২০১৭ সালে নেইমারকে পিএসজির কাছে বিক্রি করে লাভের রেকর্ড গড়েছে বার্সেলোনা
২০১৭ সালে নেইমারকে পিএসজির কাছে বিক্রি করে লাভের রেকর্ড গড়েছে বার্সেলোনা

এক খেলোয়াড় বিক্রি করেই এত লাভ

নিজেদের একাডেমিতে খেলোয়াড় তৈরি করো আর বড় তারকা হওয়ার আগেই চড়া দামে বিক্রি করে দাও—এই মন্ত্রে অটল থেকে লম্বা সময় ধরে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে অর্থ জোগাড় আর খেলোয়াড় বিক্রির মাধ্যমে দাপট দেখাচ্ছে কিছু ক্লাব। সেই ক্লাবগুলোর ক্যাবিনেট হয়তো ট্রফিতে ভরপুর নয়। কিন্তু টাকার হিসাবে এই কৌশলে রীতিমতো রাজত্ব করছে তারা।

এমন দুটি ক্লাব হচ্ছে বেনফিকা ও পোর্তো। পর্তুগালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাবের গত ৯ মৌসুমে খেলোয়াড় বিক্রি থেকে সম্মিলিত আয় প্রায় ১৪০ কোটি ইউরো। আর নির্দিষ্ট এক মৌসুমের হিসাব করলে এ তালিকায় সবার ওপরে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি এ মাসেই মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে বিক্রি করেছে ৬ ফুটবলার। অ্যাকাউন্টে জমা করেছে ২২ কোটি ৫৪ লাখ ইউরো। দ্য অ্যাথলেটিকের একটি প্রতিবেদন বলছে, খেলোয়াড় বিক্রি করে আয়ে গত এক দশকে ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে চেলসিই শীর্ষে।

কিন্তু যদি প্রশ্ন হয়, একজন খেলোয়াড় বিক্রি করে লাভের রেকর্ড কোন ক্লাবের? তাহলে একটু ভাবতে হতে পারে। অনেকের মাথায় চটজলদি বেনফিকা, পোর্তো, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, আর্সেনালের নাম আসতে পারে। কারণ, চড়া দামে খেলোয়াড় বিক্রির গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতি আছে ক্লাবগুলোর।

দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বার্সা থেকে পিএসজিতে আসেন নেইমার

নেইমার (ব্রাজিল)

সান্তোস বার্সেলোনা : ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো
বার্সেলোনাপিএসজি : ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো
বার্সেলোনার লাভ 💶 ১৩ কোটি ৪০ লাখ ইউরো

তবে তাদের কেউ নয়। শুধু একজন খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভের রেকর্ডটা বার্সেলোনার। বার্সার নাম আসতেই খেলোয়াড়ের নামটাও নিশ্চয় এখন বুঝে নিয়েছেন—নেইমার।

ব্রাজিলের তারকা ফরোয়ার্ডকে ২০১৩ সালে বার্সার কাছে বিক্রি করেছিল সান্তোস। দলবদলের প্রকৃত চুক্তিমূল্য ওই সময় গোপন রাখা হলেও পরে জানা যায়, ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরোয় কাতালান ক্লাবে গেছেন নেইমার।

বার্সায় লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজকে নিয়ে ভয়ংকর আক্রমণভাগ (‘এমএসএন’ নামে পরিচিত) গড়ে তোলা নেইমার ক্লাবটির হয়ে জেতেন চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ৮টি শিরোপা। কিন্তু মেসি ছায়া থেকে বেরোতে ২০১৭ সালে সদিচ্ছায় বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে বছর পিএসজির কাছে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোয় নেইমারকে বিক্রি করে বার্সা; যা এখন পর্যন্ত দলবদল ইতিহাসের বিশ্ব রেকর্ড। তাঁকে কেনা থেকে বিক্রি পর্যন্ত বার্সা যে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ইউরো লাভ করেছে, সেটাও সর্বোচ্চ।

২০১৮ সালে লিভারপুল ছেড়ে বার্সায় নাম লিখিয়েছিলেন কুতিনিও

ফিলিপে কুতিনিও (ব্রাজিল)

ইন্টার মিলান লিভারপুল : ১ কোটি ৩০ লাখ ইউরো
লিভারপুল বার্সেলোনা : ১৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
লিভারপুলের লাভ 💶 ১২ কোটি ২০ লাখ ইউরো

এক খেলোয়াড় বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি লাভের তালিকায় বার্সেলোনার পরেই আছে লিভারপুল। যাঁকে বিক্রি করেছিল ইংলিশ ক্লাবটি, তিনিও একজন ব্রাজিলিয়ান—ফিলিপে কুতিনিও। খেলোয়াড়দের মধ্যে এই তালিকায় নেইমার, কুতিনিও ছাড়া শীর্ষ ছয়ের তিনজনই ফরাসি—পল পগবা, উসমান দেম্বেলে ও আঁতোয়ান গ্রিজমান। এ তালিকার অন্যজন জুড বেলিংহাম, যাঁকে কিছু দিন আগেই বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।

২০১৩ সালে ইন্টার মিলান থেকে লিভারপুলে যোগ দেন কুতিনিও। তাঁকে ১ কোটি ৩০ লাখ ইউরোয় কিনেছিল অলরেডরা। তবে দুর্দান্ত ছন্দে থাকলেও ইংলিশ ক্লাবটির হয়ে কোনো শিরোপা জিততে পারেননি। মূলত চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালে বার্সায় যান এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তাঁকে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় বিক্রি করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ কোটি ২০ লাখ ইউরো পকেটে পুরে লিভারপুল।

