ইংলিশ ফুটবলে লিভারপুল–ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দ্বৈরথটা চিরকালীন। এই দুই দলের ম্যাচ মানেই যেন বাড়তি উত্তেজনা আর কথার লড়াই। লড়াইটা যেমন খেলার মাঠে চলে তেমনি মাঠের বাইরেও সমর্থকেরাও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। অবস্থাটা যেন ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’।
আর দুই পক্ষের এই লড়াইয়ে অবধারিতভাবেই এসে পড়ে অতীতের দুটি ঘটনা। এই দুটি ঘটনার সঙ্গেই মিশে আছে দুই ক্লাবের কান্না। দ্বৈরথকে সামনে রেখে অনেক সময় অতীতের এই দুটি ঘটনা নিয়ে পরস্পরকে আঘাত করে বিকৃত তৃপ্তি খুঁজে নেন দুই দলের সমর্থকেরা।
লিভারপুল সমর্থকেরা ১৯৫৮ সালের সেই মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইউনাইটেড সমর্থকদের খোঁচা দেন। যে ট্র্যাজেডি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল আট ইউনাইটেড ফুটবলারের। ইউনাইটেড সমর্থকেরাও কম যান না। তাঁরা লিভারপুল সমর্থকদের মনে করিয়ে দেন হিলসবরো ট্র্যাজেডির কথা। ১৯৮৯ সালে হিলসবরোতে এফএ কাপের সেমিফাইনালে লিভারপুল-নটিংহাম ফরেস্ট ম্যাচের সময় হুড়াহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৯৭ জন লিভারপুল–সমর্থক।
মানবিক এই বিপর্যয়গুলোকে টেনে এনে একে–অপরকে খোঁচা দেওয়া এবং গ্যালারিতে স্লোগান ধরা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও দুই পক্ষকে নিজেদের অবস্থান থেকে কখনো সরানো যায়নি। এবার মর্মান্তিক এসব ঘটনা সামনে রেখে একে–অপরকে আক্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন দুই দলের কোচ। লড়াইয়ে সীমা অতিক্রম না করার কথা বলেছেন টেন হাগ। আর ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেছেন, কারও জন্য ভালো নয় এমন অবস্থানে কোনো লড়াইকে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
দ্বৈরথকে সীমার ভেতর রাখার ডাক দিয়ে টেন হাগ বলেছেন, ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লিভারপুলের দ্বৈরথ বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা। দুই দল মুখোমুখি হলে আমরা সমর্থকদের যে আবেগ সেটাকে পছন্দ করি। তবে এখানে এমন সীমা আছে, যা অতিক্রম করা উচিত নয়। মানুষের মৃত্যুকে এখানে ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য। এটা বন্ধ করার সময় এসেছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘যারা দায়ী, তারা শুধু ক্লাবের সুনামই নষ্ট করে না, বরং নিজেদের, ভক্তদের এবং আমাদের মহান এই শহরের সুনামও তারা নষ্ট করে। আমার নিজের, খেলোয়াড়দের এবং আমাদের স্টাফদের পক্ষ থেকে আমি সমর্থকদের বলব রোববার দলকে সমর্থনে মনোযোগ দিতে এবং দলকে সঠিক উপায়ে প্রতিনিধিত্ব করতে।’
একই বিষয়ে লিভারপুল কোচ ক্লপ বলেছেন, ‘লিভারপুল–ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দ্বৈরথ এত বিশেষ হওয়ার কারণ হচ্ছে, এ নিয়ে যে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা আছে সেটা। কেউ কখনো এটা পরিবর্তন করতে পারবে না। তবে একই সময়ে কোনো দ্বৈরথ যদি খুব বেশি তীব্র হয়ে ওঠে, তবে সেটা এমন জায়গায় চলে যেতে পারে, যা কারও জন্য ভালো নয় এবং আমরা সেটা চাই না। আমরা শোরগোল চাই। আমরা চাই পরিবেশটা উত্তেজনাময় হোক। তবে আমরা চাই না কোনো কিছু এর বাইরে যাক। এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য সেসব স্লোগানের ওপর, ফুটবলে যার কোনো স্থান নেই। যদি আমরা প্যাশন (আবেগ) ধরে রেখে পয়েজনটা (বিষ) ফেলে দিই, তবে সেটা সবার জন্য খুব ভালো হবে।’
পয়েন্ট টেবিলের হিসাবেও দুই দলের জন্য এ ম্যাচ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার ৩ নম্বরে আছে ইউনাইটেড, সমান ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট লিভারপুল আছে ৬ নম্বরে।