প্রেমিকা ব্রুনা বিয়ানকার্দি ও সন্তানদের নিয়ে এখন জীবনটা থিতু করেছেন নেইমার
প্রেমিকা ব্রুনা বিয়ানকার্দি ও সন্তানদের নিয়ে এখন জীবনটা থিতু করেছেন নেইমার

নেইমারের মনে হচ্ছে তিনি এখন সাবালক

ব্রাজিলে ১৮ বছর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হয়। সে হিসাবে নেইমার আরও ১৪ বছর আগেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন। তাহলে ৩২ বছর বয়সে এসে ব্রাজিলিয়ান তারকার এ কথা বলার কী অর্থ, ‘একসময় নাবালক ছিলাম, এখন সাবালক হয়েছি।’

আসলে নেইমার কথাটা বলেছেন তাঁর জীবনের দিকে তাকিয়ে। বয়সের মাপকাঠিতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া না হওয়ার হিসাব তো খাতা-কলমে। এর বাইরেও আরেকটি হিসাব আছে, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বয়স যেটাই হোক, একজন মানুষ কতটা পরিণত, সেটা তাঁর কাজকর্মে ও চিন্তাভাবনায় প্রতিফলন ঘটে। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেইমার এই দৃষ্টিকোণ থেকেই নিজের জীবন নিয়ে বলেছেন, তিনি এখন একজন পরিণত পুরুষ।

নেইমারের জীবনে উত্থান-পতন কম আসেনি। অমিত প্রতিভাধর, পেলে-রোনালদোদের উত্তরসূরি—এমন সব কথার মুকুট মাথায় নিয়ে পা রেখেছিলেন পেশাদার ফুটবলে। খুব অল্প বয়সেই হয়েছেন তারকা। সব প্রত্যাশা হয়তো পূরণ করতে পারেননি, কিন্তু অর্জনও তো কম নেই! আর সেই অর্জনের পথে একসময় বিতর্কও নিত্যসঙ্গী ছিল ব্রাজিল তারকার। ব্যক্তিগত কিছু সমস্যায় ভুগেছেন। একটা সময় ছিল যখন মাঝেমধ্যেই অমুক নারী কিংবা তমুক নারী নিজেকে নেইমারের প্রেমিকা বলে দাবি করছেন। ২০২৩ সালে সন্তানসম্ভবা প্রেমিকা ব্রুনা বিয়ানকার্দির বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমাও চাইতে হয় নেইমারকে। নৈশ ক্লাব, পার্টিতেও ভীষণভাবে মজেছিলেন একসময়। পিএসজিতে থাকতে নিয়মিতই জমকালো সব পার্টি আয়োজন করে সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু নেইমারের এই সময়ের কথায় বোঝা যায়, সেই নেইমার এখন অতীত। এখনকার নেইমার ব্যক্তিগত জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ সিরিয়াস।

প্রেমিকা ব্রুনা বিয়ানকার্দি, ছেলে দাভি লুকা ও মেয়ে মাভির সঙ্গে নেইমার

আল হিলাল তারকা এখন তিন সন্তানের পিতা। সাবেক প্রেমিকা ক্যারোলিন দান্তাসের গর্ভে ২০১১ সালে জন্ম নেয় তাঁর ছেলে দাভি লুকা। তাঁর আরেক প্রেমিকা আমান্দা কিম্বার্লির গর্ভে জন্ম নিয়েছে মেয়ে হেলেনা। বর্তমান প্রেমিকা ব্রুনা বিয়ানকার্দি তাঁকে আরেকটি মেয়ে (মাভি) উপহার দিয়েছেন। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম কিছুদিন আগে জানিয়েছে, নেইমার-বিয়ানকার্দি জুটি আরেকটি সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে নেইমারের ব্যক্তিগত জীবন এখন আর বিতর্ক নেই  বললেও চলে। আর ফুটবলে নেমেছেন মাঠে ফেরার পরীক্ষায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্রাজিলের হয়ে খেলতে নেমে চোটে পড়ে প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে ছিলেন নেইমার। গত বছর অক্টোবরে আল হিলালে ফিরে আবারও চোটে পড়েন। এখন আবার নেমেছেন মাঠে ফেরার লড়াইয়ে। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই নেইমার জানিয়েছেন, ২০২৬ বিশ্বকাপই হবে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। অতএব ক্যারিয়ারের শেষ অংশটুকু সাফল্যে রাঙাতে যতটুকু পরিণত হওয়া দরকার, নেইমার তাঁর মুখের কথায় ততটুকু হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘অনেক কিছুই পাল্টেছে। আমি বালক থেকে এখন সাবালক হয়েছি। এখন আমার পরিবার আছে। সন্তানেরা আছে।’

