ফিলিস্তিনের কাছে হারের পর খেলোয়াড়দের সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা
ফিলিস্তিনের কাছে হারের পর খেলোয়াড়দের সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা

বিশ্বকাপ বাছাই

ফিলিস্তিনের কাছে হেরেও দল নিয়ে গর্বিত হতে বললেন কাবরেরা

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে অন্তত ড্রয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। সেই ড্র উঁকিও দিচ্ছিল। ৯০ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য ম্যাচ আশাবাদী করে তোলে স্বাগতিকদের। কিন্তু অতিরিক্ত ৮ মিনিটের চতুর্থ মিনিটে সর্বনাশ। গোল খেয়ে ম্যাচটা ১-০ গোলে হেরে গেল বাংলাদেশ

অতিরিক্ত সময়ে গোল খেয়ে হার সব সময়ই হতাশার। বাংলাদেশ দলও হতাশ। তবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচে আজ যেমন খেলেছে বাংলাদেশ, ৫ দিন আগে একই দলের কাছে ৫-০ গোলে উড়ে যাওয়া সেই ম্যাচের চেয়ে আলাদা। আজ আর রক্ষণ ছন্নছাড়া ছিল না। আগের ম্যাচে হাইলাইন ডিফেন্স করতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে নিজেদের রক্ষণের পেছনে অনেকটা জায়গা দিয়েছিল, আজ তা দেয়নি। রক্ষণ ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করেছে।

ঘরের মাঠ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় নিজেদের সেরাটাই দিয়েছে বাংলাদেশ। এ থেকে অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পাচ্ছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘ফুটবলে এমনটা হতে পারে। আমাদের দল নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত, বিশেষ করে প্রথমার্ধে আমরা মাঠে বেশ জমাট ছিলাম। যদিও ফিলিস্তিন দল বলের দখলে এগিয়ে ছিল, কিন্তু আমরা আধিপত্য করেছি, ভীত ছিলাম না। পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিয়েছি।’

বাংলাদেশ–ফিলিস্তিন ম্যাচ চলাকালীন মুহূর্তে কাবরেরা। আজ কিংস অ্যারেনায়

ফিলিস্তিন দল অনেকগুলো কর্নার পেয়েছে। সেগুলোও বাংলাদেশ ভালোভাবে সামলেছে। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপই সঙ্গী কাবরেরার, ‘শেষ দিকে কিছু সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধেও ভালো শুরু করলাম। কিন্তু আবারও ছন্দপতনের মুহূর্ত এল, কিন্তু পরে আমরাও সম্ভবত জয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত শারীরিক শক্তিনির্ভর দলের সামনে আমরা নিজেদের জাল অক্ষত রাখতে পারলাম না। ফুটবলে এটা হতেই পারে। যা–ই হোক, ৯৫ মিনিট আমাদের জন্য দারুণ ছিল। দল ভীষণ ইতিবাচক ছিল। এখন আমাদের জুনের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাবতে হবে।’

৮৪ মিনিটে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগপর্যন্ত বাংলাদেশ গোলকিপার মিতুল মারমা বারের নিচে ছিলেন আস্থার প্রতীক। মিতুলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কোচ বলেন, ‘মাসের পর মাস সে (মিতুল) পারফর্ম করছে। মিতুল আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাক, তার কী হয়েছে, কী অবস্থা, সেটা দেখতে হবে।’

ফিলিস্তিন ফিফার তালিকায় ৯৭তম স্থানে, তাদের বিপক্ষে পয়েন্ট পাওয়ার জন্য ৯৫ মিনিট পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের লড়াই প্রশংসা পাওয়ার মতোই। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। এটা মনোযোগের ঘাটতি কি না, জানতে চাইলে কাবরেরা বলেন, ‘যতটা সম্ভব, চেষ্টা করেছি আমরা, যেটা আমাদের মান দেখাচ্ছে। ফুটবলে কখনো আপনি প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাবেন, কখনো পাবেন না। এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক। তবে এমন নয় যে মনোযোগের ঘাটতির জন্য আমরা গোল খেয়েছি। আসলেই আজ তাদের চেয়েও আগে আমাদের গোল প্রাপ্য ছিল। পয়েন্ট না পাওয়ায় অবশ্যই হতাশ।’

ফিলিস্তিন একাদশের বেশিরভাগ খেলোয়াড় আজ রোজা রেখে খেলেছেন

কোচ যোগ করেন ‘আমরা আগের ম্যাচে হাইলাইন ডিফেন্ডিং করেছি। তবে আজ আমরা সেসব পরিস্থিতি এড়াতে পেরেছি। সেট পিস ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে এড়াতে পেরেছি, আপনারা দেখেছেন। ৯৪তম মিনিট পর্যন্ত আমরা রক্ষণ জমাট রেখেছিলাম। প্রথম লেগে আমরা ৪০ মিনিট রক্ষণ জমাট রেখেছিলাম, আজ ৯৪ মিনিট পর্যন্ত পেরেছি।

৯০তম মিনিটে ফিলিস্তিন দলের মিডফিল্ডার আমেদ মাহাজনেহ লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। বাকি সময়টা ১০ জন নিয়ে খেলেছে ফিলিস্তিন। সেই ১০ জনের দলকে আনন্দে ভাসিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন গোলদাতা মিচেল তারমানিনি। দলকে জেতাতে পেরে খুশি এই ফুটবলার বলেন, ‘বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। তবে আমরা জিতেছি। আমাদের জন্য যা খুবই আনন্দের।’

ফিলিস্তিন দলের তিউনিসিয়ান কোচ মাকরাম দাবোবও খুশিও, ‘একাদশের ৮-৯ জন খেলোয়াড় রোজা রেখে খেলেছে। তারপরও খেলোয়াড়দের ওপর আমার আস্থা ছিল। ওরা সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছে।’

বাংলাদেশকে হারাতে পেরে খুশি ফিলিস্তিন কোচ মাকরাম দাবোব

৪ ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছে ফিলিস্তিন। সম্প্রতি এশিয়ান কাপে ইতিহাস গড়ে প্রথমবার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য যা বড় প্রাপ্তিই।