দারুণ খেলে হ্যাটট্রিক করেন মেসি
দারুণ খেলে হ্যাটট্রিক করেন মেসি

মেসির হ্যাটট্রিকে বলিভিয়ার জালে ৬ গোল আর্জেন্টিনার

লাওতারো মার্তিনেজের গোলের পর উপচে পড়ছিল করতালি। মার্তিনেজের সম্ভবত মনে হয়েছিল, এই করতালি শুধু তাঁর জন্য হলে বড্ড ভুল হবে। আঙুল তুলে পাশেই দাঁড়ানো হাস্যোজ্জ্বল লিওনেল মেসিকে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন বারবার। যেন গোলটা মেসিরই। মার্তিনেজ শুধু আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন!

তেমনটি বললে একদম ভুলও হয় না। শুধু ওই গোলে অবদান কেন, বুয়েনস এইরেসের মনুমেন্তালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ৬–০ গোলে জয়ের নায়কও যে মেসি। নিজে করেছেন হ্যাটট্রিক, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন আরও দুটি।

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় জয়ের এই ম্যাচে আসলে ৫ গোলে অবদান মেসির। দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি হ্যাটট্রিকের গৌরবও এখন ৩৭ বছর বয়সী এই কিংবদন্তির। এই মহাদেশের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে সর্বশেষ কোনো খেলোয়াড় হ্যাটট্রিকের সঙ্গে ২টি গোল করিয়েছিলেন ১৫ বছর আগে। ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল এই আর্জেন্টিনার বিপক্ষেই হ্যাটট্রিকের সঙ্গে ২টি গোল করিয়েছিলেন হোয়াকিন বোতেরো। কোন দলের খেলোয়াড়? এই বলিভিয়ারই!

সে যা হোক, মনুমেন্তালে আর্জেন্টিনার ‘সিক্স স্টার’ ম্যাচে ফেরা যাক। গ্যালারির বেশির ভাগ দর্শকের আনন্দে ভেসে যাওয়ার শুরুটাও কিন্তু হয়েছে মেসির কল্যাণে। ১৯ মিনিটে মার্তিনেজের পাস পেয়ে কোনোকুনি দৌড়ে বলিভিয়া গোলকিপার গিয়ের্মো ভিসকারাকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। গোল করতে ভুল করেননি। আর্জেন্টিনা এরপর প্রথমার্ধে আরও দুটি গোল পেয়েছে। সেখানেও উৎস সেই ৩৭ বছর বয়সী কিংবদন্তি।

মার্তিনেজ গোলের পর আঙুল তুলে মেসিকে দেখান, যেন গোলটি মেসিরই!

৪৩ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে বল পায়ে টান দিয়ে বলিভিয়া রক্ষণকে বেকায়দায় ফেলেন মেসি। তাঁর বাড়ানো পাসে বলিভিয়ার গোলকিপার ভিসকারা এবং পোস্টের মাঝখানে প্রচুর ফাঁকা জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন মার্তিনেজ। ডান পায়ের টোকায় বল জালে পাঠানোর আনুষ্ঠানিকতাটুকুই শুধু সেরেছেন ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার। তবে নিজের জায়গা থেকে মার্তিনেজের পজিশন থেকে যে গোল করাটা বেশি সহজ, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন মেসি। প্রথমার্ধে মেসির এমন বুদ্ধির ঝিলিক দেখা গেল আরও একবার এবং সেবারও গোল!

এবার গোলদাতা হুলিয়ান আলভারেজ। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে মাঝমাঠে ফ্রি কিক পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বলিভিয়ার ডিফেন্ডাররা একটু ওপরে উঠে গিয়েছিলেন। সুযোগ বুঝে আলভারেজ দৌড় শুরু করতেই দূরপাল্লার শট নেন মেসি। বলটি বক্সের বাঁ দিকে আলভারেজের একদম সামনে রসগোল্লার মতো পড়তেই ডান পায়ের শটে গোল করেন আতলেতিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকার।

বিরতির পর হয়েছে আরও তিন গোল। ৬৯ মিনিটে নাহুয়েল মলিনার পাস থেকে চতুর্থ গোলটি থিয়াগো আলমাদার। তখনো সম্ভবত অনেকেই ভাবেননি এই ম্যাচ থেকে মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে নিজের ১০ম হ্যাটট্রিক তুলে নেবেন। গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকায় পাওয়া চোট কাটিয়ে ওঠার পর আর্জেন্টিনার হয়ে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন মেসি। এখনো পুরোপুরি ছন্দে ফেরেননি। কিন্তু মনুমেন্তালের মেসিকে দেখে কে বলবে, এই লোকের বয়স ৩৭ বছর!

জয়ের পর সমর্থকদের অভিনন্দনের জবাবে আর্জেন্টিনা দল

রদ্রিগো দি পলের বদলি হয়ে নামা এজেকুয়েল পালাসিওস ৮৪ মিনিটে পাস বাড়িয়েছিলেন মেসি। ড্রিবলিং করে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পাশের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান ইন্টার মায়ামি তারকা। দুই মিনিট পরই ম্যাচের শেষ গোলটি করেন মেসি। এবার বার্সেলোনার সেই সোনালি দিনগুলোর মতো ডান দিক দিয়ে কাট ইন করে ঢুকে নিকো পাজের সঙ্গে ওয়াল–পাস খেলেন এবং তারপর বাঁ পায়ের সেই শট ও গোল। ‘ভিনটেজ’ মেসি!

১০ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্ব টেবিলে শীর্ষে আর্জেন্টিনা। সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় কলম্বিয়া। ১০ ম্যাচ খেলা উরুগুয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়। মন্টিভিডিওতে ইকুয়েডরের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে উরুগুয়ে। চিলিকে ৪–০ গোলে হারিয়েছে কলম্বিয়া। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ২–১ গোলে জিতেছে প্যারাগুয়ে।