বাংলাদেশ–ফিলিস্তিন ম্যাচের একটি মুহূর্ত। আজ কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে
বাংলাদেশ–ফিলিস্তিন ম্যাচের একটি মুহূর্ত। আজ কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে

বিশ্বকাপ বাছাই

খেই হারিয়ে ফিলিস্তিনের কাছে ৫ গোল হজম বাংলাদেশের

বাংলাদেশ ০ : ৫ ফিলিস্তিন

গ্যালারির দিকে তাকিয়ে মনেই হচ্ছিল না বাংলাদেশ ম্যাচটা খেলছে বিদেশের মাটিতে। কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়াম যেন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের কোনো ভেন্যু। প্রবাসী বাংলাদেশিরা আসেন দলে দলে।

তবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যাদের হোম এই স্টেডিয়াম, সেই ফিলিস্তিনের সমর্থকও ছিল চোখে পড়ার মতো। যেখানে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য অনেক প্লে কার্ড নিয়ে আসেন সমর্থকেরা। সেই সঙ্গে তাঁরা এসেছিলেন ফিলিস্তিনের জয় দেখতেও।

হতাশ হতে হয়নি ফিলিস্তিন সমর্থকদের। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁদের দল তুলে নিয়েছে ৫-০ গোলের বিশাল এক জয়।

এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিলিস্তিন এত বড় ব্যবধানে কখনো জেতেনি। আগের ৬ লড়াইয়ে প্রথমটিই শুধু ড্র হয়েছিল। পরের সব ম্যাচেই হার বাংলাদেশের। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে কখনো এক ম্যাচে দুই গোলের বেশি করতে পারেনি ফিলিস্তিন।

আজ কিছুক্ষণ আগে শেষ হওয়া দুদলের লড়াইটা হয়ে থাকলে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ ভাবতেই পারেনি এভাবে পাঁচ গোলের বড় হারের জ্বালা নিয়ে কুয়েত থেকে ফিরতে হবে দেশে।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে ২ গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ

তবে এই ম্যাচের প্রথম ৪০ মিনিট বাংলাদেশ লড়েছে বেশ ভালোই। তৈরি করেছে গোলের সুযোগও। ফয়সাল আহমেদের ক্রসে রাকিব জায়গা মতো থাকলে গোল হতে পারতো। ফয়সালের কাটব্যাকে সোহেল রানা ছিলেন ফাঁকায়। কিন্তু পোস্টে শট নেওয়ার জন্য সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও সোহেল অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মারেন।

উল্টো প্রথমার্ধের শেষ মিনিট পাঁচেক ম্যাচের ছবিটা পাল্টে দিয়েছে ফিলিস্তিন। রক্ষণের ভুলে এই সময় হাভিয়ের কাবরোর দল খেয়ে বসে দুটি গোল। বিরতির পর ৪৮ মিনিটে হয়েছে আরেকটি গোল। মিনিট দশেকের মধ্যে তিন–তিনটি গোল হজম । ৫২ মিনিটে ৪ নম্বর গোল। এই সময় বাংলাদেশ দল ভেঙে পড়ে হুড়মুড় করে। শেষ দিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ওদে দাবাঘ। বাকি দুই গোল শিহাব কুমবরের।

হ্যাটট্রিক করা দাবাঘই ফিলিস্তিনের এই দলটির একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি ইউরোপীয় ক্লাবে খেলেন। ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বর্তমানে খেলছেন বেলজিয়ামের শীর্ষ লিগের ক্লাব রয়্যাল শার্লেরোয়ায়।

গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এএফসি এশিয়ান কাপে দারুণ ফুটবল খেলে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিন দলটা উঠে যায় শেষ ষোলোয়, যেখানে তারা স্বাগতিক কাতারের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও হেরেছে ২-১ গোলে। এশিয়ান কাপে ইতিহাস গড়া ফিলিস্তিনকে নিয়ে তাই বাড়তি সতর্ক ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও ৬ ফুটের বেশি লম্বা ফিলিস্তিনিদের কাছে শেষ পর্যন্ত করতে হয়েছে অসহায় আত্মসমর্পণ।

ফিলিস্তিন দল শুরু থেকেই বাংলাদেশের রক্ষণ ভাঙতে চেয়েছে। সফলও হয়েছে তারা। প্রথম কুড়ি মিনিটই হতে পারত একাধিক গোল। ওদে দাবাঘ ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থেকে বল জালে ঠেলতে পারেননি। বল গেছে বারের ওপর দিয়ে। ইসলাম বাতরান একইভাবে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠাতে পারেননি। তাঁর প্লেসিংও গেছে বার উঁচিয়ে।

ফিলিস্তিনি ফরোয়ার্ড ওদে দাবাঘ হ্যাটট্রিক করেছেন

বিরতির আগে আর ভুল নয়, প্রথম গোলটি করেন ওদে দাবাঘ। বাঁ দিক থেকে বক্সে আসা ক্রসে প্লেসিং করেন। পরপরই কর্নার থেকে শিহাব কুমবরের টোকায় ২-০। দুটি গোলেই বাংলাদেশের রক্ষণ থাকল অপ্রস্তুত।

তৃতীয় গোলও কুমবরের। বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের ফাঁক গলে প্লেসিং করেন। চতুর্থ গোলটা করেন দাবাঘ। চার গোলের পর হেসেখেলে বাকি সময়টা পার করেছে ফিলিস্তিন। তিনজন ডিফেন্ডারকে এ সময় তুলে নেন কোচ। হয়তো ২৬ মার্চ ঢাকায় দুদলের ফিরতি ম্যাচের জন্য বিশ্রাম দিয়েছেন তাঁদের।

দুই দলের শক্তির ব্যবধান অনেক। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ফিলিস্তিন ৯৭, বাংলাদেশ ১৮৩। ফলে এই হারে অবাক হওয়া কিছু নেই। তবে সৌদি আরবে ক্যাম্প করেও ফলপ্রসু কিছু হওয়ায় বাংলাদেশের হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ম্যাচ যখন নাগালের বাইরে, কোচ কাবরেরা সুমন রেজা, রবিউল হাসান, চন্দন রায়দের মাঠে নামান। শেষের জনের আজ অভিষেক হয়েছে। কিন্তু বদলি কেউই দলকে সান্ত্বনাসূচক গোল এনে দিতে পারেননি।

অনেক আশা নিয়ে জামাল–তপুদের খেলা দেখতে যাওয়া কুয়েত প্রবাসীদের ফিরতে হয়েছে একরাশ হতাশা নিয়ে

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় হার। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-০ গোলে হারের পর লেবাননের সঙ্গে ১-১ ড্র। ফিলিস্তিন দল লেবাননের সঙ্গে ড্র এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারের পর বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে পেল ৩ পয়েন্ট, সেটাও কী দারুণভাবে!

বাংলাদেশের শুরুর একাদশ

মিতুল মারমা, তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, ঈসা ফয়সাল, সাদ উদ্দিন, মোহাম্মদ হৃদয় , জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, মজিবর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ও রাকিব হোসেন।

বদলি নেমেছেন: সুমন রেজা, রবিউল হাসান, চন্দন রায়, শাকিল হোসেন ও জায়েদ আহমেদ।