কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন পেপ গার্দিওলা
কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন পেপ গার্দিওলা

সিটির ‘রিসেট বাটন’ চাপতে হবে গার্দিওলাকে

‘তুমি কাল সকালেই বরখাস্ত হবে।’

ডাগআউটে থাকা পেপ গার্দিওলার দিকে তাকিয়ে গান ধরেছিলেন ব্রাইটনের সমর্থকেরা। এমেক্স স্টেডিয়ামে ব্রাইটন-ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচটা তখন একেবারে শেষের দিকে। সিটি ২-১ গোলে পিছিয়ে। অতিথি হয়ে যাওয়া সিটি সমর্থকেরা শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য কিছুর আশায়। সেই অবিশ্বাস্য কিছু হয়নি অবশ্য। ২-১ গোলেই সিটি হারল ম্যাচটা। প্রিমিয়ার লিগে টানা দ্বিতীয় হার, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা চতুর্থ!

অন্য কোনো কোচ দলের এ অবস্থায় পরের দিন সকালে বরখাস্ত হয়ে গেলে অস্বাভাবিক কিছু হতো না। পেপ গার্দিওলা কি সত্যি বরখাস্ত হবেন বা হওয়ার পথে? টানা চার হার গার্দিওলার জন্য এটা একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। তাঁর ১৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারেই প্রথম।

সিটির জন্যও বিরল অভিজ্ঞতা আসলে। এর আগে সর্বশেষ তারা টানা চার ম্যাচ হেরেছিল ২০০৬ সালে, স্টুয়ার্ট পিয়ার্স তখন দলের কোচ। সেটা খুব অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। প্রিমিয়ার লিগে তখনো স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন আর ইউনাইটেড-রাজ চলছে। সিটি ১৪-১৫ নম্বরে থাকত, মাঝেমধ্যে লড়তে হতো অবনমন থেকে বাঁচতেও।

তার বছর দুয়েক পরে আবুধাবি গ্রুপ সিটির মালিকানা নিল, সিটির দিনবদলের শুরু হলো, তারপর এলেন গার্দিওলা। সিটি সাত বছরে ছয়টা প্রিমিয়ার লিগ জিতল; চ্যাম্পিয়নস লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, উয়েফা সুপার কাপ সব জিতে সর্বজয়ী হলো। এখন এই সিটির টানা চারটি ম্যাচ হারা আসলেই বিস্ময়কর ঘটনা। কোচ ছাঁটাই হওয়ার মতোই ঘটনা। কিন্তু কোচের নাম যে গার্দিওলা!

ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচে এভাবেই হতাশায় মুখ ঢাকতে দেখা গেছে গার্দিওলাকে

এই মৌসুমেই সিটির সঙ্গে স্প্যানিশ এই কোচের চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। সত্যিটা হচ্ছে, সেই চুক্তি নবায়ন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সিটি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সিটির খেলোয়াড়েরা বলছেন, তাঁরা মনেপ্রাণে চান গার্দিওলা যেন থাকেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, গার্দিওলাকে চুক্তি নবায়নের জন্য রাজি করাতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন ক্লাবের চেয়ারম্যান খালদুন আল মোবারক, যার সঙ্গে ইতিহাদে এই ৯ বছরে থাকাকালে গার্দিওলার ভালো বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। এই চারটা হারের পর কি আসলে খালদুন মোবারক গার্দিওলাকে রাখার চিন্তা করতে গিয়ে নতুন করে ভাববেন?

