‘আজ আমাদের সুখের দিন’

বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়াম থেকে ৩০ মিনিটের পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ দলের হোটেল। মালদ্বীপকে ৩–১ গোলে হারিয়ে দ্রুতই বাংলাদেশকে হোটেলে ফিরতে হয়েছে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য খালি করে দিতে হয়েছে মাঠ। বাংলাদেশের ফুটবলাররা অবশ্য বেশ খুশিমনেই মাঠ ছেড়েছেন। ২০০৩ সালের পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রথম জয় বলে কথা! সাফের সেমিফাইনালের দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে আছে বাংলাদেশ। রাকিব-তারিক-মোরসালিনদের কাছে আজ সন্ধ্যাটা তাই আনন্দময়ই ছিল।

কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন আক্রমণাত্মক ফুটবল। একটা উদ্যম ছিল খেলোয়াড়দের মধ্যে। হঠাৎ গোল খেলেও দারুণভাবে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ। খেলা দেখে খুশি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ম্যাচের পর ফোন করেন ম্যানেজার আমের খানকে।

ধন্যবাদ জানাচ্ছি টিম ম্যানেজমেন্টকে, যারা আমার ওপর ভরসা রেখেছে। টিমমেটরা সমর্থন দিয়েছেন। আমি আজ সিরিয়াস ম্যাচ খেলেছি এবং গোল করতে পেরেছি
রাকিব হোসেন

কী বলেছেন সভাপতি, তা জানান আমের, ‘লাউডস্পিকারে সভাপতির কথা সবাইকে শুনিয়েছি। তিনি সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর বলেছেন, ভুটানকে হারাতে হবে। মাঠের বাইরের অন্য ব্যাপারগুলো দেখার আশ্বাস দিয়েছেন নিজে থেকেই। আসলে জিতলে অনেক ভালো লাগে। আমার তো মনে হচ্ছে, আজ আমাদের সুখের দিন।’

বাংলাদেশের গোল উদযাপন

‘সুখের দিন’ এনে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন। চোট কাটিয়ে লেবানন ম্যাচে বদলি নেমেছিলেন শেষ দিকে। বলার মতো কিছু করতে পারেননি সেদিন। তবে আজ একাদশে সুযোগ পেয়ে দারুণ খেলেছেন রাকিব। বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরানো গোলটা তাঁরই। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এটি তাঁর প্রথম গোল। এর আগে গত বছর কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচে গোল করেছিলেন।

জয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত রাকিব ম্যাচ শেষে বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাচ্ছি টিম ম্যানেজমেন্টকে, যারা আমার ওপর ভরসা রেখেছে। টিমমেটরা সমর্থন দিয়েছেন। আমি আজ সিরিয়াস ম্যাচ খেলেছি এবং গোল করতে পেরেছি।’

সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের খেলার যে একটা পরিবর্তন এসেছে, সেটাও বললেন রাকিব, ‘আজ জেতায় খুবই ভালো লাগছে। আগে আমরা লম্বা বল খেলতাম, এখন বিল্ডআপ ফুটবল খেলছি। পুরো দলই আগের চেয়ে বদলেছে, আক্রমণাত্মক খেলেছে।’

বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন

মালদ্বীপের সঙ্গে জয় নিয়ে বেশি আনন্দ করতে চান না জানিয়ে রাকিব তাকাতে চাইলেন সামনে, ‘(ভুটানের বিপক্ষে) পরের ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচ জিততে চাই। আমাদের দেশে যত দর্শক আছেন, তাঁরা আজ যেভাবে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, সামনের ম্যাচে এর চেয়ে বেশি সমর্থন দেবেন আশা করি।’

কোচ হাভিয়ের কাবরেরা হোটেলে ফিরেই আবার স্টেডিয়ামে গেছেন লেবানন-ভুটান ম্যাচ দেখতে। কিছুটা স্বস্তি পেলেন অবশেষে। আগের দিনই কোচ বলেছিলেন, মালদ্বীপকে হারাতে সেরা ফুটবল খেলতে হবে বাংলাদেশকে। কাজে লাগাতে হবে সুযোগ। মালদ্বীপ ম্যাচের একাদশ ও ছক, দুটোই বদলে ফেলেন কোচ।

বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা

সবকিছুই তাঁর পরিকল্পনামতো হয়েছে মাঠে। ম্যাচ শেষে কাবরেরার কণ্ঠে তাই উচ্ছ্বাস, ‘এই জয় আমাদের দলীয় চেষ্টার ফল। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করেছে। আমি ছেলেদের বলেছি, প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধে দাপট নিয়ে শুরু করো। বলেছি, মালদ্বীপকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ দেওয়া যাবে না। দুই গোলের পর বলেছি, চলো, আরেকটি গোল করি। তখন আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে আরও অন্তত দুটি গোল করার সামর্থ্য আছে আমাদের। আমরা যে জিততে পারি, এই বিশ্বাসও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।’

এই জয় দারুণ প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার লক্ষ্য পূরণে। তবে ২৮ জুন ভুটানের বিপক্ষে শেষ গ্রুপ ম্যাচেও বাংলাদেশকে জিততে হবে। ম্যাচ শেষে কোচ বলতে ভোলেননি এ কথাও। বাংলাদেশ পারবে তো ভুটানকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠতে? মালদ্বীপের বিপক্ষে যেমন খেলেছে, তাতে আশাবাদী হওয়াই যায়। তবে কাবরেরা ভুটানকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না, ‘প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে ভুটানের খেলা দেখেছি আমি। সেই ম্যাচে ভুটানকে দেখে ভালো লেগেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা শুরুতেই পেনাল্টিতে প্রথম গোল খেয়েছে। নইলে প্রথমার্ধেই তারা ম্যাচ থেকে কিছু পেতে পারত।’