সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফা জাদুঘরে রাখা ছেলে ও মেয়েদের বিশ্বকাপ ট্রফি
সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফা জাদুঘরে রাখা ছেলে ও মেয়েদের বিশ্বকাপ ট্রফি

ফিফার উদ্যোগ: মেয়েদের বিশ্বকাপ ট্রফিও হবে ছেলেদের মতো

আগামী ১৭ মে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ফিফার ৭৪তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ছেলে ও মেয়েদের বিশ্বকাপ ট্রফি একই রকম করার প্রস্তাব পেশ করবে ফিফা। আকার, ওজন, উপাদান, মূল্য—সব মানদণ্ডেই ট্রফিতে সমতা আনতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে ছেলেদের বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। পরের বছর মেয়েদের বিশ্বকাপ। মেয়েদের বিশ্ব আসরের স্বাগতিক দেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফিফার চাওয়া, এই দুই বিশ্বকাপ থেকেই ছেলে ও মেয়েদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে একই ধরনের ট্রফি দেওয়ার প্রচলন শুরু করা। মূলত লিঙ্গবৈষম্য দূর করতেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে চাইছে ফিফা।

২০২২ সালে কাতারে ছেলেদের এবং গত বছর অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ডে মেয়েদের সর্বশেষ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছেলেদের ২২টি ও মেয়েদের ৯টি বিশ্বকাপ আসর হয়ে গেলেও সব মানদণ্ডেই ট্রফিগুলো ছিল আলাদা।

ছেলেদের বর্তমান বিশ্বকাপ ট্রফির কারিগর সিলভিও গাজ্জানিগা

১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ছেলেদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে দেওয়া হতো জুলে রিমে ট্রফি। ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফিটি স্থায়ীভাবে নিজেদের করে নেয়। এর পর থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হাতে বর্তমান নকশার ট্রফিটি দেওয়া হচ্ছে।

কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা যে ট্রফি নিয়ে উৎসব করেছে, সেটার বয়স ৫০ বছর পেরিয়েছে। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ থেকে নতুন ট্রফি দেওয়ার জন্য নকশা আহ্বান করে ফিফা। ৭ দেশের ৫৩ জন নকশাকার নকশা জমা দেন। চূড়ান্ত করা হয় বিখ্যাত ইতালিয়ান ভাস্কর সিলভিও গাজ্জানিগার নকশা

গাজ্জানিগার বানানো ট্রফিটা ক্রীড়াজগতের ইতিহাসে এখনো সবচেয়ে ব্যয়বহুল; ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি ট্রফিটার বর্তমান দাম ২ কোটি মার্কিন ডলার (২১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। এর উচ্চতা ৩৬.৫ সেন্টিমিটার (১৪.৪ ইঞ্চি), ওজন ৬.১৭ কেজি।

ছেলেদের ফুটবলে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। মেসির হাতের এই বিশ্বকাপ ট্রফির বয়স ৫০ বছর পেরিয়েছে

তবে মেয়েদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল যে ট্রফি পেয়ে থাকে, সেটা রুপার তৈরি; যার ওপর ২৩ ক্যারেট সাদা ও হলুদ সোনার প্রলেপ দেওয়া থাকে। এর উচ্চতা ৪৭ সেন্টিমিটার (১৮.৫০ ইঞ্চি), ওজন ৪.৬ কেজি। দামে ছেলেদের ট্রফির ধারেকাছেও নেই—মাত্র ৩৭ হাজার ৪০০ ডলার (৪১ লাখ টাকার কিছু বেশি)। মেয়েদের প্রথম বিশ্বকাপ হয় ১৯৯১ সালে। সে বছরই এই ট্রফি বানান লেবাননের ভাস্কর সাওয়াইয়া।

ফিফার চাওয়া, পরবর্তী বিশ্বকাপ থেকেই ছেলে–মেয়ে দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকেই একই ধরনের ট্রফি দেওয়া। সেই সঙ্গে অর্থ পুরস্কারেও (প্রাইজ মানি) সমতা নিয়ে আসা।

কাতারে ছেলেদের সর্বশেষ বিশ্বকাপে রেকর্ড ৪৪ কোটি ডলার (৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা) অর্থ পুরস্কার দিয়েছে ফিফা। চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার (৪৩৩ কোটি টাকা)। অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ডে মেয়েদের সর্বশেষ বিশ্বকাপেও রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পুরস্কার দিয়েছে ফিফা। সব মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ডলার (১ হাজার ২০৭ কোটি টাকা)। আর চ্যাম্পিয়ন স্পেন পেয়েছে ৪২ লাখ ৯০ হাজার ডলার (৪৭ কোটি টাকা)। অর্থাৎ মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বিশ্বকাপে অর্থ পুরস্কার ৪ গুণ বেশি, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ক্ষেত্রে সেটা ৯ গুণেরও বেশি!

মেয়েদের বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো

তবে ফিফার সমতা নীতিতে বাধা হতে পারে টিভি স্বত্ব। ছেলেদের বিশ্বকাপে যে পরিমাণ টিভি দর্শক হয়, মেয়েদের টুর্নামেন্টে তা হয় না। তাই মেয়েদের বিশ্বকাপ থেকে ফিফার আয়ও অনেক কম হয়। যদিও মেয়েদের সর্বশেষ বিশ্বকাপে টিভি দর্শক ও মাঠে দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড হয়েছে। এরপরও বিশাল ব্যবধান রয়েই গেছে।

মেয়েদের বিশ্বকাপের টিভি স্বত্ব থেকে পর্যাপ্ত আয় না হওয়ার জন্য সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুষেছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তাঁর দাবি, সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলো আকর্ষণীয় অফার না দেওয়ায় প্রত্যাশামাফিক আয় হচ্ছে না। তিনি এ নিয়ে প্রকাশ্যে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সমালোচনাও করেছেন।