এই মৌসুমেই সিটির সঙ্গে স্প্যানিশ এই কোচের চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। সত্যিটা হচ্ছে, সেই চুক্তি নবায়ন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সিটি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে সিটির ভেতরের খবর যেটুকু এসেছে, তাতে আসলে সে রকম কিছুর আভাস নেই। বরং সিটি এটাকে দেখছে গার্দিওলাকে রেখে দেওয়ার একটা বড় সুযোগ হিসেবে।

সেটা কী রকম? ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে গার্দিওলার কথাগুলো শুনুন তাহলে, ‘সবকিছুরই (টানা চার হার) প্রথম আছে। এটা আমার চ্যালেঞ্জ, আমি এই চ্যালেঞ্জ নিতে চাই। আমি হাল ছেড়ে দেব না। মোটেও না। দলটাকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তৈরি করতে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আমি মরিয়া। আমি ওদের আগের জায়গায় ফেরত নিয়ে যেতে চাই। শীর্ষ পর্যায়ে।’

তার মানে এই হার আসলে গার্দিওলার মধ্যে একটা জেদ জাগিয়ে তুলেছে। যে দলটাকে তিনি এই ৯ বছরে সর্বজয়ী বানিয়েছেন, বানিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব, সেই দলটাকে যেনতেন অবস্থায় রেখে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে যেতে চান না। এখন তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ‘রিসেট বাটন’ চেপে সিটিকে আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া।

সিটির জন্য সম্ভবত এটাই এই টানা চার হারের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। যে গার্দিওলাকে ধরে রাখার জন্য তারা বেশ কিছুদিন ধরে নানা রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেই গার্দিওলা এখন নিজেই এভাবে দলকে রেখে যেতে চান না। সিটি তো এটাই চায়।
আর এই টানা চার হারের পরও তো সিটির অবস্থা প্রিমিয়ার লিগ বা চ্যাম্পিয়নস লিগ কোথাও খুব খারাপ নয়। প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচ পরে লিভারপুলের চেয়ে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়। মৌসুমের ঢের বাকি। এর চেয়েও পেছনে থেকে এসে সিটি লিগ জিতেছে, এই উদাহরণ খুব বেশি দিনের পুরোনো নয়।

ম্যান সিটির অসাধারণ সব অর্জন গার্দিওলার

মনে রাখতে হবে, সিটি এই সময়ে খেলছে চোটে একেবারেই নড়বড়ে হয়ে যাওয়া একটা স্কোয়াড নিয়ে। বিশ্বসেরা মিডফিল্ডার রদ্রি নেই, বাকি মৌসুমেও তাঁকে পাওয়া যাবে না। জ্যাক গ্রিলিশ চোটে, জেরেমি ডকু, নাথান একে চোটে থেকে ফিরে এসে আবার চোটে। কেভিন ডি ব্রুইনা নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন, কাইল ওয়াকার নিজেই বলেছেন, তিনি ৯০ মিনিট খেলার জন্য তৈরি নন। ইলকায় গুন্দোয়ানকে বার্সেলোনা থেকে আবার ফিরে আসার পর আর আগের গুন্দোয়ান মনে হচ্ছে না।

এসবের মধ্যেও চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩৬ দলের প্রথম পর্বে ৪টা করে ম্যাচ শেষে গার্দিওলার দল ১০ নম্বরে। আরও ৪টা করে ম্যাচ বাকি সব দলের। সেরা ৮ দল সরাসরি যাবে শেষ ১৬-তে, ৯ থেকে ১৬ নম্বর দল যাবে প্লে-অফ খেলে। এখানেও সিটি খুব বিপদে আছে বলা যাবে না। ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদই তো এখন ১৮ নম্বরে, ১৭ নম্বরে বায়ার্ন মিউনিখ!

গার্দিওলার জন্য স্বস্তির খবর, আন্তর্জাতিক ফুটবলের সূচির জন্য আপাতত সপ্তাহ দুয়েকের বিরতি পাচ্ছেন তিনি। নভেম্বরে শেষ সপ্তাহে আবার যখন ইউরোপের ক্লাব ফুটবল মাঠে গড়াবে, তত দিনে হয়তো স্কোয়াডের বেশ কয়েকজনকে পুরো ফিট অবস্থায় পাবেন সিটি কোচ।

‘রিসেট বাটন’ চাপার কাজটা এই সময়ের মধ্যেই করতে হবে গার্দিওলাকে।