গোল উদ্‌যাপনে রবার্ট লেভানডফস্কির সঙ্গী ফেরান তোরেস
গোল উদ্‌যাপনে রবার্ট লেভানডফস্কির সঙ্গী ফেরান তোরেস

বার্সেলোনা ২ : ০ কাদিজ

টানা জয়ের রেকর্ড ছুঁয়ে রিয়ালের চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে গেল বার্সা

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলা দেখে থাকলে যে কেউ বলবেন, গোল উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে মুহুর্মুহু আক্রমণ হয়েছে, যেটা জারি ছিল রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর আগপর্যন্ত। তবু পুঁচকে দলের বিপক্ষে কিনা গোল হলো মাত্র দুটি!

বার্সেলোনার কাছে এখন অবশ্য গোলসংখ্যা মুখ্য নয়; বেশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। নিজেদের ডেরা ন্যু ক্যাম্পে কাদিজকে ২–০ ব্যবধানে হারিয়ে পূর্ণ পয়েন্ট তুলে নেওয়ার কাজটা ঠিকই করেছে বার্সা। সর্বশেষ ২০০৬ সালে কাদিজকে ঘরের মাঠে হারিয়েছিল কাতালানরা।  

এ নিয়ে স্প্যানিশ লা লিগায় জাভি হার্নান্দেজের অধীনে তৃতীয়বার টানা ৭ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ল বার্সা। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আরও দুবার টানা ৭ ম্যাচ জিতেছিল তারা।

আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১৮ ম্যাচ অপরাজিত বার্সা। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরেছিল তারা।

ম্যাচের দুটি গোলই হয়েছে বিরতির আগে। ৪৩ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন সের্হিও বুসকেটসের চোটে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া সের্হি রবের্তো। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে অন্য গোলটি করেন রবার্ট লেভানডফস্কি।

এ জয়ে স্প্যানিশ লা লিগায় শীর্ষস্থান আরও সুসংহত করল বার্সা। কাতালান ক্লাবটির পয়েন্ট ৫৯, রিয়াল মাদ্রিদের ৫১। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে থাকা জাভি হার্নান্দেজের দল ২০১৯ সালের পর প্রথম লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন এখন দেখতেই পারে। এদিকে কাদিজ নেমে গেল ১৭ নম্বরে।

তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত ঘানার ফুটবলার ক্রিস্টিয়ান আতসুর স্মরণে ইউরোপীয় ফুটবলে ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হচ্ছে। নীরবতা পালন করা হয়েছে ন্যু ক্যাম্পেও। তবে শুধু আতসুর কারণে নয়, বার্সা ডিফেন্ডার মার্কোস আলোনসোর বাবা মার্কোস আলোনসো পেনার স্মরণে। পেনা নিজেও ৬ বছর খেলেছেন বার্সায়। কদিন আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাবেক এ উইঙ্গার।

আতসু ও পেনার স্মরণে ম্যাচ শুরুর আগের এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়

বাবার মৃত্যুশোক এখনো কাটিয়ে উঠতে না পারায় এদিন খেলতে নামেননি আলোনসো। ডাগআউটে বেশ কয়েকবার আবেগাপ্লুত দেখা যায় তাঁকে। তবে তাঁর সতীর্থরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঠিকই জয় উপহার দিয়েছেন।

দুই দল শট নিয়েছে ৩০টি। এর মধ্যে ৯টি ছিল লক্ষ্যে; বার্সার ৫টি আর কাদিজের ৪টি। তবে অতিথিরা সেগুলোকে একবারও গোলে রূপ দিতে পারেনি। বল দখলেও বেশ পিছিয়ে ছিল অবনমন অঞ্চলের কাছে চলে যাওয়া কাদিজ। বার্সার ৬৫ শতাংশের বিপরীতে তাদের ৩৫ শতাংশ।

বার্সার সাঁড়াশি আক্রমণের মাঝেই অবশ্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছে কাদিজ। ১৫ মিনিটে দারুণ সযোগ নষ্ট করেন থিও বঙ্গোন্দা। ৩ মিনিট পর রজার বার্সার জাল কাঁপালেও অফসাইডের কারণে সেটা বাতিল হয়।

এই অংশ বাদ দিলে প্রথমার্ধের পুরোটা জুড়ে ছিল বার্সার রাজত্ব। শুধু গোলমুখ খুলতেই যা একটু দেরি হয়েছে। চোটে পড়ে আগেই ছিটকে গেছেন উসমান দেম্বেলে ও  পেদ্রি। লাল কার্ডের খড়গে পাওয়া নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন না রোনাল্দ আরাউহোও। নিয়মিত অধিনায়ক বুসকেটসকে কোচ জাভি এ ম্যাচের স্কোয়াডে রাখলেও শতভাগ ফিট না হওয়ায় ঝুঁকি নেননি। রাফিনিয়াকে রাখা হয়েছিল বিশ্রামে।

জয়ের পর সমর্থকদের অভিবাদনের জবাব দেন বার্সার খেলোয়াড়রা

পেদ্রি–রাফিনিয়ার জায়গায় শুরুর একাদশে সুযোগ পাওয়া ফেরান তোরেস ও আনসু ফাতি সুযোগ নষ্টের মহড়া দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রবের্তোকেই তাই ‘ডেডলক’ ভাঙার দায়িত্ব নিতে হয়।  

 ৪৩ মিনিটে এসে আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি কাদিজ। বার্সাকে এগিয়ে দেন রবের্তো। ‘ওয়ান ব্রিংগস অ্যানাদার’ কথাটার সার্থকতা প্রমাণ করে একটু পরেই ব্যবধান ২–০ করেন পোলিশ তারকা লেভানডফস্কি। কাদিজ কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে তখনই।

দ্বিতীয়ার্ধেও অনেক সুযোগ এসেছিল দুই দলের সামনে। কিন্তু কখনো উড়িয়ে মেরে, কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে ব্যবধান বাড়াতে ব্যর্থ হয় বার্সা। আর কাদিজের সামনে এই অর্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়ান বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন।  

ঘরোয়া লিগগুলোতে একরকম অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা বার্সাকে এবার কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার ইউরোপা লিগের ফিরতি লেগে জাভির দলের প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ন্যু ক্যাম্পে প্রথম লেগ ২–২ গোলে ড্র করায় বেশ চাপেই আছে বার্সা।