আর্জেন্টিনা দলের বিশ্বকাপ জয়ের রেশ এখনো কাটেনি। গত বছরের ডিসেম্বরে ১৮ তারিখের সেই ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করেছিলেন মেসিরা। কিন্তু সে সাফল্যগাথা ভুলে এখন আরেকটি বিশ্বকাপে খেলার মিশনে নামতে হবে আর্জেন্টিনা। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৮ সেপ্টেম্বরের ম্যাচ দিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লড়াইয়ে নামবে আর্জেন্টিনা।
সেই ম্যাচ সামনে রেখে দলও ঘোষণা করেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। যেখানে তিনি কথা বলেছেন বিশ্বকাপ জয়ের প্রভাব, দলের বর্তমান অবস্থা এবং নিজেদের পরবর্তী লক্ষ্যসহ নানা বিষয় নিয়েও। এ সময় এমিলিয়ানোর মার্তিনেজের সঙ্গে লিওনেল মেসির কোথায় মিল, তা নিয়েও কথা বলেছেন বিশ্বকাপজয়ী এই কোচ।
৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতে এখন নতুন উদ্যোমে আর্জেন্টিনা দল। বিশ্বকাপ জয়ের পর খেলা চার প্রীতি ম্যাচের প্রতিটিতে জিতেছে তারা। কিন্তু এবার আসল লড়াইয়ে নামতে হবে স্কালোনির দলকে। যেখানে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অপেক্ষা করছে তাদের সামনে। নতুন এই শুরু নিয়ে কী ভাবছেন জানতে চাইলে স্কালোনি বলেছেন, ‘সামনে যা আসছে তা খুবই কঠিন। শুরুটা সব সময় কঠিন। আশা করি খেলোয়াড়ের ফিট থেকেই ম্যাচ খেলতে নামবে এবং সমর্থকেরা দলের খেলা উপভোগ করবে। আমরা লড়াই করতেই নামব, আমরা লড়াই করতেই সব সময় পছন্দ করি।’
জাতীয় দলের কোচ হিসেবে খেলোয়াড়দের সব সময় কাছে পান না স্কালোনি। তবে দলের কাছাকাছি না থাকলেও সব সময়ই দল নিয়ে ভাবেন বলে জানিয়েছেন স্কালোনি, ‘যদিও আমরা কয়েক মাস পরপর খেলি। তবে আমি সব সময় দল নিয়ে চিন্তা করি। আমি যখন খাই কিংবা সাইকেল চালাই, তখনো ব্যাপারটা আমার মাথায় থাকে। কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, সেই ভাবনা মাথায় আসে। খুব বেশি কোচ বোধ হয় এসব ভাবনা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারে।’
বিশ্বব্যাপী আর্জেন্টিনা দলের সমর্থকেরা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। শিরোপা জয়ের পর আর্জেন্টিনা দল নিয়ে বেড়েছে উন্মাদনা। সেই উন্মাদনা নিয়ে স্কালোনি বলেছেন, ‘যখন আমরা মায়ামিতে যাই তখন আর্জেন্টাইন রাষ্ট্রদূত আমাকে বলেছে বিশ্বকাপের পর অনেক মানুষ আর্জেন্টিনার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছে। স্পেনে আমি এমন অনেককে পেয়েছি, যারা আমাকে বলেছে তারা আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে।’
বিশ্বকাপের প্রভাব নিজের ওপর কেমন পড়েছে, তা জানাতে গিয়ে স্কালোনি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের পর আমি তিন বা চার দিন চার শিফটে অটোগ্রাফ দিয়ে কাটিয়েছি। লাইনগুলো আমার বোন সামলাত। চতুর্থ দিনে গিয়ে ক্লান্তিতে কাবু হয়ে যাই এবং দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়ি।’
আর বিশ্বকাপের সেই অমূল্য অনুভূতি নিয়ে স্কালোনির ভাবনা এমন, ‘বিশ্বকাপ শেষ। আমরা সেখান থেকে যা পেয়েছি তা হলো মানুষের আনন্দ। আমাদের জন্য সেটাই সর্বোচ্চ। এই দল মানুষের জন্য খেলে। যখন খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলে খেলতে আসে, তখন তাদের পক্ষে স্বার্থপর হওয়া কঠিন, কারণ তারা খেলে নিজেদের বন্ধুদের জন্য, পরিবারের জন্য এবং দেশের জন্য।’
নিজের দলকে কেমন দেখতে চান স্কালোনি, জানতে চাইলে আর্জেন্টিনা কোচ বলেছেন, ‘আমি এমন খেলোয়াড় চাই, যারা জানে যে প্রতিপক্ষ দলও খেলতে পারে। এমন সময় এসেছিল, যখন মনে হয়েছিল আর্জেন্টিনার এই দলের খারাপ সময় আসে না। আমরা খেলোয়াড়দের বলেছি, কখনো কখনো তাদের ভুগতেও হবে। এই প্রজন্মের খেলোয়াড়দের বোঝাতে পেরেছি যে সমস্যায় পড়া খুবই সম্ভব। এমন মুহূর্ত আসবে, যখন আমাদের ভুগতে হবে এবং তখন আমাদের উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া চলবে না। আমাদের গভীরে গিয়ে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। খেলোয়াড়েরা খুব ভালোভাবে বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল।’
মেসির সঙ্গে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের তুলনা করে স্কালোনি বলেছেন, ‘দিবু (এমিলিয়ানো মার্তিনেজ) দারুণ একজন মানুষ। সে কখনো হাল ছাড়ে না। অনেকের জন্য সে অনুপ্রেরণা। একদম লিওর (মেসি) মতো। সে–ও কখনো হাল ছাড়ে না।’