প্রতিপক্ষের জালে ধারাবাহিকভাবে গোলের পর গোল করছে বার্সা। সমর্থকেরা এমন বার্সাকেই দেখতে চান। গতকাল রাতে ইনিগো মার্তিনেজের গোলের পর
প্রতিপক্ষের জালে ধারাবাহিকভাবে গোলের পর গোল করছে বার্সা। সমর্থকেরা এমন বার্সাকেই দেখতে চান। গতকাল রাতে ইনিগো মার্তিনেজের গোলের পর

এটা বার্সেলোনা নাকি গোলের মেশিন

বেলগ্রেডের রেড স্টার স্টেডিয়ামে গতকাল শেষ বাঁশি বাজার পর প্রশ্নটি উঠেছিল সিবিএস স্পোর্টসের ম্যাচ–পরবর্তী বিশ্লেষণে। কোচ হান্সি ফ্লিকে কি বার্সেলোনায় নতুন যুগ শুরু হয়েছে? থিয়েরি অঁরি অবশ্য তা মনে করেন না। ফরাসি কিংবদন্তির মতে, ফ্লিকের বার্সার ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন সাবেক জাভি হার্নান্দেজ। লামিনে ইয়ামাল থেকে বার্সার বর্তমান দলটির বেশ কিছু খেলোয়াড়কে মূল দলে তুলে এনেছেন জাভি। দুই বছর ধরে সবাই একসঙ্গে খেলায় ছন্দ আসাই স্বাভাবিক। আর সেই ছন্দেই কুপোকাত হচ্ছে প্রতিপক্ষ।

কেমন কুপোকাত আর কেন নতুন যুগ শুরুর কথা বলা হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই আপনার জানা। একদম সাম্প্রতিকতম উদাহরণ থেকে শুরু করা যাক। চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতে রেড স্টার বেলগ্রেডকে তাঁদের মাঠে ৫-২ গোলে হারিয়েছে বার্সা। এটা হলো কাতালান ক্লাবটির প্রতিপক্ষকে গোলের মালা উপহার দেওয়ার সর্বশেষ নজির।

৫৫
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে ১৬ ম্যাচে বার্সার গোল সংখ্যা ৫৫ (ম্যাচপ্রতি ৩.৪ গোল)। লা লিগায় ১২ ম্যাচে ৪০ গোল, চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪ ম্যাচে ১৫ গোল।

নতুন যুগের প্রসঙ্গটি তো আরও সহজ। লিওনেল মেসি থাকতে বার্সা যে যুগ কাটিয়েছে, সেটি শেষ হয়েছে ২০২১ সালেই। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি সে বছর ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে যাওয়ার পর নতুন এক প্রজন্মের মাধ্যমে নতুন এক যুগ শুরুর অপেক্ষায় ছিল বার্সা। জাভির কোচ হিসেবে গত বছর লা লিগা জয়কে যদি সেই নতুন যুগ শুরুর প্রসববেদনা বলা হয়, তাহলে তাঁর জায়গায় ফ্লিকের হাতে সেই যুগের উন্মেষ ঘটেছে।

টানা ৭ ম্যাচ জয়ের পথে এমন উদ্‌যাপনই মানায় বার্সার

চাইলে কেউ কেউ এই যুগের একটি স্লোগানও ঠিক করতে পারেন—গোল, গোল, গোল চাই, গোল ছাড়া কথা নাই! প্রমাণ চাই? শুনুন তবে—গত ২৮ সেপ্টেম্বর লা লিগায় ওসাসুনার কাছে ৪-২ গোলে হারের পর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলেছে বার্সা। সব কটি ম্যাচেই ন্যূনতম ৩টি করে গোল করেছে ফ্লিকের দল। বার্সার সর্বশেষ গোল–বন্যার এমন নজির দেখা গেছে ২০১৭ সালে, যখন মেসি ছিলেন।

এবার দৃশ্যপট থেকে মেসিকে বাদ দিন। তাহলে ব্যাপারটা আরও অনেক পিছিয়ে যাবে। মেসিহীন বার্সার টানা ৭ ম্যাচে ন্যূনতম ৩ গোল করার সর্বশেষ নজির ১৯৬০ সালে। অন্যভাবে বললে ১৯৬০ সালে মার্চের পর থেকে বার্সা এর আগে টানা ৭ ম্যাচে কখনো ন্যূনতম ৩টি করে গোল করতে পারেনি—মেসিকে বাদ দিলে তালিকাটা এমন দাঁড়ায়।

১৯৫৯-৬০ সালে হেলেনিয়ো হেরেইরার সেই বার্সা জিতেছিল লা লিগা। সেই মৌসুমের পর ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতায় এই প্রথম টানা তিন ম্যাচে ন্যূনতম ৪টি করে গোল করল ফ্লিকের বার্সা। আর যদি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মৌসুমের এ পর্যন্ত বার্সার পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়, তাহলে এমন কিছুর সর্বশেষ নজির খুঁজতে আরও পেছনে তাকাতে হবে।

দল দারুণ করছে, কারণ সবাই ফুটবল খেলতে ভালোবাসে। যেকোনো দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভালোবাসে।
হান্সি ফ্লিক, বার্সেলোনা কোচ

স্লোভাক কোচ ফার্দিনান্দ দাউচিকের অধীনে ১৯৫০-৫১ মৌসুমে প্রথম ১৬ ম্যাচে ৫৪ গোল করেছিল বার্সা। ফ্লিকের বার্সা সেটা পেছনে ফেলেছে গতকাল রাতে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে ১৬ ম্যাচে বার্সার গোল সংখ্যা ৫৫ (ম্যাচপ্রতি ৩.৪ গোল)। লা লিগায় ১২ ম্যাচে ৪০ গোল, চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪ ম্যাচে ১৫ গোল।

বার্সার মাস্টারমাইন্ড কোচ হান্সি ফ্লিক

এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পর স্বাভাবিকভাবেই ফ্লিকের খুশি হওয়ার কথা। সংবাদ সম্মেলনে জার্মান কোচের কণ্ঠে সেই রেশই ঝরল। টানা ৭ ম্যাচ (২৯ গোল) জয়ের ধারায় থাকা এবং গোলের পর গোল করাকে ‘নিজস্ব ভাষা’ বলেই মনে করেন ফ্লিক, ‘পারফরম্যান্স সত্যিই খুব ভালো। দলের খেলা সত্যিই উপভোগ করছি এবং আমার মতে ফলগুলোই নিজস্ব ভাষায় সব বলে দেয়।’

ফ্লিক তাঁর দলের মানসিকতা বুঝিয়েছেন এভাবে, ‘দল দারুণ করছে, কারণ সবাই ফুটবল খেলতে ভালোবাসে। যেকোনো দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভালোবাসে। সেরাদের সেরা, এমন যেকোনো দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পছন্দ করে তারা। আমরা এ ফর্মটা ধরে রাখতে চাই এবং সে জন্য কঠোর পরিশ্রমও করছি।’