ক্লাব তিনটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
ক্লাব তিনটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও চট্টগ্রাম আবাহনীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

১৯ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলোয়াড় নিবন্ধন। কিন্তু কাল ৩ দিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছে ফিফা। ২২ আগস্টের মধ্যে দেশি–বিদেশি খেলোয়াড়দের নাম বাফুফের কাছে জমা দিতে হবে ক্লাবগুলোকে। আর ঠিক এই সময় এসে ঘরোয়া শীর্ষ ফুটবলে বড়সড় সংকটের পদধ্বনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন–পরবর্তী অবস্থায় প্রিমিয়ার লিগের ১২টি ক্লাবের মধ্যে শেখ জামাল ধানমন্ডি, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র আসন্ন ঘরোয়া মৌসুমে খেলবে না বলেই শোনা যাচ্ছে। ক্লাব দুটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো দেয়নি। কিন্তু পরিবর্তিত অবস্থায় ক্লাব দুটি চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।

এতেই ধরে নেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত দুই দল পেশাদার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ও শেখ রাসেলকে নতুন মৌসুমে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর আগেই ক্লাব দুটি স্থানীয় খেলোয়াড় সংগ্রহ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলছিল। দেশের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষণা করছিল দল দুটিকে এবং তাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হচ্ছিল শেখ জামাল-শেখ রাসেল। জানা গেছে, সেই প্রতিষ্ঠান আর আগ্রহী নয় দুটি ক্লাব পরিচালনায়।

প্রিমিয়ার লিগের আরেক দল চট্টগ্রাম আবাহনীর দল গড়াও নিশ্চিত নয়। আর্থিক সংকটের কথা বলে গত মৌসুমে চট্টগ্রাম আবাহনী দলবদলের শেষ মুহূর্তে তৎপর হয়ে কোনোমতে একটা দল গড়ে। কিন্তু এবার দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালা বদলের ক্লাবটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েছেন। তারপরও বাফুফের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব, চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর সঙ্গে। শামসুল হক বাফুফেকে বলেন, চট্টগ্রাম আবাহনী নাকি দল গড়বে, তবে ক্লাবটির ম্যানেজার সাবেক ফুটবলার আরমান আজিজ তেমন কোনো লক্ষণই দেখছেন না, ‘ক্লাব এখনো আমাকে কিছু বলেনি। নাটকীয় কোনো নির্দেশ না এলে দল গড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’

২০১৪–১৫ ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল

শেখ রাসেলের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ক্লাবটির অর্থ পরিচালক ফখরুদ্দিনের ফোন বন্ধ। দল গড়ার কাজটা মূলত তিনিই দেখেন। আজ ক্লাবের একটি সভা আছে, সেখান থেকে আসবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে আবাহনী লিমিটেড থেকে এবার শেখ রাসেলে যাওয়া জাতীয় দলের ডিফেন্ডার রহমত মিয়া আভাস দিয়েছেন ক্লাবটির না খেলারই, ‘ক্লাবের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুনতে পাচ্ছি ক্লাব নাকি খেলবে না।’

একই কথা বলেছেন এ মৌসুমে শেখ রাসেলে প্রধান কোচ হিসেবে ফিরে আসা প্রধান কোচ জুলফিফার মাহমুদও, ‘৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের রাতেই শেখ রাসেল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়ে দেয়, অন্য পথ দেখতে।’

ওদিকে শেখ জামালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন মৌসুমে না খেলার দিকেই এগোচ্ছে তারা। ক্লাব দুটির ভবিষ্যৎই সংশয়াচ্ছন্ন। শেখ পরিবারের দুই সদস্যের নামে গড়া ক্লাব দুটি টিকে থাকবে? নাম বদল করে নতুন পৃষ্ঠপোষকের হাত ধরে ফিরবে? এমন প্রশ্ন ঘুরছে ফুটবলাঙ্গনে।

শেখ জামালের এ মৌসুমে খেলতে না চাওয়ার পেছনে ৫ আগস্ট ক্লাবটিতে দুর্বৃত্তদের ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজের ব্যাপারটাও সামনে আনছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একই ঘটনা ঘটেছে শেখ হাসিনার আরেক ভাই প্রয়াত শেখ কামাল প্রতিষ্ঠিত আবাহনী লিমিটেডে, হামলা-লুটপাট হয়েছে করপোরেট ক্লাব ফর্টিস এফসিতেও। তবে সংকট কাটিয়ে ক্লাব দুটি খেলবে। আবাহনী পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ জানিয়েছেন, ‘আবাহনী ৫২ বছর ধরে দল গড়ছে। আরও ৫২ বছর গড়বে।’

প্রিমিয়ার লিগের বাকি ক্লাবগুলোও দল গড়ার কথা। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ারে ওঠা ফকিরেরপুল ইয়ংমেনসের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, স্থানীয় খেলোয়াড় নিয়ে তাঁরা মোটামুটি একটা দল দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত অবস্থায় বড় সংকট দেখা দিয়েছে বিদেশি সংগ্রহে। বিদেশি ফুটবলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি জানিয়ে রহমতগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ হামিদ বলছেন, ‘দেশি ফুটবলার মোটামুটি নিয়েছি আমরা। কিন্তু কোনো বিদেশি নিতে পারিনি। কিংস বাদে অন্যদেরও প্রায় একই অবস্থা। এ অবস্থায় এ মৌসুমটা শুধু দেশি খেলোয়াড় নিয়ে খেলার প্রস্তাব আমাদের। বাফুফের সবার সঙ্গে বসা উচিত ছিল। সামনে কী হবে, অন্ধকারে আছি।’

আবাহনী প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়

চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন প্রায় শ খানেক খেলোয়াড়, যাঁরা শেখ জামাল, শেখ রাসেল, চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলতে পারতেন। এই খেলোয়াড়দের এখন কী হবে, এমন হাহাকার বাফুফের সদস্য ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার আমের খানের। তাঁর কথা, ‘ওই খেলোয়াড়েরা এদিক-ওদিক দৌড়ঝাঁপ করছে, ওরা হতাশ। এর মধ্যে নামীদামি অনেকে আছে। কী হবে ওদের, জানি না। একটা সংকট ধেয়ে আসছে। এবার লিগে কয়টা ক্লাব খেলবে নিশ্চিত নই। অবনমন হবে কি না, তা–ও জানি না।’

পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে এবার মৌসুম সূচক স্বাধীনতা কাপ না–ও হতে পারে, মৌসুম সংক্ষিপ্ত করে শুধু লিগ আর ফেডারেশন কাপ। ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে বাফুফের ভাবনা জানতে বাফুফের সহসভাপতি ও পেশাদার লিগ কমিটির সভাপতি ইমরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।