বাংলাদেশি সাংবাদিক পরিচয় পেতেই ট্যাক্সিচালক সুরেন্দ্র মহারজন বলেন, ‘তোমাদের মেয়েরা তো অসাধারণ ফুটবল খেলছে। আমি গতকাল ট্যাক্সি পার্কিংয়ে রেখে টেলিভিশনে বাংলাদেশের খেলা দেখেছি।’
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে চলমান মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন সাবিনা খাতুনরা।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল ভারতকে। এর আগে সাফের কোনো আসরেই ভারতকে হারাতে পারেনি কোনো দল।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ভুটানের। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ জয়ের পর নেপালে প্রশংসায় ভাসছেন সাবিনা-কৃষ্ণা-মণিকারা। কাঠমান্ডুর মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে বাংলাদেশের মেয়েদের জয়ের সংবাদ। কাঠমান্ডু পোস্ট, হিমালয়ান টাইমস, ডেইলি কান্তিপুরসহ বেশির ভাগ পত্রিকার খেলার পাতার প্রধান সংবাদ ছিল সাবিনাদের নিয়ে। ম্যাচ শেষে সাবিনাদের উচ্ছ্বাসের ছবিও বড় করে ছেপেছে পত্রিকাগুলো।
কাল রাতে স্টেডিয়াম থেকে টিম হোটেল দ্য সলটি কাঠমান্ডুতে ফিরতেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন মারিয়া মান্দারা। টিম হোটেলের কর্মকর্তা, কর্মচারী, রেস্তোরাঁকর্মী থেকে শুরু করে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েদের।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছেন বলে একটু বেশিই খুশি ছিলেন পাকিস্তানের কোচ আবদেল মির্জা রিজকি। হোটেলে মেয়েরা ঢোকার পর তিনি কাছে এসে অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন জানিয়েছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক মারিয়া জামিলা খানও।
নেপাল জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার দীপা অধিকারী সাবিনার দীর্ঘদিনের বন্ধু। ২০১০ কক্সবাজার সাফে প্রথমবার নেপালের হয়ে খেলেন দীপা। এবার বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচই মাঠে বসে দেখছেন নেপাল আর্মি দলের এই উইঙ্গার। ৩ ম্যাচে ৫ গোল করে টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা সাবিনা।
বাংলাদেশের গোলমেশিনের এমন গতিময় ফুটবল খেলতে দেখে মুগ্ধ দীপা, ‘এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অসাধারণ ফুটবল খেলছে। সাবিনাকে আমি ২০১০ সালে যেমন দেখেছি, এখনো তেমনই মনে হয়েছে। ওর পারফরম্যান্সে কোনো হেরফের নেই। গোলের ক্ষুধা যেন আগের মতোই রয়েছে সাবিনার।’
২০১৯ সালে চোটের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন দীপা। আজ সকালে আর্মি হেড কোয়ার্টার মাঠে যখন বাংলাদেশ দল অনুশীলন করে, তখন প্রিয় বন্ধুকে দেখতে আসেন দীপা। ওই সময় সাবিনাকে বলেন, ‘বন্ধু, তুমি তো খুব ভালো খেলছ। তোমরাই চ্যাম্পিয়ন হবে।’
ট্যাক্সিচালক সুরেন্দ্র মহারজনও বাংলাদেশকে ফাইনালে দেখতে চান, ‘ওরা ভারতকে পাত্তাই দিল না। আমার মনে হয় ফাইনালে খেলবে নেপাল ও বাংলাদেশ। যদি নেপাল ফাইনালে ওঠে, তাহলে ছুটি নেব। সেদিন মাঠে গিয়ে খেলা দেখব।’
ফিফা র্যাংঙ্কিয়ে ভারতের (৫৮) চেয়েও ৮৯ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ (১৪৭তম) খেলেছে শৈল্পিক ফুটবল। কৃষ্ণা, মারিয়াদের খেলা দেখে স্থানীয় হোটেলের ম্যানেজার বুদ্ধলাল বলেন, ‘ভারতকে ৩-০–তে হারাবে বাংলাদেশ, এটা আমি ভাবতেই পারিনি। মেয়েদের খেলা আমি খুব খুশি।’
মিডফিল্ডার মণিকা চাকমার খেলা দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের বাসচালক কৃষ্ণ ডাকাল, ‘মণিকার খেলা খুবই ভালো লেগেছে আমার। ওর জন্যই তো ভারতের মেয়েরা বাংলাদেশের বক্সে বল নিয়ে ঢুকতে পারছিল না।’
নেপালি দর্শকদের ভালোবাসা পেয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আরও ভালো ফুটবল উপহার দিতে চান। সবার হয়ে মণিকা যেন সেই কথায় বললেন, ‘আসলে যখন মাঠে নেপালিরা আমাদের সমর্থন করে, তখন আমাদেরও ভালো লাগে। আমরাও ভালো খেলার জন্য আরও উৎসাহ পাই।’