অতীতে খেলার দাবিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে মঞ্চ বানিয়ে ফুটবলারদের আন্দোলন করতে দেখা গেছে। সেই দৃশ্য যেন আবার ফিরে এসেছে।
এবারের পটভূমি অবশ্য ভিন্ন। সাত দফা দাবি নিয়ে আজ বাফুফে ভবনের সামনে ‘প্রফেশনাল ফুটবল খেলোয়াড়বৃন্দ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন প্রিমিয়ার লিগের প্রায় ৪০-৪৫ জন ফুটবলার। ফুটবলারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম জাতীয় দলে খেলা আশরাফুল ইসলাম, রায়হান হাসান, শহিদুল আলম, রেজাউল করিম, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান, ইমন বাবু ও তৌহিদুল আলম।
পরে বাফুফে ভবনের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে সাত দফা দাবি পড়ে শোনান রেজাউল করিম। দাবিগুলো হলো— ১. অবিলম্বে ফুটবলারদের দলবদল পেছানো নিশ্চিত করতে হবে। ২. প্রতিটি দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. দায়সারা লিগ চালানো যাবে না। ৪. যে দলগুলো খেলবে না বলছে, সেই দলগুলোয় খেলা নিশ্চিত করা খেলোয়াড়ের দায়ভার কে দেবে? ৫. এ বছর বিদেশি ছাড়া লিগ চালাতে হবে। ৬. যেসব পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ইতিপূর্বে ক্লাবের স্পনসর ছিল, তাদের আবার ক্লাবের স্পনসর করার ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সব খেলোয়াড়ের একটি সভা আগামীকালের মধ্যে ব্যবস্থা করতে হবে।
দাবি পূরণে ফুটবলাররা আগামীকাল বেলা দুইটায় বাফুফে ভবনের সামনে আবারও সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে উপস্থিত থাকবেন সাবেক ফুটবলাররাও।
প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলারদের দলবদল শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৯ আগস্ট। গতকাল ফিফা আরও তিন দিন সময় বাড়ানোয় ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় পাচ্ছে ক্লাবগুলো। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের ১২টি ক্লাবের মধ্যে এবার ৪টি ক্লাব খেলবে না বলে শোনা যাচ্ছে।
সেই তালিকায় অগ্রণী নাম পেশাদার লিগের সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলের নামে প্রতিষ্ঠিত শেখ রাসেল খেলবে না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে আজ নিশ্চিত করেছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম আবাহনী ও এবার প্রিমিয়ারে ফেরা ওয়ান্ডারার্সেরও না খেলার সম্ভাবনা আছে। আজ বাফুফে ভবনে আসা ওয়ান্ডারার্সের এক ফুটবলার জানিয়েছেন, গতকাল রাতে তাদের খুদে বার্তা দিয়ে না খেলার কথা বলেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
ক্লাবগুলো পিছটান দেওয়ায় অভিজ্ঞ গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম হতাশ। বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সব ক্লাব খেলুক। ফুটবলই আমাদের পেশা। দেশের পরিবর্তিত অবস্থায় পারিশ্রমিক কম নিয়ে হলেও খেলতে রাজি আমরা। স্পনসর যারা ছিল, তারা ফিরে আসুক, নতুন স্পনসরদেরও ফুটবলারদের পাশে থাকার অনুরোধ করব।’
ডিফেন্ডার রায়হান হাসানের প্রশ্ন, ‘৩-৪টি ক্লাব টিম করতে চাইছে না। শেখ রাসেল, শেখ জামাল তাদের খেলোয়াড়দের “না” বলে দিয়েছে। শেষ সময় এভাবে বললে খেলোয়াড়েরা কোথায় যাবে? এই ১০০-১২০ জন খেলোয়াড়ের কী হবে? কে দায় নেবে?’
ওদিকে ফুটবলারদের সাত দফা দাবি পূরণে সম্ভব সব উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন। ফুটবলাদের কথা ভেবে দলবদল পেছাতে ফিফাকে অনুরোধ করা হয়েছিল জানিয়ে ইমরান হোসেন বলেন, ‘দলবদলের জন্য দুটি উইন্ডো মিলিয়ে ১৬ সপ্তাহ সময় দেয় ফিফা। প্রথম উইন্ডোতে ১১ সপ্তাহ তিন দিন সময় নিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী দলবদলের শেষ সময় ছিল ১৯ আগস্ট। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় দলবদলের সময় বাড়াতে আমরা ফিফাকে অনুরোধ করি। প্রথমে ফিফা তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে আমরা লিখেছিলাম প্রথম ইউন্ডোতে ১২ সপ্তাহ নেওয়া যায়, সেটা অন্তত পূর্ণ করে দিতে। সেটা মেনে নিয়ে ফিফা তিন দিন সময় বাড়ি ১২ সপ্তাহ পূর্ণ করে দিয়েছে।’
বাফুফে চায় সব ক্লাবই লিগে খেলুক। সেই চাওয়া পূরণে পেশাদার লিগ কমিটি শিগগিরই আলোচনায় বসবে বলে জানা গেছে। স্পনসরদের সঙ্গেও কথা বলবে। সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, আগামীকালের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গেও খেলোয়াড়দের প্রতিনিধিসহ বসার চেষ্টা করবে বাফুফে।