কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের খেলার শেষ পর্ব শুরু হচ্ছে আজ থেকে। একটি করে ম্যাচ বাকি প্রতিটি দলেরই। এই রাউন্ডে প্রতিটি গ্রুপের সব দলের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে একই সময়ে। এই নিয়মটা কেন, এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে ফুটবলপ্রেমীদের মনে।
এমন নিয়মের পেছনে কারণ আছে। ফিফা অতীতের একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই এমন নিয়ম করেছে। ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, যেটি সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছিল বিশ্বময়। এরপর ১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপে একই ঘটনা ঘটলে ফিফা প্রথম রাউন্ডে সব দলের শেষ ম্যাচ একই সময়ে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কী এমন ঘটেছিল ১৯৭৮ বিশ্বকাপে? সেবার গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচ ছিল সবার পরে। বিতর্ক আছে, স্বাগতিক আর্জেন্টিনাকে অন্যায় সুবিধা করে দিতেই নাকি এমনটা করা হয়েছিল। যেন আর্জেন্টিনা সবকিছু বিবেচনা করে শেষ ম্যাচটি খেলতে নামতে পারে। ’৭৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচটি ছিল পেরুর বিপক্ষে। পরের রাউন্ডে যেতে আর্জেন্টিনাকে জিততে হতো ৪ গোলের ব্যবধানে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আর্জেন্টিনা ম্যাচটি জিতে যায় ৬–০ গোলে। অভিযোগ আছে, আর্জেন্টিনা পেরুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রলোভন দেখিয়ে ম্যাচটা কিনে নিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী সে সময় সেই ম্যাচটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
১৯৮২ বিশ্বকাপে জার্মানি–অস্ট্রিয়ার ম্যাচটি নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠে। অস্ট্রিয়া ও জার্মানির গ্রুপের অন্য দুই দল ছিল আলজেরিয়া ও চিলি। আলজেরিয়া সেবার দুর্দান্ত খেলেছিল। প্রথম ম্যাচেই তারা জার্মানিকে হারিয়ে দেয় ২–১ গোলে। সেটি ছিল ইউরোপের কোনো দলের বিপক্ষে আফ্রিকান দেশের প্রথম জয়। যদিও পরের ম্যাচে তারা অস্ট্রিয়ার কাছে হেরে যায় ২–০ গোলে। শেষ ম্যাচটা ছিল চিলির বিপক্ষে। সেটি জেতে ৩–২ গোলে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে সমীকরণ দাঁড়ায় এ রকম—জার্মানি যদি অস্ট্রিয়াকে এক গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দেয়, তাহলে অস্ট্রিয়া ও জার্মানি চলে যাবে পরের রাউন্ডে। তিন গোলের ব্যবধানে জিতলে বাদ পড়বে অস্ট্রিয়া। জার্মানি অস্ট্রিয়াকে হারাবে—এমন আশায় ছিল আলজেরিয়া। বলে নেওয়া ভালো, সে সময় জিতলে ২ পয়েন্ট আর ড্রয়ে দেওয়া হতো এক পয়েন্ট।
২৫ জুন, ১৯৮২। জার্মানি–অস্ট্রিয়া ম্যাচ। প্রথমেই একটি গোল করে এগিয়ে যায় জার্মানি। এরপর পুরোটা সময় জার্মানি বা অস্ট্রিয়া গোল করার কোনো চেষ্টাই করেনি। কারণ, জার্মানি ১–০ গোলে জিতলে পরের রাউন্ডে তারা অস্ট্রিয়াকে নিয়েই যেতে পারত। স্পেনের গিহন শহরে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচটি পাতানো ছিল বলেই অভিযোগ। ইতিহাসে সেটি ‘গিহনের লজ্জা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
পরপর দুটি বিশ্বকাপের দুই ঘটনা ফিফাকে ভাবতে বাধ্য করে এর সমাধানের লক্ষ্যে। কোনো দল যেন অবৈধ কোনো সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপ থেকে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি একই সময়ে আয়োজন করে ফিফা।