ইউলিয়ান নাগলসমানের (ডানে) জায়গায় বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কঠিন সময় পার করছেন টমাস টুখেল
ইউলিয়ান নাগলসমানের (ডানে) জায়গায় বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কঠিন সময় পার করছেন টমাস টুখেল

নাগলসমান থেকে টুখেল, বায়ার্ন যেন সোনা খুঁজতে গিয়ে হীরা হারাল

ফুটবল কোচদের চাকরি নিয়ে ‘সকার ইন সান অ্যান্ড শ্যাডো’ বইয়ে আক্ষেপ করে এদুয়ার্দো গালেয়ানো লিখেছেন, ‘আজ যে কোচকে নিয়ে সমর্থকেরা উল্লাস করে তাঁর অমরত্ব চাইছে, পরের রোববার সেই একই কোচকে সমর্থকেরা মরতে বলবে।’ গালেয়ানোর এ আক্ষেপের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতেই পারেন কোচরা। কোচরা নাকি যেকোনো মুহূর্তে ছাঁটাই হওয়ার শঙ্কায় বাক্সপেটরা গুছিয়ে রাখেন, এমন কথাও বলা হয়ে থাকে।

তাই বলে ইউলিয়ান নাগলসমানের সঙ্গেও এমনটা ঘটবে, সেটা কি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা? বায়ার্ন মিউনিখকে জার্মান সুপার কাপ জিতিয়ে গত মৌসুম শেষ করেছিলেন নাগলসমান। এ মৌসুমেও শুরু থেকে দল পরিচালনা করছিলেন শক্ত হাতে।

মার্চে আন্তর্জাতিক বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা বুন্দেসলিগায় দুইয়ে ছিল বায়ার্ন। তবে শীর্ষে থাকা বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গে ব্যবধান ছিল মাত্র ১ পয়েন্টের। জার্মান কাপে উঠে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগের রেকর্ডটা তো আরও ঈর্ষণীয়। ৮ ম্যাচের সব কটি জিতে বাভারিয়ানরা উঠেছিল শেষ আটে। এই স্বপ্নযাত্রায় দলটি দুবার করে হারিয়েছিল বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, পিএসজির মতো পরাশক্তিদের।

নাগলসমানের অধীনে সব মিলিয়ে এ মৌসুমে ৩৭ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে হেরেছিল বায়ার্ন। গোল পাচ্ছিল মুড়ি–মুড়কির মতো; ১১২টি। মানে ম্যাচপ্রতি তিনটির বেশি। অথচ বলা নেই–কওয়া নেই, সাফল্যের চূড়ায় থাকা নাগলসমানকে হুট করে বরখাস্ত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাঁর জায়গায় কোচ করে আনে টমাস টুখেলকে

শুরুতে ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছিল, কোচিংয়ে কোনো ত্রুটির কারণে নয়, বরং সাংবাদিক প্রেমিকা লিনা ভুরজেনবার্গারের মাধ্যমে বায়ার্নের অন্দরমহলের খবর বাইরে ছড়ানো আর শিষ্যদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় চাকরি হারাতে হয়েছে নাগলসমানকে। তবে বায়ার্নের ক্রীড়া পরিচালক হাসান সালিহামিদজিচ জানান, নাগলসমানের কাজে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট ছিল না বলেই ছাঁটাই করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় সম্ভাব্য সেরা কোচকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

জার্মানির শীর্ষ দৈনিক ‘বিল্ড’–এর বায়ার্ন মিউনিখ প্রতিনিধি ছিলেন নাগলসমানের প্রেমিকা লিনা ভুরজেনবার্গার

কিন্তু এখন পুরো উল্টো চিত্র। আরও ভালোর আশায় নাগলসমানকে বিদায় করে টুখেলকে এনে আরও খারাপ করছে বায়ার্ন। জার্মান চ্যাম্পিয়নরা যেন সোনা খুঁজতে গিয়ে হীরা হারিয়েছে! এ মৌসুমে নাগলসমানের অধীনে যেখানে ৩৭ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে হেরেছিল বায়ার্ন, সেখানে টুখেলের অধীনে ৭ ম্যাচের হেরেছে তিনটিতে। ম্যাচপ্রতি গোল মাত্র ১.২৮! বায়ার্ন সমর্থকদের জন্য এর চেয়েও অস্বস্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে টুখেলের কোচিংয়ে একেকটা হারে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায়।

টুখেলের কোচিংয়ে ফ্রাইবুর্গের কাছে হেরে জার্মান কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগে। ম্যানচেস্টার সিটির কাছে প্রথম লেগে ৩–০ ব্যবধানে হারের পর ফিরতি লেগে ১–১ ড্রয়ে ছিটকে পড়তে হয়েছে বাভারিয়ানদের। টানা ১০ বার বুন্দেসলিগা জেতা বায়ার্ন এখন এ গৌরব হারানোরও ঝুঁকিতে। বায়ার্নের কোচ হিসেবে অভিষেকে সাবেক ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে বুন্দেসলিগার শীর্ষে ফিরলেও তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আবার দুইয়ে নেমে গেছে তারা।

বায়ার্নের কোচ হিসেবে এক মাস পূর্ণ হতে না হতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে টুখেলের

টুখেলের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছে বায়ার্ন। এর আগে তাঁকে ছাঁটাই করলে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে আপাতত হয়তো সে পথে হাঁটবে না তারা। তবে টুখেলকে নিয়োগ দিতে যিনি কলকাঠি নেড়েছিলেন, সেই অলিভার কানকে বরখাস্ত করে ‘ভুলের প্রায়শ্চিত্ত’ করতে পারে ক্লাবটি।

নাগলসমান ও টুখেলের অধীনে বায়ার্নের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছে ইএসপিএন এফসি। টুখেল আসার পর দলটির এমন হতশ্রী অবস্থা দেখে একজন তো লিখেই ফেলেছেন, ‘বায়ার্ন ধীরে ধীরে চেলসির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।’