বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া

কাল ফুটবলেও বাংলাদেশ-আফগানিস্তান

সাকিবদের শুভকামনা জানিয়ে রাখলেন জামাল

বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে আগামীকাল স্মরণীয় একটি দিন। একই দিনে ক্রিকেট ও ফুটবল দল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে। কাকতালীয়ভাবে ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ একই—আফগানিস্তান। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে উঠতে লাহোরে যখন সাকিব আল হাসানরা নামবেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে, এর কিছু সময় পর জামাল ভূঁইয়ারা খেলতে নামবেন আফগানিস্তানের সঙ্গে। সেটাও বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়েই কিংস অ্যারেনার আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হচ্ছে।

সেই কিংস অ্যারেনাতেই শেষ সময়ে নানা প্রস্তুতি চলার ফাঁকে আজ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনও হলো। আর এই সুযোগে দুই দলের অধিনায়কের কাছেই প্রশ্ন গেল, আগামীকাল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে ফুটবল দলের পক্ষ থেকে কোনো বার্তা আছে?

সংবাদ সম্মেলনে প্রথম আসা আফগান অধিনায়ক ফয়সাল শায়েস্তেক বললেন, ‘আফগানিস্তান ক্রিকেট দল সব সময় আমাদের সমর্থন করে। আফগান দলে জাদরানসহ কয়েকজন ক্রিকেটারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। কালকের ম্যাচের জন্য ওদের শুভকামনা। আফগানিস্তান ক্রীড়াপ্রেমী দেশ। লোকে ক্রিকেট, ফুটবলসহ সব খেলাই ভালোবাসে। আশা করি, আফগানিস্তান ক্রিকেট দল ভালো ফল করবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। আমরাও ভালো কিছু করতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া

বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কথা, ‘কালকের দিনটা বাংলাদেশের মানুষ মনে রাখবে। একই দিনে ক্রিকেট, ফুটবল দল একই দেশের বিপক্ষে খেলবে। তবে দিন শেষে জয়টাই বড়। আমি চাইব, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতুক। ওদের জন্য শুভকামনা। আশা করি, বাংলাদেশ জিতবে।’ তবে ক্রিকেটের ডামাডোলে এ দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা যেন ফুটবল দেখতে ভুলে না যান, জামাল মনে করিয়ে দেন সেটাও, ‘আশা করি, ক্রীড়াপ্রেমীরা আমারদের ফুটবল ম্যাচও দেখবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তান কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরি বাংলাদেশ ফুটবল দলকে রীতিমতো প্রশংসার সাগরে ভাসিয়েছেন। তাঁর কথা, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ হবে সাফ অঞ্চলের পরবর্তী শক্তি।’ কারণটা ব্যাখ্যাও করেন, ‘আমি ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছি। তখন আমি নেপালের কোচ। তখনকার চেয়ে এখন বাংলাদেশ দলে আরও বেশি তরুণ। আমি সব সময় তরুণদের সমর্থন করি। বাংলাদেশ দল এখন কোচের খেলার সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। এবার সাফের ফাইনালের খুব কাছে গিয়েছিল বাংলাদেশ।’

আফগানিস্তান কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরি

এরপর তাঁর সংযোজন, ‘সাফ অঞ্চলে ভারত অন্য স্তরে চলে গেছে। সাত-আট বছর আগের সময়টা ছিল মালদ্বীপের। আমি মনে করি, পরের পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের। ভারত বাদে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ এখন পরাশক্তি হবে, যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে।’

আফগানিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলছে ৩ ও ৭ সেপ্টেম্বর। সামনে বিশ্বকাপ প্রাক্‌–বাছাইয়ের প্রস্তুতি হিসেবেই ম্যাচ দুটিকে দেখছে দুই দল। আফগান কোচ বললেন, ‘এই দুটি ম্যাচই দলের খুবই কাজে আসবে।’

পরক্ষণেই মজা করে বলেন, ‘কিন্তু আমাকে কেউ এটা জিজ্ঞেস করবেন না যে কে জিতবে। আমি এখানে এসেছি বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে। প্রীতি ম্যাচ মানে প্রীতি ম্যাচ। আপনি ১০-০ গোলে জিততে পারেন, আবার ১০-০ গোলে হারতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি আমার দলকে প্রস্তুত করছি। আমি ছেলেদের কোনো চাপ দিচ্ছি না। বলেছি, উপভোগ করো।’

অনুশীলনে গা–গরম করছে আফগানিস্তান ফুটবল দল

আফগানিস্তান আসলে চাইছে, এই ম্যাচ দুটি থেকে নিজেদের দলীয় সমন্বয় গড়ে তুলতে। তাই তো কোচ বলেন, ‘ম্যাচ দুটি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কীভাবে খেলি, সেটা দেখার জন্য। এটা দেখে আমি বুঝতে পারব যে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে যেতে আমরা আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে। ২০২৭ এশিয়া কাপে আমরা খেলতে চাই।’ আফগানিস্তানের শক্তি তাদের ইউরোপভিত্তিক ১০ খেলোয়াড়। তবে এখানে এসেছেন আটজন।

সাফের পর এই প্রথম নামছে বাংলাদেশ। সামনে বিশ্বকাপ প্রাক্‌–বাছাইয়ে মালদ্বীপের সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সেই ম্যাচের প্রস্তুতি হিসেবেই আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলছে বাংলাদেশ। আর কালকের প্রথম ম্যাচ সামনে রেখে আফগানিস্তান কোচ যেমন বাংলাদেশকে আগামীর শক্তি বললেন সাফে, সেটার সঙ্গে কী বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা একমত হয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে।
কাবরেরা বলেছেন, ‘আমরা সাফে ভালো খেলেছি। এখন আমাদের সামনে আরও ভালো করার চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপ প্রাক্‌–বাছাইয়ের আগে আমরা শক্তিশালী দলের সঙ্গে খেলতে চেয়েছি। আফগানরা খুব শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। এই দুটি ম্যাচে আমাদের নিজেদের প্রমাণের ভালো সুযোগ আছে। আমি মনে করি, আমরা ভালো পারফর্ম করতে পারব।’

বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা

অধিনায়ক জামালও কণ্ঠ মেলান কোচের সঙ্গে। দলে অনেক তরুণ এসেছেন এবং তাঁরা মানিয়ে নিচ্ছেন জানিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের কথা, ‘মূল কথা হচ্ছে, সাফে যে মানের ফুটবল আমরা খেলেছি, সেটা ধরে রাখতে হবে। সেটা ধরে রাখা গেলে কাল ভালো ম্যাচ হবে। অনেক দিন পর আমরা ঢাকায় খেলছি (সর্বশেষ ঢাকায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে নেপালের সঙ্গে ২০২০ সালে করোনার ফাঁকে ১৩ ও ১৬ নভেম্বর। প্রথমটিতে ২-০ গোলে জয়, দ্বিতীয়টি গোলশূন্য)। ঢাকায় আবার খেলে আমি খুশি। কিংসের মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এটা একটা দারুণ ব্যাপার। কিংস অ্যারেনায় অনেক দর্শক পাব, আশা করি। বাংলাদেশে অন্য স্টেডিয়ামে গ্যালারি অনেক দূরে। এখানে খুব কাছে, যা আমাদের জন্য ভালো হবে।’