তবে বার্সার খেলার ধরনের সঙ্গে কোনোভাবেই মানিয়ে নিতে পারেননি কুতিনিও। মাঝখানে চোটও তাঁর ছন্দে ছেদ ফেলেছে। ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কুতিনিওর। তবে বার্সার হয়ে নয়; ধারে বায়ার্ন মিউনিখে খেলতে গিয়ে। এরপর কুতিনিওকে বেশি দিন রাখেনি বার্সা। বিক্রি করে দেয় অ্যাস্টন ভিলার কাছে।

২০১৬ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরেছিলেন পল পগবা

পল পগবা (ফ্রান্স)

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জুভেন্টাস : মুক্ত খেলোয়াড়
জুভেন্টাস ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড : ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
জুভেন্টাসের লাভ 💶 ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরো

দুই ব্রাজিলিয়ান নেইমার–কুতিনিওর পর বিশ্বকাপজয়ী ফরাসিদের দাপট। তালিকার তিনে আছেন জুভেন্টাস মিডফিল্ডার পগবা, পাঁচে বার্সা উইঙ্গার দেম্বেলে ও ছয়ে আথলেতিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড গ্রিজমান।

২০১২ সালের পগবার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবায়ন করেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মুক্ত খেলোয়াড় (ফ্রি এজেন্ট) হিসেবে তিনি যান জুভেন্টাসে। ওল্ড ট্রাফোর্ড ছাড়ার পর দ্রুতই পগবার অভাব বোধ করতে থাকে ইউনাইটেড। জুভেন্টাসও সুযোগটা দুই হাতে লুফে নেয়। রেড ডেভিলদের মতো ‘বোকামি’ করেনি তুরিনের বুড়িরা। তাই চুক্তির মেয়াদ থাকতেই পগবাকে ইউনাইটেডে ফেরার সুযোগ করে দেয় জুভেন্টাস। বিনিময়ে ইতালিয়ান ক্লাবটি পায় ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। বিনা মূল্যে কোনো খেলোয়াড় কিনে চড়া দামে বিক্রির রেকর্ড এটাই।

পরিচয়পর্ব অনুষ্ঠানে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে জুড বেলিংহাম

জুড বেলিংহাম (ইংল্যান্ড)

বার্মিংহাম সিটি বরুসিয়া ডর্টমুন্ড : ৩ কোটি ২ লাখ ইউরো
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড রিয়াল মাদ্রিদ : ১৩ কোটি ৩৯ লাখ ইউরো
বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের লাভ 💶 ১০ কোটি ৩৭ লাখ ইউরো

সম্প্রতি জুড বেলিংহামকে চড়া দামে বিক্রি করে বেশি লাভের তালিকার ওপরের দিকে জায়গা করে নেয় বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। ইংলিশ মিডফিল্ডারকে ১৩ কোটি ৩৯ লাখ ইউরোয় রিয়ালকে দিয়ে দিয়েছে জার্মান ক্লাবটি। লাভ করেছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ইউরো। এডেন হ্যাজার্ডের পর বেলিংহামই রিয়ালের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ফুটবলার।

ইংলিশ ফুটবলারদের মধ্যেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড়ের তালিকায় উঠেছে এসেছেন বেলিংহাম। এখানে তাঁর সামনে ১১ কোটি ৭৪ লাখ ইউরোয় ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়া জ্যাক গ্রিলিশ।

উসমান দেম্বেলে (বার্সেলোনা)

রেনেবরুসিয়া ডর্টমুন্ড : ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
বরুসিয়া ডর্টমুন্ডবার্সেলোনা : ১৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের লাভ 💶 ১০ কোটি ইউরো

দেম্বেলেকে রেনের কাছ থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় কিনেছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। মাত্র এক মৌসুম পরই বার্সার কাছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় বিক্রি করে দেয় জার্মান ক্লাবটি। লাভ করে ১০ কোটি ইউরো। তবে চোটের কারণে লম্বা সময় মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে দেম্বেলেকে। বার্সা তাঁর পূর্ণাঙ্গ সেবা বলতে গেলে পায়ইনি।

বার্সায় সুবিধা করতে না পেরে আতলেতিকো মাদ্রিদে ফিরেছেন আঁতোয়ান গ্রিজমান

আঁতোয়ান গ্রিজমান (ফ্রান্স)

রিয়াল সোসিয়েদাদ আতলেতিকো মাদ্রিদ : ৩ কোটি ইউরো
আতলেতিকো মাদ্রিদ বার্সেলোনা : ১২ কোটি ইউরো
আতলেতিকো মাদ্রিদের লাভ 💶 ৯ কোটি ইউরো

কুতিনিওর মতো গ্রিজমানেরও আক্ষেপ হয়ে ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ। কুতিনিওর মতো বার্সায় গিয়ে মানিয়ে নিতে পারেননি তিনিও। আতলেতিকোর হয়ে ২০১৬ খুব কাছে গিয়েও ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় সেবার।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন আর আতলেতিকোয় থাকবেন না। ২০১৯ সালে যান যোগ দেন বার্সায়। তাঁকে বিক্রি করে আতলেতিকো লাভ করে ৯ কোটি ইউরো। সেই গ্রিজমান দুই বছর যেতে না যেতেই ফেরেন আতলেতিকোয়।