বাংলাদেশে লম্বা সময় কোচিং করিয়েছেন অস্কার ব্রুজোন (বাঁয়ে) ও জেমি ডে
বাংলাদেশে লম্বা সময় কোচিং করিয়েছেন অস্কার ব্রুজোন (বাঁয়ে) ও জেমি ডে

ইউরো ২০২৪ ফাইনাল

স্পেনের ব্রুজোন, ইংল্যান্ডের জেমি—দুজনেরই ফেবারিট ইয়ামালরা

প্রতীক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। আজ রাতে ইউরো ২০২৪-এর ফাইনালে মুখোমুখি স্পেন-ইংল্যান্ড। ফাইনালে কার ভাগ্যে কী আছে, জানা যাবে শেষ বাঁশির পর। তার আগে জানা যাক, বার্লিনের ফাইনাল নিয়ে কী ভাবছেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক দুই কোচ অস্কার ব্রুজোন ও জেমি ডে।

স্প্যানিশ কোচ ব্রুজোন আশাবাদী, তাঁর দেশ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি ঘরে তুলবে ১২ বছর পর। ইংলিশ কোচ জেমি ডের মনজুড়ে ইংল্যান্ড থাকলেও এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সে ব্রুজোনের মতো স্পেনকে এগিয়ে রাখছেন তিনিও।

স্পেন ফেভারিট হিসেবে এই টুর্নামেন্টে যায়নি। কিন্তু যোগ্যতর দল হিসেবেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেছে। এবারের ইউরোর সেরা দল স্পেনই—এমনটাই মনে করছেন অস্কার ব্রুজোন।

ফাইনাল জেতা উচিত স্পেনেরই
—অস্কার ব্রুজোন

২০২১ সালে মালদ্বীপ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ ছিলেন ব্রুজোন। কদিন আগে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ছয় বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে থাইল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছেন স্ত্রী–সন্তান নিয়ে। থাইল্যান্ড থেকে ফোনে ইউরো ফাইনাল নিয়ে প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন ব্রুজোন।

ফাইনালেও ইয়ামালের জাদু দেখার অপেক্ষায় ব্রুজোন

শুধু নিজের দেশ বলে নয়, স্পেন এই টুর্নামেন্টে খেলছেও দারুণ। সেটা উল্লেখ করে ব্রুজোন বলেন, ‘স্পেনের ফাইনালে ওঠার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু স্পেনকে হোঁচট খেতে হয়নি। একের পর এক বাধা পেরিয়েছে। জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দলকে হারিয়েছে শেষ আট আর শেষ চারে। শেষ ষোলোয় জর্জিয়াকে হারিয়েছে। কোনো ম্যাচেই টাইব্রেকারে যেতে হয়নি। তার আগে গ্রুপ পর্বে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া, ইতালিকেও হারিয়েছে। টুর্নামেন্টে সেরা ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলেছে স্পেন।’

ব্রুজোনের চোখে, স্পেন তারকার দিক থেকে খুব বেশি আকর্ষণীয় হয়তো নয়। বড় তারকা বলতে রদ্রির নাম বলবেন অনেকে। এর বাইরে খুব বেশি নাম নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশের সাবেক কোচ টেনে আনছেন ইয়ামাল প্রসঙ্গ, ‘এই টুর্নামেন্টে আর্বিভাব ঘটেছে ১৬ বছরের বিস্ময়বালকের—ইয়ামাল। সে বড় তারকা হওয়ার পথে। ফাইনালে চোখ থাকবে তার দিকে। আমি তো মনে করি, সেমিফাইনালে ফ্রান্সের জালে যেমন বিস্ময়কর গোল করেছে, ফাইনালেও তার পা থেকে তেমন কিছু আমরা দেখতে পাব। ফাইনাল নিয়ে খেলোয়াড়দের মনে ও মাথায় কী আছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

অস্কার ব্রুজোন–জেমি ডে দুজনই মনে করেন, স্পেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ

স্পেনের কোচ দে লা ফুয়েন্তকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ব্রুজোন। স্বদেশি কোচ নিয়ে বলেন, ‘তিনি এই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন। এই খেলোয়াড়দের সবাইকে খুব ভালো করেই জানেন। কারণ, তিনি বয়সভিত্তিক গ্রুপে অনেক বছর ধরে তাঁদের অনেকের কোচ ছিলেন।’

ব্রুজোনের মতে, ফাইনালটা হবে দুই দলের জন্যই কঠিন। এমন নয় যে স্পেন জিতে যাবে সহজে। শিরোপার জন্য তাদের কঠিন লড়াই-ই করতে হবে। কারণ, ইংল্যান্ড দলটা ধীরে ধীরে ভালো খেলেছে। মাঝমাঠে তাদের নিয়ন্ত্রণ ভালো। আর মাঝমাঠের দখল যারা নিতে পারে, ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা তাদেরই বেশি।

