থিত ফিফা সদরদপ্তর

রাশিয়াকে সামরিক সহায়তার অভিযোগে ইরানকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি

ইরানকে কাতার বিশ্বকাপে খেলতে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনের অন্যতম সেরা ক্লাব শাখতার দোনেৎস্ক। ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনে ইরানের সামরিক সহায়তা রয়েছে বলে দাবি করা হয় ক্লাবটির পক্ষ থেকে। ক্লাবটির শীর্ষ এক কর্মকর্তার দাবি, কিয়েভে হামলায় ইরানের ড্রোন–সহায়তা পেয়েছে রাশিয়া।

শাখতারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সের্হেই পালকিন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘ইরানের নেতারা যখন বিশ্বকাপে নিজেদের জাতীয় দলের খেলা দেখে মজা পাবে, তখন ইরানের ড্রোন এবং মিসাইলে ইউক্রেনিয়ানদের হত্যা করা হবে। সবকিছুই (ড্রোন) ইরানের তৈরি করা এবং ইরানই এগুলো সরবরাহ করেছে। ইরানের সামরিক বাহিনী এই ড্রোন চালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, যা ঘর, জাদুঘর, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, খেলার মাঠ ধ্বংসের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা ইউক্রেনিয়ানদের হত্যা করছে।’

নিজের এই ফেসবুক পোস্টে পালকিন আরও লিখেছেন, ‘ফিফা এবং আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি শাখতার আহবান জানাচ্ছে, ইউক্রেনিয়ানদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে বিশ্বকাপ থেকে ইরান জাতীয় ফুটবল দলকে নিষিদ্ধ করা হোক।’

তেহরানে অবস্থিত ইরান ফুটবল ফেডারেশন

কাতার বিশ্বকাপে ইরানকে নিষিদ্ধ করে তাঁদের জায়গায় ইউক্রেনকে খেলানোর দাবি জানান পালকিন। তাঁর যুক্তি, বিশ্বকাপে ‘খেলার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে’ ইউক্রেন, যেহেতু ‘প্লে–অফে অন্য দেশের জাতীয় দলগুলোর মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না ইউক্রেন। তবু হৃদয় নিংড়ে খেলেছে।’ গত জুনে কার্ডিফে বিশ্বকাপ ফুটবল প্লে–অফ ম্যাচে ওয়েলসের কাছে ১–০ গোলের হারে কাতারে যাওয়ার টিকিট পায়নি ইউক্রেন।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিশ্বকাপের নিয়ম অনুযায়ী একটি দেশের বদলে আরেকটি দেশকে খেলানোর সুযোগ আছে ফিফার। কিন্তু সেজন্য অংশ নেওয়া দেশটিকে নাম প্রত্যাহার করতে হবে বিশ্বকাপ থেকে। আর এশিয়ান কোনো দলকে নিষিদ্ধ করে ইউরোপের কোনো দলকে বিশ্বকাপে খেলানোর অতীত নজিরও নেই ফিফার। এদিকে পালকিনের যুক্তি, ইরানের জায়গায় ইউক্রেনকে বিশ্বকাপে খেলালে ‘সেটি ঐতিহাসিক এবং খেলাধুলার দৃষ্টিকোণ থেকে সুবিচার।’ তবে পালকিনের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেন ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের অবকাঠামো ও সাধারণ মানুষের রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ আছে হোয়াইট হাউসের কাছে। ইউক্রেনের ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রধান কাইরেলো বুদানভ সোমবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ইরানের তৈরি ৩৩০টি ‘শহীদ’ ড্রোন ব্যবহার করেছে রাশিয়া এবং আরও অর্ডার দেওয়া হয়েছে।

ইরান জাতীয় ফুটবল দল

২০ নভেম্বর থেকে শুরু হবে কাতার বিশ্বকাপ। পরের দিন ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ইরান। ‘বি’ গ্রুপে ইরানের বাকি দুই প্রতিপক্ষ ওয়েলস ও যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক দিন আগে বিশ্বকাপ থেকে ইরানকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ফিফাকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠান ইরানের ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। স্পেনের আইনজীবী ফার্ম রুইজ-হুয়ের্তা অ্যান্ড ক্রেসপোর মাধ্যমে এই চিঠি পেয়েছে ফিফা। বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের কিছু ফুটবলার এবং অন্য অ্যাথলেটরা তাঁদের দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ করেছেন ফিফার কাছে।

হিজাব নীতি না মানায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসা আমিনি নামের এক তরুণী দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে নিহত হন। এর পর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ইরানে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ মানুষ মারা গেছেন।

প্রতিবাদে ইরানকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ করা হয় ফিফার কাছে। চিঠিতে দাবি করা হয়, ফুটবলে সরকারি হস্তক্ষেপ ফিফার নিয়মের বিরোধী। ইরানে নারীদের স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাই ‘নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই ফিফার।’