চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। তবে এই ম্যাচে অন্য রকম ফলও পেতে পারত আর্জেন্টিনা, যদি এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ত্রাতা হয়ে না দাঁড়াতেন! ৭২ মিনিটে চিলির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রিগো এচেভেরিয়ার জোরাল শট ডাইভ দিয়ে ঠেকিয়েছেন। তিন মিনিট পর সেই এচেভেরিয়াই বক্সের মাথা থেকে আরেকটি শট নেন।
কিন্তু ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে দাঁড়ান মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনার জার্সিতে মার্তিনেজ তো এমনই। ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে একদম শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সের কোলো মুয়ানির শটে সেই অবিশ্বাস্য সেভ নিশ্চয়ই মনে আছে! মার্তিনেজ তার পর থেকে আরও বেশি করে আর্জেন্টাইনদের নয়নের মণি।
কিন্তু প্রতিপক্ষের জন্য? অনেকেই বলবেন, মোটেই সুবিধার নয়। এমনিতেই পোস্টের নিচে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান, এ ছাড়া আচার-আচরণে লোকটি যেন বিরক্তির একশেষ! আর্জেন্টিনার জার্সির সম্মানের জন্য প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে মার্তিনেজের মাঝেমধ্যেই লেগে যায়। প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকেরাও যেন এক কাঠি সরেস। মার্তিনেজকে পেলেই খোঁচাতে ছাড়েন না। মেটলাইফ স্টেডিয়ামে আজ তেমন এক দৃশ্যই ক্যামেরায় ধরা পড়ল।
আর্জেন্টিনার গোলপোস্টের পেছনেই বসেছিলেন চিলির এক দল সমর্থক। ৮৮ মিনিটে লাওতারো মার্তিনেজের গোলের পর সেটি উদ্যাপন করতে গিয়ে চিলির সমর্থকদের পিত্তি জ্বালিয়ে দিয়েছেন ‘দিবু’ মার্তিনেজ। গোলের পর দৌড়ে আর্জেন্টিনার পোস্টের পাশে বিজ্ঞাপন বোর্ডের ওপর দাঁড়িয়ে চিলির সমর্থকদের প্রতি ইঙ্গিত করে উল্লাস করেছেন। আন্দিজপারের দেশটির সমর্থকেরা তা ভালোভাবে নেবেন কেন?
বাজে অঙ্গভঙ্গির পাশাপাশি অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেছেন মার্তিনেজের প্রতি। তাতে অবশ্য মার্তিনেজের কিছুই যায়–আসে না। আর্জেন্টিনার জয়ই তাঁর কাছে বড় কথা। সে পথে কোনো অবদান রাখতে পারলে মনে মনে তাঁর খুশি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে মাঝেমধ্যে এটাও বুঝিয়ে দেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। খেলতে নেমেছেন, পজিশন যেহেতু পোস্টে, তাই গোল সেভ করাই তো তাঁর কাজ।
চিলির বিপক্ষে ম্যাচের পর মার্তিনেজ সে কথাই বললেন, ‘এটা তো জানাই যে প্রতি ম্যাচেই আমাকে একটি-দুটি সেভ করতে হবে।’ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার এই গোলকিপার চিলির খেলা নিয়েও কথা বলেছেন, ‘চিলি জীবন বাজি রেখে খেলেছে। আমরা জানতাম, (ম্যাচ) কঠিন হবে। (চিলির গোলকিপার) ক্লদিও ব্রাভো দারুণ খেলেছে। কিন্তু জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল।’
আসলে আর্জেন্টিনার ম্যাচ নিয়ে মার্তিনেজ যা কিছুই বলুন, সবার শেষে ওই কথাটি যেন শিরোধার্য—‘জয়টা আমাদেরই প্রাপ্য ছিল’। আর্জেন্টিনার জার্সির প্রতি যাঁর এতটা নিবেদন, পোস্টের নিচেও তো সেই ছাপ থাকবেই। এই চিলির বিপক্ষেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ২০২১ সালে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষিক্ত হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেছে মার্তিনেজের।
জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর পরিসংখ্যানও চোখ রগড়ে দেওয়ার মতো—৪১ ম্যাচের মধ্যে ৩০টিতেই ‘ক্লিনশিট’! এই পথে হজম করেছেন মাত্র ১৬ গোল। ওহ, মার্তিনেজের আরেকটি পুরোনো অভ্যাসও বেরিয়ে এল—সেটি অবশ্য মেসিকে নিয়ে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে বহু আগেই সর্বকালের সেরা তকমা দিয়ে সব সময় সবকিছুর ওপরে রাখাটা অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন মার্তিনেজ। চিলির বিপক্ষে ম্যাচের পর যেমন বললেন, ‘লিও সব ম্যাচ খেলতে চায়। সে সব সময় পার্থক্য গড়ে দেয়।’
যদিও চিলির বিপক্ষে মেসি গোল পাননি, হালকা চোটও পেয়েছেন ম্যাচে। গোল করার কাজটা করেছেন আরেক মার্তিনেজ। ইন্টার মিলানের এই স্ট্রাইকার আর্জেন্টিনার হয়ে নিজের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই গোল পেলেন। এর মধ্যে তিনটি গোল করেছেন বদলি নেমে। অর্থাৎ দলের প্রয়োজনে গোল এনে দেওয়ার ধারটা তাঁর ফেরার পথে। তার আগে অবশ্য ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ভুগেছেন গোলখরায় (৭৭৭ মিনিট)।
জাতীয় দলের হয়ে এ নিয়ে ৬০ ম্যাচে ২৬ গোল হলো মার্তিনেজের। জয়ের পর ইন্টার স্ট্রাইকার বলেছেন, ‘এই ম্যাচগুলো এমনই (কঠিন)। আমাদের একই পথে থেকে একইভাবে খেলতে হবে। কারণ, ম্যাচগুলো কঠিন হবে। ৩ পয়েন্ট পাওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ এই মার্তিনেজকেও কিন্তু প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ‘দিবু’ মার্তিনেজ, ‘বিশ্বের অন্যতম দুই সেরা ফরোয়ার্ড আছে আমাদের—হুলিয়ান (আলভারেজ) ও লাওতারো (মার্তিনেজ)।’
মার্তিনেজের মতো জয়টা প্রাপ্য ছিল বলে মনে করেন স্কালোনিও, ‘এ জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। ম্যাচটা মোটেই সহজ ছিল না। চিলি খুব ভালো খেলেছে। রিকার্ডো গার্সিয়া খুব ভালো করছে। তারা খুব শক্তিশালী দল। শেষ পর্যন্ত সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই।’