শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া
শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া

ঘানা ৩ : ২ দক্ষিণ কোরিয়া

দারুণ খেলেও ঘানার কাছে হার দক্ষিণ কোরিয়ার

বিকেলে ক্যামেরুন-সার্বিয়া ম্যাচ উপহার দিয়েছে ৬ গোলের রোমাঞ্চ। সেই ম্যাচের রেশ কাটতে না কাটতেই উপভোগ্য এক সন্ধ্যা উপহার দিল এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া ও আফ্রিকার দল ঘানা। দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের আরেক ম্যাচে ঘানা ৩-২ গোলে হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। এশীয় প্রতিনিধিদের দুর্ভাগ্যই। আগাগোড়া দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও স্রেফ গোল করতে না পারার ব্যর্থতায় হার সঙ্গী তাদের। অন্যদিকে ঘানাও কম যায়নি, গোলের সুযোগ কাজে লাগানোর পাশাপাশি দাঁতে দাঁত চেপে রক্ষণটা ভালোভাবে সামলে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনাটা বাঁচিয়ে রাখল তারা। যদিও এই হারে কোরিয়ার সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি।

ঘানার পক্ষে জোড়া গোল করে নায়ক মোহাম্মদ কুদুস

শুরু থেকেই ঘানাকে চেপে ধরেছিল কোরিয়া। প্রথম ২৩ মিনিট পুরোপুরি ছিল তাদের। একের পর এক কর্নার আদায় করে নিয়েও গোলটা আদায় করতে পারেনি। উল্টো ২৩ মিনিট কোনোমতে কোরিয়ান আক্রমণ ঠেকিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে গোল আদায় করে নেয় তারা। ২৪ মিনিটে কিংবদন্তি আবেদি পেলের ছেলে জর্ডান আইয়ূর ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন মোহাম্মদ সালিসু। যদিও ঘানার প্রথম গোলটি নিয়ে সন্দেহ ছিল। রেফারি ভিএআর চেক করেই গোলটিকে বৈধ ঘোষণা করেন। সন্দেহ ছিল আইয়ূর হাতে বল লেগেছিল কি না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলের উদ্‌যাপনটা স্তব্ধ হয়ে যায়নি ঘানার। তবে এই সিদ্ধান্তে অবাকই হতে হয়েছে। কারণ, রেফারি ভিএআর মনিটরে দেখে চেক করেননি। ভিএআর দলের সঙ্গে মাউথপিসে আলাপ করেই গোলের সিদ্ধান্ত দেন তিনি।

কোরিয়ার নায়ক হতে পারতেন গুই সুং চো। জোড়া গোল তাঁরও

৩৪ মিনিটে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ঘানা। এবার গোলদাতা মোহাম্মদ কুদুস। এটিও সেট পিসের গোল। এই ক্রসটিও করেছিলেন জর্ডান আইয়ূ। কুদুস দুই কোরিয়ান রক্ষণসেনার মাঝখান দিয়ে হেড করে তা জালে পাঠিয়ে দেন।

প্রথমার্ধ শেষ হয় ঘানার ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা নিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে কোরিয়া ফিরে আসে ম্যাচে। ৪৭ মিনিটেই কিম মুন হোয়াং গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। ৫২ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ আসে কোরিয়ার। কিম জুন সুর দারুণ ক্রস থেকে গুই সুং চোর হেড বাঁচিয়ে দেন ঘানাইয়ান গোলকিপার লরেন্স আটি-জিগি। এই সময় গোলের ব্যবধান কমাতে ঘানার রক্ষণে একের পর এক আক্রমণ করেছে কোরিয়া। তবে প্রতিটি আক্রমণই ঘানার রক্ষণে গিয়ে খেই হারাচ্ছিল। ৫৮ মিনিটে আক্রমণ করে যাওয়ার পুরস্কার পায় কোরিয়া। বদলি খেলোয়াড় লি ক্যাং ইনের সুন্দর ক্রস থেকে হেড করে গোল করেন গুই সুং চো। এর তিন মিনিটের মধ্যে কোরিয়া খেলায় সমতা ফেরায় ওই গুই সুং চোর আরেকটি দুর্দান্ত হেডে। সন হিউং মিনের পাস থেকে বল ধরে ঘানার গোলমুখে অসাধারণ ক্রস ফেলেন কি জিন সু। ঘানার রক্ষণে মোহাম্মদ সালিসু আর গিডিওন মেনশাহকে ফাঁকি দিয়ে আরেকটি দারুণ হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন গুই সুং।

হতাশ কোরিয়ার টটেনহাম তারকা সং হিউন মিন

২-২ সমতা ফিরিয়ে কোরিয়া খেলেছে চমৎকার ফুটবল। সাজানো-গোছানো আক্রমণ, গতিতে ঘানার রক্ষণকে বারবার ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল তারা। এই সময় কোরিয়ানদের খেলা ছিল অনেক বেশি পরিণত। কিন্তু খেলার ধারার বিপরীতেই ঘানা তৃতীয় গোলটি পেয়ে যায় কোরিয়ান রক্ষণের ভুলেই। ৬৫ মিনিটে ঘানাকে ৩-২ গোলে এগিয়ে দেন মোহাম্মদ কুদুস। বাঁদিক দিয়ে ভেসে আসা ক্রস ধরতে পারেননি ইনাকি উইলিয়ামস। তবে সেই ‘ধরতে না পারা’ই যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে ঘানার জন্য। ইনাকি উইলিয়ামসের একটু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কুদুস কোরিয়ান গোলকিপারের ডান দিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন।

খেলা শেষে লাল কার্ড দেখলেন কোরিয়ার কোচ পাওলো বেন্তো

৩-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছিল কোরিয়া। একের এক আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে ঘানার রক্ষণে। কিন্তু এই সময় ঘানাইন রক্ষণে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ সালিসু, গিডিওন মেনশাহরা দাঁতে দাঁত চেপেই ঠেকিয়ে গেছেন আক্রমণগুলো। গোলকিপার আটি-জিগিও ছিলেন দারুণ। ৭৪ মিনিটে লি ক্যাং ইনের ফ্রি-কিকের শট নিজের বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে কিম জুন সুর একটি শট ঠেকান ঘানাইয়ান গোলকিপার। ৭০ মিনিট থেকে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত বল পুরোপুরি ছিল ঘানাইয়ান সীমানায়। এই সময় কোরিয়া যেকোনো সময় গোল পেতেই পারত। কিন্তু ঘানার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের দৃঢ়তা, আর ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোল পায়নি দক্ষিণ কোরিয়া।

ঘানার গোলমুখে আক্রমণের ঢেউ তুলেও জিততে পারল না দক্ষিণ কোরিয়া

খেলার যোগ করা সময়ে হয়েছে আরেক নাটক। একের পর এক আক্রমণে ব্যস্ত কোরিয়া যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে কর্নার পেলেও রেফারি লম্বা বাঁশি বাজিয়ে দেন। ব্যাপারটি নিয়ে প্রতিবাদ করে লাল কার্ড দেখেছেন কোরিয়ার কোচ পাওলো বেন্তো। ম্যাচ শেষে সম্প্রচারকারী সংস্থাকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারেও তিনি রেফারিংয়ের সমালোচনা করেছেন। তবে দুর্দান্ত খেলেও এই হারে কোরিয়ান রক্ষণের ভুলের কথা স্বীকার করতে ভোলেননি।