বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের পর প্রায় ৭০০ কয়েদিকে মুক্তি দিয়েছে ইরান। ২৫ নভেম্বর যোগ করা সময়ে ২ গোলে ওয়েলসকে হারায় ইরান। বিশ্বকাপে সর্বশেষ ১২ ম্যাচে এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় জয়।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইরানের বিচার বিভাগ ‘মিজান’-এর ওয়েবসাইটে ওয়েলসের বিপক্ষে জয়ের পর ৭০৯ কয়েদির মুক্তির খবর জানানো হয়েছে। এসব কয়েদির মধ্যে ‘সাম্প্রতিক ঘটনায় গ্রেপ্তার কয়েকজন আছেন’—এমন জানিয়েছে ‘মিজান অনলাইন’। তবে এর বেশি কিছু জানানো হয়নি।
সাম্প্রতিক যে ঘটনার কথা সেখানে বলা হয়েছে, সেটি মূলত প্রায় দুই মাস ধরে ইরানে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলন। গত সেপ্টেম্বরে হিজাব না পরার কারণে ইরানের নীতি পুলিশের হাতে আটক ও পরে নির্যাতনে মাসা আমিনি নামের এক তরুণী নিহত হওয়ার পর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলন। সেটি এরপর রূপ নিয়েছে সহিংসতায়, যেখানে শিশুসহ শত শত মানুষ নিহত হওয়ার খবর আসে।
ইরানের অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জামিনে মুক্তি পেয়েছেন প্রখ্যাত ইরানিয়ান অভিনেতা হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি। চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানানোর পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া সাবেক আন্তর্জাতিক ফুটবলার ভোরিয়া গফুরি ও আন্দোলনকারী হোসেইন রোনাগিকেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
ইরানের বিচারব্যবস্থা জানিয়েছে, আন্দোলন শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভোল্কার টার্ক গত সপ্তাহে বলেছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইরানের সে আন্দোলনের ছোঁয়া লেগেছে বিশ্বকাপেও। দেশের মানুষের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সংগীতের সময় চুপ করে ছিলেন ইরানের খেলোয়াড়েরা। মাঠে সমর্থকেরা সে সময় ‘দুয়ো’ও দেন। অবশ্য কোচ কার্লোস কুইরোজ পরে সমর্থকদের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন, দলকে সমর্থন দিতে না পারলে মাঠে আসার দরকার নেই।
পরের ম্যাচে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলান খেলোয়াড়েরা। তবে গ্যালারিতে মাসা আমিনির স্মরণে এখনকার আন্দোলনের স্লোগান ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। ওয়েলসের বিপক্ষে জয়ের পর ইরান ডিফেন্ডার মোর্তেজা পুরালিগাঞ্জি বলেছিলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য লড়াই করি, তাদের খুশি করার চেষ্টা করেছি।’
আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে ইরান। বিশ্বকাপে কখনোই শেষ ষোলোতে খেলেনি দলটি।