লিওনেল মেসি কি ক্লান্ত হন না? বোধ হন না। বরং পরিসংখ্যান নিয়ে যাঁরা কাজ করেন কিংবা পরিসংখ্যানের প্রতি আগ্রহ আছে, এমন ফুটবলপ্রেমীদের ক্লান্ত করে দেন। চলতি কাতার বিশ্বকাপের কথাই ধরুন না!
এ বিশ্বকাপজুড়েই রেকর্ডের পাতা ওলট–পালট করে চলছেন এই খুদে জাদুকর। কখনো প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা বা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততার রেকর্ড ভেঙেছেন, কখনো তাদের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন কিংবা নিজেই নতুন রেকর্ড গড়েছেন।
এবারের কাতার বিশ্বকাপে মেসির গোল পাঁচটি, করিয়েছেন তিনটি। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে এখন মেসি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ম্যাচের ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলের প্রথম গোলটি করেন তিনি। পরে ম্যাচের ৬৯ মিনিটে নিখাদ জাদুর পরশে আলভারেজকে দিয়ে গোলও করিয়েছেন।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে করা সেই গোলে বিশ্বকাপ ইতিহাসে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসে গেছেন মেসি। ছাড়িয়ে গেছেন ১৯৯৪ থেকে ২০০২—তিনি বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচ খেলে ১০ গোল করা বাতিস্তুতাকে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটি গোল করে তাঁর পাশে বসেছিলেন মেসি।
পাঁচটি বিশ্বকাপে খেলা মেসি গোল করেছেন ১১টি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও এখন আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপজয়ী জার্মান অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউসের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করেন তিনি।
ক্রোয়েশিয়াকে হারানোর ম্যাচে আলভারেজকে দিয়ে গোল করিয়েছেন মেসি। বিশ্বকাপে তিনি গোল করিয়েছেন ৮টি। সব কটিই করিয়েছেন আটজন ভিন্ন ফুটবলারকে দিয়ে। আলভারেজকে গোল করানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল করানোর রেকর্ডও এখন ম্যারাডোনার সঙ্গে যৌথভাবে মেসির।
‘অপটা’র (খেলাধুলার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে) দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৬৬ বিশ্বকাপ থেকে রেকর্ড রাখার পর থেকে বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে বেশি আট গোলে সহায়তার রেকর্ড ছিল এত দিন কেবলই ম্যারাডোনার।
বিশ্বকাপে মেসির গোল ১১টি, আর গোলে সহায়তা করেছেন ৮টি। অর্থাৎ বিশ্বকাপ ইতিহাসে তাঁর গোলে অবদান ১৯টি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ থেকে রেকর্ড রাখার পর থেকে এর চেয়ে বেশি গোল ও গোলে সহায়তা নেই কোনো ফুটবলারের। এর আগে রোনালদো নাজারিও, মিরোস্লাভ ক্লোসা, গার্ড মুলারের ১৯টি গোলে অবদান ছিল।
এ ছাড়া প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ভিন্ন তিন ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন এই পিএসজি তারকা। আগেই গড়েছেন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ভিন্ন পাঁচ আসরে গোল সহায়তার কীর্তি। বিশ্বকাপে আর একটি ম্যাচ বাকি আছে মেসির। ফাইনালে সেই ম্যাচে মেসি গোল করলে যেমন নতুন রেকর্ড গড়বেন, তেমনি বাড়বে বিশ্বকাপ জিতে ফুটবল ইতিহাসে অমর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও।