বাংলা ভালো বলতে পারলেও লিখতে পারেন না। তবে বাংলা ভাষা বা বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা এখন বেশ নিবিড়। জন্ম ও বেড়ে ওঠা জাপানের নাগোয়া শহরে হলেও মাতসুশিমা সুমাইয়া এখন পুরোদস্তুর বাংলাদেশি।
বাংলাদেশ দলের হয়ে সুমাইয়ার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে গত পরশু। কমলাপুর স্টেডিয়ামে নেপালের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে তাঁকে বদলি হিসেবে মাঠে নামান কোচ। তাতেই পূরণ হয়ে যায় সুমাইয়ার একটা স্বপ্ন। ‘ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের হয়ে খেলব। আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি। আমি ভীষণ খুশি,’ কমলাপুর স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে গতকাল বলছিলেন ২৩ বছরে পা দেওয়া সুমাইয়া।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলে সুমাইয়াই প্রথম প্রবাসী ফুটবলার, যিনি জাতীয় দলে সুযোগ পেলেন। ছেলেদের ফুটবলের জামাল ভূঁইয়া ও তারিক কাজীর কথা সবাই জানেন। ডেনমার্ক আর ফিনল্যান্ড থেকে এসে এ দুজন বাংলাদেশের জার্সিতে খেলছেন। মেয়েদের জাতীয় দলে এবার যোগ হলেন সুমাইয়া। বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বৈত পাসপোর্ট তাঁর। ফলে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে কোনো জটিলতা হয়নি। জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়েছে বাফুফেকে, এই যা।
সুমাইয়ার ফুটবল–দক্ষতা বেশ ভালো। ফুটবল নিয়ে নিজের কারিকুরির কিছু ছবি দিয়েছিলেন ফেসবুকে। সেটি দেখে ২০২১ সালে তাঁকে ডাকে বাফুফে। বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের সঙ্গে সুমাইয়া তখন ঢাকাতেই থাকতেন। মা মাতসুশিমা তোমোমিকে (জাপানি) নিয়ে একদিন আসেন বাফুফে ভবনে। বাফুফে তখন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, বাংলাদেশ দলে সুযোগ পেলে খেলবেন কি না। সুমাইয়াও সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেন, খেলবেন। এরপরই তাঁকে দলভুক্ত করেছে বসুন্ধরা কিংস। কিংসের জার্সিতে মেয়েদের গত লিগে খেলেছেন সুমাইয়া, গোলও আছে কয়েকটি।
গত বছর মালদ্বীপে দিভেহি সিফাইঙ্গে ক্লাবে সুমাইয়া খেলেছেন সাবিনা খাতুনের সঙ্গে। এ দুটি পর্বের পর বয়সভিত্তিক কোনো স্তরে না খেলেই সরাসরি জাতীয় দলে এসেছেন সুমাইয়া, পেয়েছেন ২০ নম্বর জার্সি। সুমাইয়া এমনিতে ‘নাম্বার ৯’ বা ‘নাম্বার ১০’ পজিশনের খেলোয়াড়। পরশু কোচ তাঁকে ফরোয়ার্ডেই নামিয়েছেন।
জাতীয় দলে অভিষেক হলেও একটু যেন অতৃপ্ত সুমাইয়া, ‘ম্যাচে ভালো পারফর্ম করতে পারিনি। প্রথমবার খেলতে নামায় একটু নার্ভাস লাগছিল।’ কিছুটা লাজুক সুমাইয়া কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য নন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তারপরও কমলাপুর স্টেডিয়ামে নারী দলের অনুশীলনের ফাঁকে বললেন, ‘২০০৯-১০ সালের দিকে আমি প্রথম আসি বাংলাদেশে। বাফুফে ভবনে জাতীয় দলের ক্যাম্পে আছি ছয় মাস ধরে। এর আগে বসুন্ধরা কিংসে খেলেছি যখন, বাসা থেকেই অনুশীলনে যেতাম। কিন্তু জাতীয় দলের ক্যাম্প একটু আলাদা। এই অভিজ্ঞতা আমাকে এগিয়ে দিয়েছে।’ সুমাইয়ার প্রিয় খেলোয়াড় সাবিনা।
মেয়েদের দলে আছেন কৃষ্ণা, তহুরা, সানজিদারা। তাঁদের টপকে সুমাইয়ার পক্ষে একাদশে সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। সুমাইয়া বলেন, ‘ওদের অনেক বছরের অভিজ্ঞতা। আমার তো নাগোয়ায় ফুটবল তেমন খেলা হয়নি।
ফুটবল খেলতেই বাংলাদেশে আসি। অনুশীলনে আরও ভালো করতে হবে। ক্যাম্পে আরও থাকতে হবে আমাকে। আমার ইচ্ছা বাংলাদেশকে লম্বা সময় সেবা দেওয়ার।’
জাতীয় দলে সুমাইয়ার অভিষেক ম্যাচটা পরিবারের কেউ দেখতে আসেননি। মা–বাবা ঢাকায় নেই। তবে সুমাইয়া কয়েক বছর ধরে ঢাকাতেই স্থায়ীভাবে থাকছেন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সেমিস্টার শেষ করেছেন। তবে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না।
সুমাইয়াকে কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদ্য বিদায়ী কোচ গোলাম রব্বানী। দেখেছেন নেপালের বিপক্ষে ম্যাচেও। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘সুমাইয়া গত লিগে ভালো করেছে। শারীরিকভাবে শক্ত–সামর্থ্য।
কিন্তু সানজিদা, তহুরাদের সঙ্গে ওর পার্থক্য অনেক। অন্যরা বয়সভিত্তিক খেলে এলেও সুমাইয়া সরাসরি জাতীয় দলে ঢুকেছে। ফলে অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে। কাজটা কঠিন, তবু আশা করি, সে দলের সঙ্গে মানিয়ে নেবে।’
সুমাইয়াও এই চ্যালেঞ্জটা জয় করেই এগোতে চান সামনে।