ঈদে দেশে যাওয়া হচ্ছে না ঢাকার ক্লাব ফুটবলে খেলা বেশ কয়েকজন বিদেশি মুসলিম ফুটবলারের
ঈদে দেশে যাওয়া হচ্ছে না ঢাকার ক্লাব ফুটবলে খেলা বেশ কয়েকজন বিদেশি মুসলিম ফুটবলারের

দেশের ঈদ ভুলে গেছেন তাঁরা

সোলেমান দিয়াবাতে ভুলে গেছেন শেষ কবে তিনি নিজের দেশে ঈদ করেছেন। মোহামেডানের মালির এই স্ট্রাইকার এখন ক্লাবের ঘরের ছেলে। এবারের ঈদের ছুটি দিয়াবাতে কাটাবেন মতিঝিলের মোহামেডান ক্লাবেই। সেখানে দাঁড়িয়েই বলছিলেন, ‘আমি সত্যিই ভুলে গেছি মালিতে আমি শেষ কবে ঈদ কাটিয়েছি।’

২০১৯ সালে মোহামেডানের হয়ে খেলতে বাংলাদেশে আসেন দিয়াবাতে। সে সময় সাদা-কালোদের খুব বাজে অবস্থা। মাঠের খেলা তো বটেই, মাঠের বাইরেও ক্যাসিনো–কাণ্ডের জেরে এলোমেলো দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। টালমাটাল পরিস্থিতিতে দিয়াবাতেই হয়ে উঠলেন মোহামেডানের প্রাণভোমরা। তাঁর ওপর নির্ভর করেই ঘুরে দাঁড়ায় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবটি।

সোলেমান দিয়াবাতে

দিয়াবাতের এবারের ঈদ একটু মন খারাপের মধ্যেই কাটবে। ভিয়েতনামে খেলার সময় বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ে ফাতিমার জন্য মনটা খুব পুড়ছে তাঁর। মেয়ের বয়স এখন ৯ বছর। কত দিন দেখেন না তাকে, কোলে তুলে আদর করতে পারেন না! মেয়েকে দেখার জন্য ভিডিও কলই ভরসা এখন, ‘মেয়েটার জন্য মন খারাপ, ভীষণ মন খারাপ। কালও (পরশু) হোয়াটসঅ্যাপে কথা হলো। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় মেয়েটা খুব সমস্যায় পড়েছে। ও বাবার ভীষণ ভক্ত। খুব ইচ্ছে করে ওর জন্য উপহার কিনে নিয়ে যাই।’

দিয়াবাতের মন কাঁদে মায়ের জন্যই। বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা থাকেন মালিতে। দিয়াবাতে বলছিলেন, ‘মার সঙ্গে বহুদিন ঈদ করি না। তাঁকে বলেছি বাংলাদেশ চলে এসো। মা–ছেলে মিলে একসঙ্গে থাকি। বলেছি, বাংলাদেশের মানুষ আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। মা–ও খুশি হন বাংলাদেশের কথা শুনলে।’

মোজাফফরভ

মোহামেডানের উজবেক ফুটবলার মোজাফফরভও দুই বছর ধরে উজবেকিস্তানে ঈদ করেন না। এই দুই বছর সব ঈদেই বাংলাদেশে কাটিয়েছেন। তাঁর অবশ্য এ নিয়ে আক্ষেপ নেই, ‘আমরা ফুটবলার, এটাই আমাদের পেশা। ঈদ উজবেকিস্তানের মতোই এই দেশেও আনন্দের। এই কয়টা দিন এখানকার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কাটিয়ে দেব। পরিবারের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলব।’ ঈদ নিয়ে তাঁর একটাই আফসোস, ‘মায়ের হাতে তৈরি উজবেক খাওয়া খুব মিস করব।’

বাবুরবেক ইউলদাশোভ

এবার ঈদে দেশে যাওয়া হচ্ছে না ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবে খেলা আরও বেশ কয়েকজন বিদেশি মুসলিম ফুটবলারের। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে বাইরে বাইরেই ঈদ কাটাতে হয় তাঁদের। দিয়াবাতের মতো অনেকেই আছেন দেশের ঈদের স্মৃতি যাদের ম্লান হয়ে আসছে। এঁদের মধ্যে আছেন বসুন্ধরা কিংসের দুই উজবেক ফুটবলার আশরোর গফুরভ আর বাবুরবেক ইউলদাশোভের। গফুরভের অবশ্য তাতে খুব একটা সমস্যা নেই। তিন বছর ধরে তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশেই আছেন স্ত্রী ও দুই কন্যা। ঈদে দেশে যেতে না পারলেও তাই তেমন আক্ষেপ নেই তাঁর, ‘স্ত্রী ও মেয়েরা আছে আমার সঙ্গে। ওদের নিয়েই ঢাকায় ঘুরব। এখানে বন্ধুবান্ধব গড়ে উঠেছে। দেশের পরিবেশে ঈদ করতে না পারার দুঃখটা তো থাকছেই। তবে পেশাদার ফুটবলারের জীবন এমনই। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও কলই ভরসা।’

আশরোর গফুরভ

বাবুরবেক ইউলদোশোভ ঈদে খুব মিস করেন উজবেক রান্না আর সবাই মিলে ঈদের দিন ভোরে নামাজ পড়তে যাওয়া, ‘একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়ার আনন্দই অন্য রকম। উজবেক রান্না খুব প্রিয় আমার। অনেক দিন সেই খাওয়ার স্বাদ পাই না। রেসিপি জোগাড় করে নিজে কিছু রাঁধার চেষ্টা করি। তবে বাড়ির মতো তো আর হয় না।’

ঢাকা লিগে খেলা উজবেক খেলোয়াড়েরা অবশ্য এখানেও ঈদে একটা বিশেষ আয়োজন করেন। প্রতিবারের মতো সেটা হবে এবারও। নিজেরা একসঙ্গে হয়ে বারবিকিউ উৎসব করবেন। মেতে উঠবেন ঈদ আড্ডায়। তবু নিজের দেশে পরিবার–পরিজনের সঙ্গে ঈদ মানেই অন্য কিছু। প্রবাসজীবনে সেই আনন্দ কি আর পাওয়া যায়!