ইংল্যান্ডের মাঝমাঠে ফিল ফোডেন, জুড বেলিংহামরা খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। আছেন সাকার মতো খেলোয়াড়। আর হ্যারি কেইনের কথা আলাদাভাবে না বললেও চলে। স্পেন দলের মাঝমাঠও বেশ ভালো। যেমন রদ্রির ওপর থাকে খেলা তৈরির বড় দায়িত্ব। আছেন ফাবিয়ান রুইজের মতো খেলোয়াড়।

‘সব মিলিয়ে স্পেনের জয় দেখতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছি। আমি তো বলব, স্পেনের জয়ের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ, ইংল্যান্ডের ৪০’—বলছিলেন তপু বর্মণদের সাবেক কোচ।

অস্কার ব্রুজোনের মতো কাগজে–কলমে স্পেনকে এগিয়ে রাখছেন জেমি ডেও। না রেখেও আসলে উপায় দেখছেন না। কারণ, এই টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের চেয়ে ঢের ভালো ফুটবল খেলেছে স্পেন।

জেমি ডে এ নিয়ে বলেন, ‘একজন ব্রিটিশ হিসেবে আমি চাই ইংল্যান্ড জিতুক, কিন্তু শক্তিতে স্পেন এগিয়ে। তারা সেরা অলরাউন্ড দল, সেটা সব বিভাগেই। এ কারণেই আমি বলব—স্পেন ৬০, ইংল্যান্ড ৪০।’

জেমি ডে এখন ইংল্যান্ডের ক্রলি শহরে আছেন। সেখানেই টিভিতে ফাইনাল দেখবেন। আশপাশে পাড়া–প্রতিবেশীরা ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ডের জয় দেখতে মুখিয়ে আছেন জানিয়ে জামাল ভূঁইয়াদের সাবেক কোচ ফোনে বলেন, ‘বিদেশে আমরা প্রথমবার বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছি। এটা অসাধারণ ব্যাপার। আশা করি, আমরা ভালো খেলতে পারব এবং জয় ছিনিয়ে আনতে পারব।’

সাউথগেট কৌশল ঠিক রাখতে পারলে ইংল্যান্ড শিরোপা জিতবে বলে মনে করেন জেমি ডে

ইংল্যান্ডের কোচ সাউথগেট খুব শান্ত ও হিসাবি। তাঁর কৌশল কাজে এসেছে। জেমি মনে করেন, সাউথগেটের কৌশল অনুযায়ী খেলতে পারলে ইংল্যান্ড জিততে পারে ফাইনালও। আর সেই জয়ের পথে জেমি ডের বাজি বেলিংহাম, ‘আমার মতে, ফাইনালে ইংল্যান্ডে মূল খেলোয়াড় হবে বেলিংহাম। বল পায়ে ও বল ছাড়াই ত্রাস ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে সে। ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে ইংলিশ ডিফেন্ডারদেরও, যাদের সামনে বড় পরীক্ষা স্পেনের ফরোয়ার্ডদের আটকানো।’

স্পেনের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ
—জেমি ডে

অনেকের চোখেই, ইংল্যান্ড এবারের ইউরোতে সমর্থকদের তৃপ্ত হওয়ার মতো ফুটবল খেলতে পারেনি; শুধু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেমিফাইনালের প্রথমার্ধ ছাড়া। জেমি ডেও এর সঙ্গে একমত, ‘আমরা যে দারুণ ফুটবল খেলেছি, তা বলব না। তবে টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের খেলা ধীরে ধীরে আরও ভালো হয়েছে। আমার মনে হয়, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ইংল্যান্ড তার সেরা ফুটবল খেলেছে।’

ফাইনালে ফিল ফোডেনের কাছে বড় কিছুর প্রত্যাশা করছেন জেমি ডে

ফিল ফোডেন শেষ দুই ম্যাচে ভালো খেলেছেন। ফাইনালে তাঁর ওপর বাড়তি আগ্রহ থাকবে জেমি ডের। তাঁর কথায়, ‘আশা করছি, সুযোগ তৈরি ও গোল করার ক্ষেত্রে সে বড় প্রভাব ফেলতে পারবে।’

তিন গোল করা স্ট্রাইকার হ্যারি কেইনের ওপরও ভরসা রাখছেন জেমি, ‘আমি মনে করি, সে তার স্বাভাবিক ছন্দে না থাকলেও গোল করতে পেরেছে। এটা বড় দিক। আশা করি, ফাইনালে গোল করে ইংল্যান্ডকে জেতাবে কেইন। সেই অপেক্ষাতেই আছি।’