নেইমার এরপর বলেছেন, ‘ফেলে আসা বছরগুলোয় আমি অনেক কিছুই শিখেছি। অনেক কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছি। তবে সবকিছু পেরিয়ে যেতেও পেরেছি।’

আল হিলালের ম্যাচের দিন নেইমারের মেয়ে মাভির সাজ

বার্সেলোনার হয়ে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন নেইমার। পিএসজির হয়ে জিতেছেন লিগ আঁ। সান্তোসের হয়ে জিতেছেন কোপা লিবার্তাদোরেস। আল হিলালের হয়ে গত মৌসুমে জিতেছেন সৌদি প্রো লিগও। কিন্তু ব্রাজিলের জার্সিতে শুধুই ২০১৩ ফিফা কনফেডারেশনস কাপ। দেশকে জেতাতে পারেননি বিশ্বকাপ। জিততে পারেননি ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার ব্যালন ডি’অরও। আছে বারবার চোটে পড়ার বিতর্কও। প্রত্যাশার সব পূরণ করতে পারেননি, এমন আক্ষেপ তাই আছে নেইমারের ক্যারিয়ার নিয়ে। কিন্তু নেইমার নিজে কী মনে করেন?

শুনুন তাঁর মুখেই, ‘যা যা অর্জন করেছি, যে সব জায়গায় খেলেছি, এসব মিলিয়ে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আমি সুখী। অবশ্যই এই ভাবনাটা আসে যে আরও অনেক জায়গায় অনেক কিছুই করতে পারতাম। কিন্তু এটাও ফুটবলের অংশ। আপনি কখনোই সব ট্রফি জিততে পারবেন না। তাই এখন পর্যন্ত যা যা করতে পেরেছি, সেসব নিয়েই আমি খুব সুখী।’

সৌদি প্রো লিগের দল আল নাসরে খেলা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিছুদিন আগে একটি মন্তব্য করে বিতর্কের ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন। রোনালদো বলেছিলেন, ফ্রেঞ্চ লিগ আঁর তুলনায় সৌদি প্রো লিগ বেশি শক্তিশালী, খেলাও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। পিএসজি ছেড়ে ২০২৩ সালে আল হিলালে যোগ দেওয়া নেইমার কিন্তু রোনালদোর কথার সঙ্গে একমত, ‘সৌদি প্রো লিগের মান বাড়ছে। আমি যেটা বুঝি এটা লিগ আঁর চেয়ে ভালো।’

নেইমার তাঁর যুক্তির ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘লিগ আঁর ইতিবাচক অনেক দিক আছে। লিগটা খুব শক্তিশালী। আমি সেখানে খেলেছি, তাই জানি। কিন্তু সৌদি প্রো লিগের খেলোয়াড়েরা বেশি ভালো। সৌদি আরব আমাকে ইতিবাচকভাবে চমকে দিয়েছে। তাদের মানুষ, শহর ও সংস্কৃতির কথা বলছি। আমার মতে, দেশটি ক্রমাগত উন্নতি করছে। তারা ২০৩৪ বিশ্বকাপেরও আয়োজন করবে, যেটা অবিশ্বাস্য।’