২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব–১৮ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ
২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব–১৮ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ

সাফ বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল মানেই ফাইনালে বাংলাদেশ

মেয়েদের সাফ ফুটবল মানেই যেন শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে বাংলাদেশ

সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরেন ব্যস্ত সময়ের ঘেরাটোপে থাকা গোলাম রব্বানীকে। একজন মজাও করেন, ‘মেয়েদের নিয়ে এত এত সাফল্য পেয়ে আপনি তো হিরো হয়ে গেলেন!’

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ কথাটা শুনে প্রতিক্রিয়া দেখান একটু অন্যভাবে। সাধারণত কেউ প্রশংসা করলে মানুষ খুশিই হয়। কিন্তু গতকাল পড়ন্ত বিকেলে বাফুফে ভবনের তৃতীয় তলার সংবাদ সম্মেলনকক্ষে গোলাম রব্বানী প্রশংসার জবাবে বললেন, ‘ভাই আমার হিরো হওয়ার দরকার নেই। আমি সাধারণ মানুষ, সাধারণই থাকতে চাই।’

কিন্তু চাইলেও তিনি ‘সাধারণ মানুষ’ হয়ে থাকতে পারছেন কই! আজই তো তাঁর আরেকবার ‘হিরো’ হয়ে ওঠার প্রবল সম্ভাবনা! কমলাপুর স্টেডিয়ামে মেয়েদের প্রথম অনূর্ধ্ব–২০ সাফ নারী ফুটবলের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে স্বাগতিক বাংলাদেশই এগিয়ে। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে দেশের নারী ফুটবলের মুকুটে যুক্ত হবে আরেকটি পালক। আরেকবার তাই বড় শিরোনাম হওয়ার হাতছানি মেয়েদের সামনে।

সাফ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ

সাফ বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলের অতীতের দিকে তাকালে এমন আশা বাড়াবাড়ি মনে হবে না। কল্পনায় উৎসবমুখর এক সন্ধ্যাই বরং ধরা দেয়। ছেলেদের জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের বিবর্ণ দশার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। ২০০৫ সালে করাচি সাফের পর আর কখনো ফাইনালেই ওঠেনি তারা।

ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে পড়া জামাল ভূঁইয়াদের ঘিরে ১৭ বছর ধরে চলছে হা–হুতাশ। সেই শূন্যতার হাহাকারের মধ্যেই বয়সভিত্তিক নারী সাফে পুরো ভিন্ন ছবি। ২০১৭ সালে সাফ বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল চালুর পর বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কোনো ফাইনালই হয়নি, হচ্ছে না আজও। সাফল্যের পথে হেঁটে দেশের ফুটবলে নতুন প্রাণের সঞ্চার করা দেশের নারী ফুটবলে এর চেয়ে সুখের আর কী হতে পারে!

ভুটানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ

পরিসংখ্যানও সেটাই বলে। বয়সভিত্তিক নারী সাফে আজ অষ্টম ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। লিগভিত্তিক খেলা হওয়ায় দুটি ফাইনাল ছিল অঘোষিত। অন্যদিকে বড়দের ছয় সাফের মধ্যে সাবিনা খাতুনদের খেলা দুটি ফাইনাল ধরলে সাফ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ফাইনাল খেলেছে ৯টি।

মজার ব্যাপার হলো, সাফ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের সব ফাইনালেই ছিলেন গোলাম রব্বানী। আধুনিক ফুটবলে কোচের আসা–যাওয়ার নিত্য খেলায় এই মানুষটি আশ্চর্য ব্যতিক্রম। ১৪ বছর ধরে নারী দলের কোচ হিসেবে তাঁর জায়গা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের অভিভাবক মানেই যেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁর গর্বিত কণ্ঠে শোনা যায়, ‘বয়সভিত্তিক সাফের সবগুলো ফাইনালই খেলতে পারা আমার কাছে বিরাট অনুপ্রেরণা। এতে প্রমাণ হচ্ছে আমরা এই অঞ্চলের মেয়েদের ফুটবলে একটা শক্তি, একটা জাগরণও বলতে পারেন।’

সাফ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের সব ফাইনালেই ছিলেন কোচ গোলাম রব্বানী

একটুও বাড়িয়ে বলেননি গোলাম রব্বানী। দিন দিন নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় মহিরুহ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ, যেখানে বয়সভিত্তিক স্তরে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কোনো ফাইনালই হয় না। আগের আটটি ফাইনালে এসেছে তিন শিরোপা। আজ সংখ্যাটা চারে নিতে চায় বাংলাদেশ।

যাঁদের হাত ধরে বাধার প্রাচীর পেরিয়ে সাফল্যের পর্বতে ওঠা, তাঁদেরই একজনকে নিয়ে গতকাল বাফুফে ভবন সংবাদ সম্মেলনের পরও উচ্ছ্বাসে ভাসল। ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে আলো কাড়া বাংলাদেশ অধিনায়ক শামসুন্নাহারের খেলার কৌশল থেকে শুরু করে তাঁর চুল—কৌতূহল সবকিছু নিয়েই। তারই এক ফাঁকে জানালেন, ‘সাফ নারী ফুটবলের সব ফাইনালই খেলেছি আমি।’

তবে ফাইনালে কয়টা গোল করেছেন, সেটা মনে নেই। মনে করার চেষ্টা করতে করতেই এসে পড়ে আরেক প্রশ্ন—সাফে ফাইনাল খেলা কি এখন সহজ মনে হয়? না, শামসুন্নাহারের তা মনে হয় না, ‘কোনো কিছুই সহজ নয়। ভালো খেলেই জিততে হবে, অর্জন করতে হবে।’

ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন শামসুন্নাহার

মেয়েরা বারবার ফাইনালে উঠছেন খেলাটার প্রতি তাঁদের নিবেদন আর মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই। ওদিকে ক্লাব ফুটবল থেকে কোটি টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া জামাল ভূঁইয়াদের কাছে সাফের ফাইনাল যেন স্বপ্ন। বন্ধ তালা খোলার চাবিটা এখন তাঁরা চাইতে পারেন মেয়েদের কাছে।