বাফুফের উদ্যোগ সফল হলে এ বছরেরই কোনো এক সময়ে বাংলাদেশে খেলতে আসতে পারে মেসির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দল।
একসময় যা ছিল স্বপ্ন, সেটাই বাস্তব হয়েছিল ১১ বছর আগে। ঢাকার মাঠে খেলে গেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ফুটবল দল। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মেসির দল ফিফা প্রীতি ম্যাচে খেলেছিল নাইজেরিয়ার বিপক্ষে।
আর্জেন্টাইন মহাতারকাকে ঢাকায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আবারও। সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় মেসি আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আবেগে ভেসেছে বাংলাদেশ, যার খবর মেসির দেশেও পৌঁছে গেছে। সেই উন্মাদনা মাথায় রেখেই মেসিকে ১১ বছর পর আবার ঢাকায় আনতে চাইছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
নিজেদের এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে বাফুফে। ৫ জানুয়ারি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া বরাবর পাঠানো চিঠিতে আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তাপিয়াকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাফুফে সভাপতি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী আছে। বিশ্বকাপের সময় আমরা সেটা দেখেছি। তাই আমরা ২০২৩ সালে সুবিধাজনক সময়ে মেসিসহ আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলকে বাংলাদেশে এনে একটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করতে চাই।’
প্রীতি ম্যাচের নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা না হলেও চিঠিতে বলা হয়েছে, আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ নিয়ে বাফুফে কাজ করছে। প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের মতো কোনো দল হলেই ভালো মনে করে বাফুফে। এর আগে ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা দলের বাংলাদেশে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দলের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তা ছাড়া আর্জেন্টিনা–নাইজেরিয়ার পর ঢাকায় ফুটবল খেলে গেছে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও।
২০১১ সালে আর্জেন্টিনা–নাইজেরিয়া ম্যাচ আয়োজনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করেছিল বাফুফে। উদ্দেশ্য ছিল মেসি–উন্মাদনা কাজে লাগিয়ে দেশের ফুটবলে ইতিবাচক সাড়া ফেলা। তাতে বাফুফে কতটা সামনে এগোতে পেরেছে, তা অবশ্য প্রশ্নসাপেক্ষ।
আর্জেন্টিনা দলকে বাংলাদেশে আনা মানে আরেকবার বিশাল অঙ্কের ধাক্কা। অবশ্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আশা, অর্থ এবারও কোনো সমস্যা হবে না। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর্জেন্টিনাকে এ বছরই আমরা ঢাকায় আনতে খুব আগ্রহী। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। টাকার ব্যাপারে সম্ভাব্য পৃষ্ঠপোষকের কাছ থেকে আশ্বস্ত হয়েছি। আমাকে সবুজ সংকেত দিয়ে মাঠে নামতে বলা হয়েছে।’ বাফুফে সভাপতি বলেছেন, মেসিসহ আর্জেন্টিনাকে শেষ পর্যস্ত আনা সম্ভব না হলে মেসির ক্লাব পিএসজিকে আনার চেষ্টা করা হবে। ‘মোট কথা মেসিকে আনতে চাই। সেভাবেই পরিকল্পনা এগোচ্ছে’—বলেছেন সালাউদ্দিন।
এর আগে কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দলের জনপ্রিয়তা দেখে ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা মেসিকে বাংলাদেশে আনার ইচ্ছার কথা জানান। আর্জেন্টিনা, উরুগুয়েসহ ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক দূতের বাড়তি দায়িত্বে থাকা সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বলেছিলেন, ‘আমরা মেসিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। বাংলাদেশে একটি ম্যাচ আয়োজন করতে চাই।’ এ ছাড়া বিশ্বকাপের পরপরই বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য আর্জেন্টিনা সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম অবশ্য বলেছেন, আর্জেন্টিনা দলকে বাংলাদেশে আনতে বাফুফের নতুন উদ্যোগের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক নেই, ‘ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। বাফুফের উদ্যোগের সঙ্গে সেসবের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা একান্তই বাফুফের নিজস্ব কর্মসূচি। আমরা আর্জেন্টিনা দলের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করি, সামনে এ বিষয়ে আরও অগ্রগতির খবর দিতে পারব।’
কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। জবাবে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দেন বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার উদ্যোগ নেওয়ার।