সমতায় শেষ রিয়াল-সিটি লড়াই
সমতায় শেষ রিয়াল-সিটি লড়াই

রিয়াল মাদ্রিদ ১: ১ ম্যান সিটি

ভিনিসিয়ুস ও ডি ব্রুইনার দুর্দান্ত গোল, সমতায় রিয়াল-সিটি দ্বৈরথ

ম্যাচের আগেই সেমিফাইনাল নিয়ে বলতে গিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বলেছিলেন, ‘লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হবে ম্যানচেস্টারে।’ তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বানীই এবার সত্যি হতে যাচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জেতেনি কেউই।

প্রথমার্ধে স্রোতের বিপরীতে ভিনিসিয়ুসের দুর্দান্ত গোলে রিয়াল এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ জবাব দিয়ে সিটিকে সমতায় ফেরান কেভিন ডি ব্রুইনা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ড্র হয়েছে ১-১। আগামী বুধবার ইতিহাদে দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হবে এ দুই দল।

প্রথমার্ধে ভিনির করা গোলটিই ছিল সিটির পোস্ট লক্ষ্য করে সেই অর্ধে রিয়ালের একমাত্র শট। গোলটি হওয়ার পরপরই ‘জাদুকর’ ভিনিসিয়ুসকে প্রশংসায় ভাসাতে শুরু করেন ধারভাষ্যকারেরা। সঙ্গে মনে করিয়ে দেন ভিনিকে নিয়ে বলা আনচেলত্তির কথাগুলোও। এই উইঙ্গারকে নিয়ে আনচেলত্তি বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফল নির্ধারক খেলোয়াড়।’ চাপের মুখে দলকে গোল এনে দিয়ে গুরুর সেই কথার স্বার্থকতায় যেন প্রমাণ করেন ভিনি।

রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে দিয়ে ভিনির উল্লাস

ভিনির গোলে রিয়ালের দেখা জয়ের স্বপ্ন ভেঙে দেন কেভিন ডি ব্রুইনা। দ্বিতীয়ার্ধে ভিনির দুর্দান্ত গোলের জবাব দারুণ এক গোলেই দেন এ বেলজিয়ান তারকা। তাঁর এই গোলই সমতায় রেখেছে ম্যাচটাকে। যেখান থেকে ইতিহাদে ফের শুরু করবে দুই দল।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সিটির শুরুটা ছিল দারুণ ইতিবাচক। গতিময় ও পাসিং ফুটবলেরর কৌশলে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই গোলকে পাখির চোখ করে ইতিহাদের ক্লাবটি। ম্যাচের ৭ মিনিটেই রিয়ালের রক্ষণে হুমকি তৈরি করেছিলেন আর্লিং হলান্ড। পরের মিনিটে দারুণ এক সেইভে রিয়ালকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেন কোর্তোয়া।

ম্যাচের প্রথম ১১ মিনিটেই ৬৬ শতাংশ বলের দখল ছিল সিটির। বল পায়ে তারা রীতিমতো তটস্থ করে রেখেছিল স্বাগতিকদের। এর মাঝে মাঝমাঠে রিয়াল রদ্রিকে বেশ জায়গা ছেড়ে দিয়েছিল, যার সুবিধা নিয়ে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি সিটি। ১৮ মিনিটে গিয়ে প্রথম আক্রমণে যাওয়ার সুযোগ পায় রিয়াল। যদিও বেনজেমার সেই প্রচেষ্টা ফল আনার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

ডি ব্রুইনার গোল উদ্‌যাপন

২৫ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের দুর্দান্তভাবে বাড়ানো বল বেনজেমার কাছে পৌছানোর আগেই দারুণভাবে ক্লিয়ার করেন রুবেন দিয়াজ। শুরুর চাপ সামলে এরপর ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে রিয়াল। আক্রমণেও যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু সিটির ‍দুর্দান্ত প্রেসিং ফুটবলের সঙ্গে পারছিল না ‘লস ব্লাঙ্কোস’ শিবির।

৩৪ মিনিটে প্রতি-আক্রমণ থেকে দারুণ এক পাস দিয়েছিলেন ফেদে ভালভার্দে। তবে হাত লাগিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় হ্যান্ড বলের ফাঁদে পড়েন বেনজেমা। কিন্তু এক মিনিট পর ঠিকই সিটির সমস্ত চেষ্টায় পানি ঢেলে বার্নাব্যুকে উল্লাসে মাতিয়ে তুলেন ভিনিসিয়ুস। কামাভিঙ্গার পাস থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে অবিশ্বাস্য বুলেট গতির শটে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান তারকা। সিটির তৈরি করা চাপ থেকে ম্যাচকে বের করে রিয়ালের হাতে তুলে দিতে এমন একটি গোলেরই যেন প্রয়োজন ছিল।

ভিনির এই গোল ম্যাচ ও গ্যালারির আবহই যেন পুরোপুরি বদলে দেয়। শুরুতে সিটির চাপে কিছুটা মুষড়ে পড়া বার্নাব্যুর গ্যালারির যেন মুহূর্তের মধ্যে জেগে ওঠে। এই গোলের পর বদলে যায় ম্যাচের মোমেন্টামও। সিটির কাছ থেকে ম্যাচের লাগামটা তখন নিজেদের হাতেই নিয়ে নেয় রিয়াল। সিটি অবশ্য সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়েই চেষ্টা করে। তবে তাদের কোনো প্রচেষ্টায় রিয়ালের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুই দলই কিছুটা শারীরিক ফুটবল খেলা শুরু করে।

ম্যাচ শেষে হাত মেলাচ্ছেন আনচেলত্তি ও গার্দিওলা

বিরতির পর ৪৯ মিনিটে ওয়ান টাচ ফুটবলে দারুণ এক আক্রমণে যায় রিয়াল। সিটি ডি-বক্সে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে পড়ে শটও নিয়েছিলেন বেনজেমা। তবে শেষ পর্যন্ত সেই শটে জালের দেখা পায়নি রিয়াল।

৫২ মিনিটে রিয়াল ডি-বক্সে ঢুকে গোলের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন ডি ব্রুইনা। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে দারুণভাবে স্বদেশি মিডফিল্ডারকে ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া। ৫৫ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন হলান্ড। কিন্তু হলান্ডের শটকে রক্ষণের জাদু দেখিয়ে থামিয়ে দেন ডেভিড আলাবা।

৬৭ মিনিটে ভিনির গোলের জবাবটা দুর্দান্ত এক গোলে দিয়েই শোধ করেন ডি ব্রুইনা। ডি-বক্সের বাইরে ইলকাই গুন্দোয়ানের কাছ থেকে বল পেয়ে বিদ্যুৎ গতিতে শট নেন ডি ব্রুইনা। থামানো দূরে থাক, কোর্তোয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জড়ায় জালে। এই গোলে সমতা ফেরে ম্যাচে। এরপর পর পোস্টের কাছাকাছি জায়গা থেকে নেওয়া বেনজেমার হেড দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন এদেরসন। শেষ দিকে এক হাতে চুয়ামেনির আরেকটি প্রচেষ্টা ফেরান সিটি গোলরক্ষক।

ম্যাচের শেষ পর্যায়ে সিটির রক্ষণে বেশ চাপ তৈরি রিয়াল। ঘরের মাঠে জয় তুলে নিতে মরিয়া ছিল তারা। কিন্তু এদেরসন-দেয়াল আর টপকাতে পারেনি তারা। ড্র নিয়েই ছাড়তে হয়েছে মাঠ।