ঠাসা সূচিতে চিড়েচ্যাপটা অবস্থা ফুটবলারদের। খেলোয়াড়েরা কথা বলতেও শুরু করেছেন এ নিয়ে। ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন ইউরোপের বড় বড় লিগে খেলা ফুটবলাররা। এবার ফুটবলারদের সংগঠন ফিফপ্রো ঘরোয়া লিগগুলোর সঙ্গে মিলে বিশ্ব–ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফার বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনে অভিযোগ করেছে। সোমবার করা অভিযোগে তারা দাবি করেছে, ফিফা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেই নতুন টুর্নামেন্ট চালু করেছে এবং পুরোনো টুর্নামেন্টের পরিধি বাড়িয়েছে।
ফিফপ্রো ইউরোপ, ক্লাবগুলোর সংগঠন ইউরোপিয়ান লিগস ও স্পেনের লা লিগা যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ফিফা ‘একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও টুর্নামেন্ট আয়োজকের ভূমিকা পালন করছে। এতে নিশ্চিত করেই স্বার্থের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়’।
ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলনে এ সংগঠনগুলো বলেছে, ‘ফিফা ইইউর আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সূচি প্রণয়নে নিজস্ব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।’
ফিফার আইন ও আচরণের কারণে ঘরোয়া লিগগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে খেলা খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যগত ও নিরাপত্তাঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে এতে।ফিফপ্রো ও ইউরোপিয়ান লিগস
ফিফপ্রো ফুটবলারদের বৈশ্বিক ইউনিয়ন। ইউরোপের ৩৩টি দেশের ১ হাজারের বেশি ক্লাবের সংগঠন ইউরোপিয়ান লিগস। ইউরোপিয়ান লিগসে ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সের ক্লাবগুলো থাকলেও নেই স্পেনের লা লিগার কোনো ক্লাব। তাই লা লিগা আলাদা পক্ষ হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ সুপার লিগ ও কিছুদিন আগে লাসানা দিয়ারাকে নিয়ে ইউরোপিয়ান আদালতের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে সংগঠনগুলো বলেছে, ‘ফিফার আইন ও আচরণের কারণে ঘরোয়া লিগগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে খেলা খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যগত ও নিরাপত্তাঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে এতে। ইউরোপিয়ান ফুটবল শিল্পকে বাঁচাতে ইউরোপিয়ান কমিশনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।’
ফিফার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ আলোচনা না করেই সূচি প্রণয়নের। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপ চালুর কথা বলা যায়। চলতি মৌসুম শেষে ২০২৫ সালের জুন-জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হবে সেই ক্লাব বিশ্বকাপ, যেখানে খেলার কথা ইউরোপের ১২টি ক্লাবের।
সেই টুর্নামেন্ট যখন হবে, সে সময়ে সাধারণত মৌসুম শেষে বিশ্রামে থাকেন খেলোয়াড়েরা। শুধু ২০২৫-ই নয়, ২০২৬ সালেও বিশ্রাম পাবেন না ফুটবলাররা। ৪৮ দলের বিশ্বকাপ যে হবে ২০২৬ সালের জুন-জুলাইয়ে।
খেলোয়াড়েরা মূলত ঠাসা সূচির কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির শঙ্কাতেই ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিতে যেতে চাচ্ছেন। ঘরোয়া লিগগুলোর বড় চিন্তা বেশি বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা খেলতে গিয়ে না ঘরোয়া ম্যাচ মিস করেন ফুটবলাররা। তাঁরা না খেললে স্বাভাবিকভাবে ব্র্যান্ড ভ্যালু হারাবে ক্লাবগুলো।
ফিফা অবশ্য এর আগেই এই সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে উল্টো লিগগুলোর দিকে আঙুল তুলে বলেছে, এগুলো ‘বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা ও ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়’। ক্লাবগুলোও যে ঠাসা সূচির জন্য দায়ী, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছিল ফিফা, ‘লিগগুলো প্রীতি ম্যাচ ও গ্রীষ্মকালীন সফরে ব্যস্ত থাকে ওই সময়। দল নিয়ে বিশ্বজুড়েই ঘুরে বেড়ায় তারা।’