এ মাসের শুরুর দিকে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন রোনালদিনিওর ছেলে জোয়াও মেন্ডেস। গতকাল রাতে ফ্রান্সের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়েছে লিলিয়ান থুরামের ছেলে খেফরেনের।
দুটি ঘটনায় স্পষ্ট, বিখ্যাত ফুটবলার বাবার সন্তানেরা শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে পা রাখতে শুরু করেছেন।
একুশ শতকে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত ফুটবলার–বাবাদের এমন সম্ভাবনাময় সন্তান আরও অনেকেই আছেন। বিশ্বজুড়ে লাখো কিশোর–তরুণ যেমন রোনালদিনিও, থুরামদের অনুপ্রেরণা নিয়ে ফুটবল খেলেন, তাঁদের সন্তানেরও তেমনি।
একুশ শতকে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত ফুটবলার–বাবাদের এমনই সাত সন্তানের খবর জানুন আজ—
ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদিনিওর ছেলে জোয়াও মেন্ডেস এখন বার্সেলোনার যুব দলে খেলেন। ব্রাজিলের ক্লাব ক্রুজেইরোতে খেলা জোয়াও মধ্যে এক বছর ক্লাবহীন ছিলেন। এ বছর বাবার পুরোনো ঠিকানায় এসে ট্রায়াল দিয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৮ বছর বয়সী জোয়াও স্ট্রাইকার। বাবা রোনালদিনিওর মতো হতে পারবেন কি না, সময় বলে দেবে।
তবে ছেলেকে বার্সেলোনায় দেখে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা। ছেলের সঙ্গে বার্সার চুক্তির পর রোনালদিনিওর কথায় যা স্পষ্ট ছিল, ‘বার্সেলোনা আমার জীবনের অংশ। যেখানেই যাই, এই নাম আমার সঙ্গেই থাকে। এখন আমার ছেলের কারণে বার্সেলোনা আমার কাছে আরও বেশি বর্তমান হয়ে থাকবে।’
রোনালদিনিওর ছেলেকে নিয়ে বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা বলেন, ‘বার্সা ইতিহাসের অন্যতম সেরা রোনালদিনিও। তাঁর ছেলে হিসেবে জোয়াওয়ের ওপর চাপ থাকবে। এর মধ্যে তাঁকে ভালো খেলোয়াড়ে পরিণত করার দায়িত্বটা কোচদের।’
এতিয়েন ইতো সাবেক বার্সেলোনা ও ইন্টার ফরোয়ার্ড স্যামুয়েল ইতোর ছেলে। ২০২২ সালে স্যামুয়েল যখন স্প্যানিশ ক্লাব মায়োর্কায় খেলতেন, সেখানেই জন্ম এতিয়েনের। বর্তমানে ২০ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মায়োর্কাভিত্তিক ইউডি–পাবলোনসে খেলেন। ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব–২০ অ্যাফকন টুর্নামেন্টে দারুণ এক ফ্রি কিক করে আলোচনায় এসেছিলেন এতিয়েন।
ক্যামেরুনিয়ান এই তরুণ নিজের ক্যারিয়ারে বাবার ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, ‘আমার জীবনে বাবার প্রভাব বিশাল। সব সময় তাঁকে আমি অনুসরণ করেছি, তাঁর কাছ থেকে শিখতে চেয়েছি। জানি, বাবার চেয়ে ভালো করা কঠিন। কিন্তু সেই চেষ্টাই আমি করে যাব।’
আইভরিকোস্ট কিংবদন্তি দিদিয়ের দ্রগবার ছেলে আইজ্যাক দ্রগবা। বাবার ক্যারিয়ার সূত্রে জন্ম ফ্রান্সের গুইনগ্যাম্পে, ২০০২ সালে। বেড়ে ওঠা ইংলিশ ক্লাব চেলসির পরিবেশে। আইজ্যাকের ফুটবলে হাতেখড়িও চেলসির যুব একাডেমিতে।
তবে শুরুতে যতটা সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, এখন ততটাই মিইয়ে গেছেন আইজ্যাক। এখন আছেন ইতালির সিরি ডির ক্লাব কারাতেসে। যদিও অনুশীলনে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় এই ক্লাবের সঙ্গেও সংযুক্ত নেই। তবে বয়স খুব বেশি নয় এখনো তাঁকে নিয়ে আশায় আছেন দিদিয়ের দ্রগবা।
ফুটবলে জিনেদিন জিদানের ছেলের খবর নতুন কিছু নয়। জিদানের বড় ছেলে এনজো জিদান একসময় রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে ছিলেন। ২০১৬ সালে সিনিয়র দলে ঢুকে কোপা দেল রেতে এক ম্যাচে বদলিও খেলেন। ২৭ বছর বয়সী এনজো এখন স্পেনের তৃতীয় স্তরের দল ফুয়েনলাব্রাদায় খেলেন। জিদানের দ্বিতীয় ছেলে লুকা গোলরক্ষক হিসেবে খেলে স্পেনের দ্বিতীয় স্তরের দল এইবারে।
জিদানের সন্তানদের মধ্যে সম্ভাবনাময়ী হিসেবে দেখা হচ্ছে তৃতীয় ছেলে থিও জিদানকে। ফ্রান্সের অনূর্ধ্ব–২০ দলে ডাক পাওয়া থিও এখন রিয়ালের যুব দলে আছেন। জিদানের চতুর্থ ছেলে ১৭ বছর বয়সী এলইয়াজও আছে রিয়ালের নজরে। গত বছর ফ্রান্সের হয়ে অনূর্ধ্ব–১৭ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে এলইয়াজ।
সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরের পালা শুরু হয়ে গেছে খেফরেন থুরামের। ২১ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গতকাল রাতে ফ্রান্স–নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পা রেখেছেন। ফরাসি কিংবদন্তি লিলিয়ান থুরামের ছেলে খেফরেন ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ স্তরেও নিয়মিত হয়ে উঠেছেন।
এবারের ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে নিয়মিত খেলছেন নিসের হয়ে এরই মধ্যে মোনাকোর বিপক্ষে ম্যাচে গোল ও গোলে–সহায়তাও করেছেন। খেফরেনের বড় ভাই মার্কাস থুরামও ফ্রান্স জাতীয় দলে খেলেন।
লিভারপুল কিংবদন্তি জেমি ক্যারাঘারের ছেলে জেমস ক্যারাঘার। ২০০২ সালে জন্ম নেওয়া এই সেন্টার–ব্যাক অনূর্ধ্ব–৮ পর্যায়ে বাবার ক্লাব লিভারপুলে খেলেছেন। পরবর্তী সময়ে যোগ দেন উইগান অ্যাথলেটিকের একাডেমিতে। বর্তমান ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরে খেলে উইগান অ্যাথলেটিক, তবে জেমস ক্যারাঘার ধারে আছেন পঞ্চম স্তরের দল ওল্ডহাম অ্যাথলেটিকে।
আর্জেন্টাইন কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর ছেলে মরিসিও জুনিয়র। ২০০১ সালে তাঁর বাবা যখন স্প্যানিশ ক্লাব এসপানিওলে খেলতেন, তখন বার্সেলোনায় জন্ম মরিসিও জুনিয়রের। এরপর বাবার সঙ্গেই তাঁর জীবন কেটেছে সাউদাম্পটন, টটেনহামে। উইঙ্গার হিসেবে খেলা মরিসিও গত মৌসুমে হরনেটসের হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলেছেন। বর্তমানে স্পেনের তৃতীয় স্তরের দল জিমনাস্টিক ডি তারাগোনায় আছেন।