মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র দ্বিতীয় বিভাগেও খেলবে না
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র দ্বিতীয় বিভাগেও খেলবে না

দ্বিতীয় স্তরেও নেই মুক্তিযোদ্ধা, ইতিহাসের অবসানই কি হতে চলেছে

গত ১৫ জুলাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের ফুটবল ইতিহাসে এক কালো দিন। সেদিন চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হেরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে দলটি অবনমিত হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, দলটির পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলার কথা। সেই লিগে খেলতে নিজেদের সম্মতির কথা জানানোর শেষ দিন ছিল আজ। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলার সম্মতিপত্র দেয়নি বাফুফেকে।

মুক্তিযোদ্ধার ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তিনি ক্লাবের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।

মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব সভাপতি পদে আছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসকও তিনি। আরিফুল বলেন, ‘ক্লাব সভাপতিকে ফোন করেছি। তিনি বলেছেন, দল গড়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর বাইরে তিনি আর কিছু বলেননি। চেষ্টা করেও পারলাম না আমরা ঘরোয়া ফুটবলে থাকতে। এটা দুঃখজনক।’ এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেননি মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের সভাপতি।

পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরে দল গড়তে খুব বেশি টাকা লাগে না। দেড় কোটি টাকা হলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গড়া যায় জানিয়ে আরিফুলের আক্ষেপ, ‘ক্লাব অর্ধেক আর্থিক সমর্থন দিলেও আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম। সেটাও হয়নি। আমরা ভীষণ হতাশ। কিছু খেলোয়াড়কে বলেও রেখেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধায় খেলতে হবে, দলটাকে তুলে আনতে হবে। ওরা রাজিও ছিল। কিন্তু ক্লাব দল না গড়লে কী আর করা!’

প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমনের পর মুক্তিযোদ্ধা নানা অবিচারের শিকার হয়েছে জানিয়ে বাফুফেকে চিঠি দিয়েছিলেন আরিফুল। চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, অনিয়মের সুরাহা না হলে দ্বিতীয় স্তরে খেলবে না মুক্তিযোদ্ধা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে আরিফুল চেষ্টা করেছেন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের জন্য দল গড়তে। শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি।

ফর্টিস একাডেমি নামের দলটিও এবারের চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলবে না। গতবার তারা অষ্টম হয়েছে লিগে। মুক্তিযোদ্ধাও খেলছে না। ফলে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে দল হচ্ছে আটটি।

সত্তর দশকে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবলে এসেছে আশির দশকের শুরুর দিকে। সেই থেকে নিয়মিত দেশের শীর্ষ লিগেই খেলে এসেছে তারা। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের ফুটবল পেশাদার যুগে প্রবেশের পর সব কটি লিগই খেলেছে মুক্তিযোদ্ধা। পেশাদার লিগ জিততে না পারলেও জিতেছে ঢাকা লিগ ও ফেডারেশন কাপ। খেলেছে এএফসি কাপেও। ১৯৯৪ সালে আবাহনী-মোহামেডান ভেঙে বড় দল গড়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। হয়ে উঠেছিল ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি। কিন্তু সেসবই আজ অতীত। মুক্তিযোদ্ধার বর্তমান শুধুই ধূসর।

২০২১ সালের আগস্টে ব্রাদার্স ইউনিয়ন প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়ে পরের মৌসুমে দ্বিতীয় স্তরে খেলেনি। এক মৌসুম পর দ্বিতীয় স্তরে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবার প্রিমিয়ারে ফিরে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা পরের বছরই যে দ্বিতীয় স্তরে খেলবে, আপাতত সেই লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। ফলে ক্লাবটির দীর্ঘ ইতিহাসের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে কি না, এমন কৌতূহল অনেকেরই।