খেলোয়াড় রপ্তানিতে সবার ওপরে ব্রাজিল
খেলোয়াড় রপ্তানিতে সবার ওপরে ব্রাজিল

ফুটবলার রপ্তানি—তরুণে এগিয়ে ফ্রান্স, ‘বুড়ো’তে আর্জেন্টিনা, সব মিলিয়ে ব্রাজিল

বক্স অঞ্চলের একটি ক্লাব ওয়েলস কোচের অধীনে ডাচ ও তুর্কি খেলোয়াড়দের মাঠে নামাচ্ছে। অন্যদিকে মলদোভিয়ান একটি ক্লাব কিনে নিয়ে আসছে নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়দের। আপনি যেখানেই তাকান, হঠাৎ আপনার মনে হবে, ফুটবল ইতিহাসের ডাস্টবিনে জাতীয়তাবাদী সীমানা ও পরিচয় ভেসে গেছে—ফুটবল–গবেষক ফ্রাঙ্কলিন ফয়ের তাঁর লেখা ‘হাউ সকার এক্সপ্লেইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইয়ে ফুটবলের বিশ্বায়নকে এভাবেই সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছেন।

ফুটবলের বিশ্বায়নের এই ধারা কোন পথ থেকে কোন পথে প্রবাহিত হয়েছে, সেটিই এবার অঙ্কের হিসাবে তুলে এনেছে ফুটবলকেন্দ্রিক গবেষণা সংস্থা সিআইইএস। বিশ্বব্যাপী ১৩৫টি লিগের (৮৩টি ইউরোপের এবং ৫২টি অন্য মহাদেশের) ২ হাজার ২০০টি ক্লাবের মূল দলে খেলা ৬২ হাজার ৬১০ ফুটবলারের শিকড় অনুসন্ধান করেছে সংস্থাটি; যেখানে প্রবাসী ফুটবলারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪০৫ জন।

এখানে প্রবাসী বলতে বোঝানো হয়েছে সেসব খেলোয়াড়কে, যাঁরা নিজের অ্যাসোসিয়েশনের, মানে যেখানে তাঁরা বেড়ে উঠেছেন তার বাইরে গিয়ে খেলেন। মূলত বিদেশি ক্লাবগুলো তাঁদের কিনে নিয়ে যায়। সিআইইএসের এই গবেষণায় ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সময়কালকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা। সব মিলিয়ে এই লাতিন পরাশক্তিদের ১ হাজার ২৮৯ জন খেলোয়াড় নিজ দেশের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে খেলছেন। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, যাদের ১ হাজার ৩৩ জন খেলোয়াড় বিভিন্ন দেশের ক্লাবে আছেন।

বিশ্বব্যাপী বুড়ো খেলোয়াড় সরবরাহে এগিয়ে আর্জেন্টিনা

ব্রাজিল ও ফ্রান্সের পর তৃতীয় স্থানে থাকা দেশ কাতার বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা। তাদের ৯০৫ জন খেলোয়াড় আছে প্রবাসী ফুটবলারের তালিকায়। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে তালিকার ওপরের দিকে আছে ইংল্যান্ড, স্পেন ও কলম্বিয়া।

লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, ব্রাজিল সব মিলিয়ে শীর্ষে থাকলেও তরুণ খেলোয়াড় সরবরাহে সবার ওপরে কিন্তু ফ্রান্স। অনূর্ধ্ব–২৩ বছর বয়সী ২০২ জন ফরাসি খেলোয়াড় বিশ্বের বিভিন্ন ক্লাবের মূল দলে খেলছেন। ফ্রান্সের পর এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল। যাদের ১৭৪ জন অনূর্ধ্ব–২৩ বছর বয়সী খেলোয়াড় খেলছেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্লাবে। আর্জেন্টাইন অনূর্ধ্ব–২৩ খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশ্বব্যাপী খেলছেন ৯২ জন।

তবে ‘বুড়ো’ তথা ৩০ বা তার বেশি বয়সী খেলোয়াড় সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করেছে তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। বিশ্বের বিভিন্ন ক্লাবে খেলছেন, আর্জেন্টিনার এমন ৩১৭ জন খেলোয়াড়ের বয়স ৩০ বা এর বেশি। এই ক্যাটাগরিতে ৩০৮ জন খেলোয়াড় নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল। আর ফ্রান্সের খেলোয়াড় ২১৩ জন।

২৩ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ৪১১ জন খেলোয়াড় এসেছে ব্রাজিল থেকে। যেখানে ব্রাজিলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্স (৩৩৬) ও আর্জেন্টিনা (২৩৬) বেশ পিছিয়েই আছে। ২৭ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যেও বাকিদের চেয়ে এগিয়ে ব্রাজিল (৩৯৬)। এরপর আছে ফ্রান্স (২৮২) ও আর্জেন্টিনা (২৭০)।

তরুণ খেলোয়াড় সরবরাহে এগিয়ে ফ্রান্স

বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ যথারীতি আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের নিয়ে। বিশ্বব্যাপী খেলা বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে ৩০.২ শতাংশই আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। পরের তিন স্থানে যথাক্রমে ডিফেন্ডার (২২.৬ শতাংশ) মিডফিল্ডার (২১.৫ শতাংশ) ও গোলরক্ষক (১৪.৯ শতাংশ)।

মোট সংখ্যা বিবেচনায় ব্রাজিল শীর্ষে থাকলেও ২০১৭ সালের পর থেকে খেলোয়াড় সরবরাহে এগিয়ে গেছে ফ্রান্স। ২০১৭ সালে ফ্রান্সের খেলোয়াড় ছিল ৭৬৮ জন। ২৬৫ জন বেড়ে এখন সেই সংখ্যা ১০৩৩। ২০১৮ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেশটি থেকে এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন ক্লাবে খেলোয়াড় আসার হার ৩৪.৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে ব্রাজিলের খেলোয়াড় সংখ্যা ছিল ১১৭৭ জন। যা ১১২ জন বেড়ে এখন এখন ১২৮৯।

ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের সবচেয়ে ২১৩ জন খেলছেন পর্তুগালের ক্লাবগুলোতে। ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের পর্তুগালমুখী হওয়ার মূল কারণ ভাষা। পর্তুগালের মতো ব্রাজিলেরও প্রধান ভাষা পর্তুগিজ। ভাষাগত মিলের কারণে পর্তুগিজ লিগে খেলা নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের বাড়তি আগ্রহ কাজ করে। পর্তুগালের পর ব্রাজিলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৯ জন খেলোয়াড় খেলছেন জাপানে।

দুইয়ে থাকা ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় লুক্সেমবার্গে। ইউরোপিয়ান দেশটিতে ফ্রান্সের ১২৪ জন খেলোয়াড় খেলছেন। লুক্সেমবার্গের পর ফরাসি খেলোয়াড়দের দ্বিতীয় পছন্দের গন্তব্য ইতালি। সেখানে ৮৮ জন ফরাসি ফুটবলার খেলছেন। আর আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের পছন্দের দেশ চিলি। প্রতিবেশী দেশটিতে বর্তমানে খেলছেন ১৩৮ জন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়। আর্জেন্টাইনদের দ্বিতীয় পছন্দের গন্তব্য স্পেন; যেখানে বর্তমানে খেলছেন দেশটির ৭০ জন খেলোয়াড়।