বার্সেলোনায় ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও রিস্টো স্টইচকভের একসঙ্গে খেলার সুযোগ হয়নি। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি যখন বার্সেলোনায় (১৯৮২–১৯৮৪), বুলগেরিয়ান কিংবদন্তি তখন নিজ দেশের ক্লাব এফসি হেব্রোসে খেলছেন। স্টইচকভ যখন প্রথম বার্সায় এলেন (১৯৯০–১৯৯৫), ম্যারাডোনা সে সময় নাপোলি ও সেভিয়া ঘুরে নিজ দেশের ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে। তবু এক ভুবনের দুই কিংবদন্তির মধ্যে কীভাবে যেন বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কীভাবে যেন—কথাটা একটু ভুল হয়। ফুটবলের ভুবনে তো ভাষা একটাই—খেলা। সে ভাষায়ই বন্ধুত্ব হয়েছিল দুজনের।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সে বছর ব্যালন ডি’অরজয়ী স্টইচকভের ম্যারাডোনার জন্য মন পোড়ে। ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তির কিছু ব্যাপারে নিজেকেই দোষারোপ করেন বার্সেলোনাকে ইউরোপিয়ান কাপ ও পাঁচবার লা লিগা জেতানো স্টইচকভ। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ম্যারাডোনা মারা যাওয়ার পর থেকেই এই আত্মদহনে ভুগছেন তিনি। সম্ভবত বন্ধুত্বের দাবি থেকেই স্টইচকভ এখন ভেবে থাকেন, আরেকটু নিয়মিতভাবে ম্যারাডোনার খোঁজখবর নিলে তাঁকে হয়তো ‘শকুন’দের হাত থেকে বাঁচানো যেত!
ইএসপিএনের টিভি সিরিজ ‘ইকুইপো এফ’–এর সঙ্গে আলাপচারিতায় ম্যারাডোনাকে নিয়ে এমন দুঃখই প্রকাশ করেছেন বুলগেরিয়ার সাবেক এই স্ট্রাইকার। ম্যারাডোনার সঙ্গে তাঁর ২০১৬ সালে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। এরপর অনেক চেস্টা করেও নাকি ম্যারাডোনার সঙ্গে অন্তত ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি ৫৬ বছর বয়সী কিংবদন্তি।
স্টইচকভ বলেছেন, ‘তার (ম্যারাডোনা) সব (ফোন) নম্বর আমার কাছে ছিল। সর্বশেষ তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল ২০১৬ সালের ২ কিংবা ৩ ফেব্রুয়ারি। ৮ ফেব্রুয়ারি আমাকে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় সে। এরপর আর আমাদের কথা হয়নি। সে হয়তো ঘুমোচ্ছিল, বিশ্রাম নিচ্ছিল কিংবা খেলায় ব্যস্ত ছিল। সেবারই শেষবারের মতো আমার সঙ্গে ম্যারাডোনার কথা হয়েছে।’ স্টইচকভ এরপর কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করেই বলেন, ‘আমার মনে হয় না, ম্যারাডোনার সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। কথা বলার সুযোগ না থাকলে কি করতে পারি?’
ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তাঁকে ঘিরে অনেক কথাই উঠেছে। মৃত্যুর পেছনে তাঁর বিশৃঙ্খল জীবনের দায় অনেক। মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, প্রাত্যহিক জীবনেও নিয়মের তোয়াক্কা করতেন না। তখন অনেকেই তাঁর নাম ভাঙিয়ে দু–পয়সা কামিয়েছেন, এমন অভিযোগ ম্যারাডোনার মেয়েরাই করেছেন এর আগে। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসকদের অবহেলার প্রশ্নও উঠেছে এবং ব্যাপারটি এখন আদালতে সুরাহা হচ্ছে। স্টইচকভ এসব লোকজনকেই সম্ভবত ‘শকুন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
নিজেকে কাঠগড়ায় তুলে স্টইচকভ বলেছেন, ‘শকুনদের কাছ থেকে ম্যারাডোনাকে আলাদা করতে না পারায় নিজেকেই দোষ দিই। সব সময়ই বলে এসেছি ওরা শকুনের দল। যে বন্ধুত্ব আমাদের ছিল, সেই জায়গা থেকে (ম্যারাডোনার প্রতি) আরেকটু যত্নবান হতে না পারার জন্য আমি নিজেকেই দোষারোপ করি। মাঝেমধ্যে বাসায় বসে ভাবি, আমি কি আরও কিছু করতে পারতাম না? আমি–ই দোষী। তার আশপাশে স্যুট–টাই পরা লোকজনকে দেখে আমার খুব রাগ হতো। আমি তাকে অনেক ভুগতে দেখেছি। সে পরপারে শান্তিতে থাকুক। ম্যারাডোনা তার বন্ধুদের থেকে কখনো আলাদা হয়নি।’
ম্যারাডোনার সঙ্গে নব্বইয়ের দশকে সাক্ষাৎ হয় স্টইচকভের। তাদের মধ্যে কখনোই রাগারাগি হয়নি। তবে একে–অপরের খেলা নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ সোজাসাপটাই মুখের ওপর বলে দিতেন, ‘আমি তার সঙ্গে কর্কশ ভাষায়ও কথা বলেছি। আবার আমি কখনো ভুল করলে ডিয়েগোও একইভাবে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। সে জানত, ফুটবলারদের খোলামেলা কথা বলতে হয়।’