সারিনা ভিগমান ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন এরই মধ্যে। প্রথম কোচ হিসেবে দুটি আলাদা দলকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছেন ৫৩ বছর বয়সী এ ডাচ। ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসের পর এবার তাঁর অধীন ফাইনালে গেছে ইংল্যান্ড। সেই ভিগমানকে ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডের পুরুষ দলের কোচ হিসেবেও বিবেচনা করা হবে, এবার এমন জানিয়েছেন ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) প্রধান নির্বাহী মার্ক বুলিংহাম। আপাতত ভিগমানের জন্য অন্য কোনো দলের প্রস্তাব ‘শতভাগ নাকচ’ করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
২০২১ সালে ফিল নেভিল সরে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের নারী দলের কোচের দায়িত্ব নেন ভিগমান। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডকে ইউরো জিতিয়েছেন ভিগমান, যেটি ছিল তাদের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। এ বছরের এপ্রিলে লাতিন আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে হারিয়ে ফিনালিসিমাও জেতে ইংলিশরা। যে জয়যাত্রা চলছে এবারের ফিফা নারী বিশ্বকাপেও। সেমিফাইনাল পর্যন্ত তাঁর অধীন ৩৮ ম্যাচ খেলে মাত্র একটিতে হেরেছে ‘লায়নেস’রা। আগামী রোববার ফাইনালে স্পেনের মুখোমুখি হবে ভিগমানের দল।
স্বাভাবিকভাবেই ভিগমানকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বুলিংহাম। তাঁর মতে, ভিগমান ‘ফুটবলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন’। ছেলেদের দলের দায়িত্বও ভিগমান নিতে পারেন, তা নিয়েও সংশয় নেই বুলিংহামের।
ইংল্যান্ড পুরুষ দলের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের সঙ্গে চুক্তি আছে ২০২৪ সালের ইউরো পর্যন্ত। তবে গত বছর কাতার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ইংল্যান্ড বিদায় নেওয়ার পর সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন সাউথগেট, শোনা যায় এমন। ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন তিনি।
ভবিষ্যতে যদি সাউথগেট সরে যান, তাহলে তাঁর জায়গায় ভিগমান আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন এফএ-র প্রধান নির্বাহী, ‘মানুষ সব সময় বলে, কোনো কাজের জন্য কেউ একজন সেরা পুরুষ অথবা ইংলিশ পুরুষ। তবে সেটি পুরুষ হতে হবে কেন? আমাদের উত্তর সব সময়ই এটি—এ কাজের জন্য সেরা ব্যক্তি কে। আমরা মনে করি সারিনা অসাধারণ কাজ করছে, আরও অনেক দিন এটি চালিয়ে যাবে। আমার মনে হয় সারিনা ফুটবলে যা–ই চাক না কেন, সে সেটা করতে পারে।’
এরপর মার্ক বুলিংহাম যোগ করেন, ‘ভবিষ্যতে যদি সে ছেলেদের খেলায় আসার সিদ্ধান্ত নেয়, সেই আলোচনা আগ্রহজাগানিয়া হবে। তবে এটা তার সিদ্ধান্ত, তাই না? আর এটিকে উন্নতি বা এমন কিছু হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত নয়। যদি ভবিষ্যতে সে ভিন্ন পথে এগোতে চায়, আমার মনে হয় সব সামর্থ্যই তার আছে।’
সাউথগেট সরে গেলে গ্রাহাম পটার, ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, এডি হাউদের নাম স্বাভাবিকভাবেই আসবে। তবে বর্তমানে ভিগমানের মতো সাফল্যের রেকর্ড নেই তাঁদের কারও। এখন পর্যন্ত সিনিয়র কোনো পুরুষ ফুটবল দলের কোচের দায়িত্বে কোনো নারী আসেননি। ভিগমান ইতিহাস গড়তেই পারেন, বুলিংহাম মনে করেন এমন, ‘এটা আসলে নির্দিষ্ট কাজটির জন্য সেরা ব্যক্তি বেছে নেওয়ার ব্যাপার। সেই সেরা ব্যক্তি যদি নারী হন, তাহলে কেন নয়? কোনো একটি সময়ে যখন কোনো চাকরির জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের বিশ্লেষণ করা হয়, তখন জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার মতো পুরুষ ও নারী উভয়কে বিবেচনা করার মতো শক্তিশালী বিকল্প কি থাকে? না, আমার কাছে মনে হয় দুই ক্ষেত্রেই এই পুলটা খুবই ছোট। তবে এটি পুরুষই হতে হবে, এমন মানসিকতা আমি পছন্দ করি না।’
বুলিংহামের মতে, ‘যদি সামনে আমাদের সিনিয়র পুরুষ বা নারী দলের কোচের জায়গা খালি হয়, তাহলে এ কাজের জন্য সেরা ব্যক্তিকেই চাইব। যে ম্যাচ জেতানোর মতো সমর্থ সেরা একজন।’
এদিকে বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পর সরে দাঁড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের কোচ ভ্লাতকো আন্দোনভস্কির জায়গায় ভিগমানকে আনা হোক, এমন কথা উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকদের মধ্যে। তবে আপাতত ভিগমানকে ছাড়ার কোনো চিন্তাভাবনা তাদের নেই বলে জানিয়েছেন বুলিংহাম।
বুলিংহাম বলেন, ‘আমরা অনেক গুঞ্জন শুনেছি। দেখুন, সে বিশেষ একজন। আমরা সেটি জানি। আমাদের দিক থেকে তার চুক্তির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। আমাদের মনে হয় সে দারুণ করছে। আমরা তার কাজের বড় সমর্থক, আশা করি, সেও এভাবেই ভাবে। ফলে তাকে আমাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরেই চাই আমরা।’