অবসর ঘোষণা করেছিলেন ২০০৮ সালে। প্রয়াত বাবার ইচ্ছাপূরণে পরের বছর সেই অবসর ভেঙে রিও ডি জেনিরোর ক্লাব আমেরিকার হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছিলেন রোমারিও। এরপর আর তাঁকে পেশাদার ফুটবল মাঠে দেখা যায়নি। ১৫ বছর আগে সর্বশেষ পেশাদার ম্যাচ খেলা ব্রাজিলের এই কিংবদন্তি আবারও পেশাদার ফুটবলে ফিরছেন।
১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী রোমারিও এখন সেই আমেরিকা ফুটবল ক্লাবের সভাপতি। এই ক্লাবের হয়েই রিও ডি জেনিরোর স্টেট ফুটবল লিগের দ্বিতীয় বিভাগের প্রতিযোগিতা ক্যাম্পেনাতো ক্যারিওকা সিরি আ২ প্রতিযোগিতায় কিছু ম্যাচ খেলবেন ৫৮ বছর বয়সী রোমারিও। কারণ? নিজের ছেলের সঙ্গে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে চান ব্রাজিলের কিংবদন্তি এ স্ট্রাইকার। তাঁর ছেলে ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড রোমারিনিওকে গত মাসে দলে টেনেছে আমেরিকা। ২৩ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে ১০০০-এর বেশি গোল করা রোমারিওর মতো তাঁর ছেলের কাজও গোল করা।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, মাঠে ফিরতে ক্যাম্পেনাতো ক্যারিওকা সিরি আ২-এ নাম নিবন্ধন করিয়েছেন রোমারিও। তিনি নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে মাঠে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এটাও পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, লিগে পুরো মৌসুম খেলবেন না। ছেলের সঙ্গে খেলার স্বপ্নপূরণে আমেরিকার হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলবেন, ‘আমার মাঠে ফেরায় চোখ রাখুন। পুরো চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমার লক্ষ্য না। পছন্দের দল মেকাওয়ের (আমেরিকা ক্লাবের তকমা) হয়ে কিছু ম্যাচ খেলতে চাই। এর পাশাপাশি নিজের আরেকটি স্বপ্নও পূরণ করতে চাই: ছেলের সঙ্গে খেলতে চাই।’
আমেরিকা ক্লাবের সমর্থক ছিলেন রোমারিওর বাবা এদভেইর। বাবার কাছ থেকেই এই ক্লাবকে ভালোবাসার পাঠ পেয়েছেন রোমারিও। মজার ব্যাপার হলো, আমেরিকান ক্লাবের সভাপতি হলেও রোমারিও কিন্তু মাঠে ফেরার জন্য বেতন নেবেন। সেটা একদম ন্যূনতম বেতন—চুক্তিপত্রে যেটা না থাকলেই নয়। মানে, পেশাদার পর্যায়ে মাঠে ফিরতে চুক্তিপত্রে বেতনের একটা অঙ্ক থাকাটা বাধ্যতামূলক। সে জন্যই ক্লাব সভাপতি হয়েও মাঠে ফেরার জন্য আলাদা করে ন্যূনতম একটা পারিশ্রমিক নেবেন রোমারিও। তবে সেই বেতনের অঙ্কটা আবার ফিরিয়েও দেবেন আমেরিকা ক্লাবকে। চলতি বছরের শুরুতে আমেরিকার সভাপতির দায়িত্ব নেন রোমারিও। ২০০৯ সালে এই ক্লাবের হয়েই তিনি সর্বশেষ পেশাদার ম্যাচ খেলেছেন।
রোমারিওর এখন যে বয়স, তাতে তাঁর মাঠে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অবাক করার মতোই ব্যাপার। তবে রোমারিও নিজে আত্মবিশ্বাসী। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’কে এ নিয়ে রোমারিও বলেন, ‘খুব কম অ্যাথলেট এবং ফুটবলারই নিজের ছেলের সঙ্গে খেলার স্বপ্নপূরণের সুযোগ পায়। আমার বয়স ৫৮ বছর হলেও এখনো বেশ ভালো বোধ করছি। খেলাধুলা করি, ফুটবল খেলি, বাইরেও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি...খেলার জন্য নিজেকে যথেষ্ট যোগ্য বলেই মনে করি।’
রোমারিও জানিয়েছেন, ছেলেকে তিনি শুরুতে খবরটি জানাননি। তবে বাবার মাঠে ফেরার সংবাদটা জানার পর রোমারিনিও নিজেও অবাক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রোমারিও, ‘এটা তার জন্য বিস্ময় হয়ে এসেছে। সে বেশ খুশি।’ রোমারিও ছেলেকে নিয়ে মজা করে এটাও বলেছেন, ‘আশা করি, সর্বোচ্চ গোলদাতা বানাতে সে আমাকে বল পাস দেবে। একটা ব্যাপার নিশ্চিত, সে আমার জন্য দৌড়াবে। আমি জায়গামতো (বক্সে) থাকব।’ এই বয়সে খেলার জন্য শারীরিকভাবে কতটা সক্ষম—তা নিয়েও কথা বলেছেন বার্সেলোনার হয়ে লিগজয়ী কিংবদন্তি, ‘শারীরিকভাবে মনে হয় না বেশিক্ষণ টিকতে পারব। তবে কে জানে হয়তো পুরো একটা ম্যাচও টিকে যেতে পারি।’
ব্রাজিলের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার পরিষ্কার জানিয়েছেন, স্পনসরদের আকৃষ্ট করতে মাঠে ফেরার সিদ্ধান্তটা তাঁর প্রধান লক্ষ্য নয়। আর তাঁর মাঠে ফেরার ব্যাপারে কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি,‘সব ক্রিয়ারই একটি প্রতিক্রিয়া থাকে। আমেরিকাই আমার প্রথম ভাবনার জায়গা। আমি সভাপতি। ক্লাবকে সাহায্য করতে চাই। দ্বিতীয়ত, ছেলের সঙ্গে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। তাতে আশা করি স্পনসরও আসবে। সেটা হলে ব্যাপারটা নিখুঁত হয়।’
খেলা ছাড়ার পর রাজনীতিতে নাম লেখানো রোমারিও সিনেটের সদস্যও। মাঠে ফিরলে সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা হবে না বলেও জানিয়েছেন রোমারিও। সিরি আ২–এর বেশির ভাগ ম্যাচই শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। শুধু পঞ্চম রাউন্ডের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।
রোমারিও জানিয়েছেন, এমনিতে ক্লাবের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তবে অপেশাদার ফুটবল খেলা রোমারিও জানেন, প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কত কঠিন! সেটা হোক না রাজ্য লিগে দ্বিতীয় বিভাগের প্রতিযোগিতা। সে জন্য ‘চেষ্টা করতে হবে’ বলেও জানিয়েছেন রোমারিও। আর এই চেষ্টার মধ্যে রয়েছে অনুশীলন—ক্যারিয়ারের সোনালি সময়ে যে কাজটা করতে সব সময়ই গড়িমসি করেছেন রোমারিও। তবে এবার আর সেটি হচ্ছে না।
রোমারিও বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি অনুশীলন করব।’ ৫৮ বছর বয়সে এসে রোমারিও অনুশীলন করবেন—এটা ভাবতেই যে অদ্ভুত লাগে!