এফএ কাপ ফাইনালে আজ ওয়েম্বলিতে ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এই ম্যাচে ইউনাইটেডের জার্সিতে আলেহান্দ্রো গারনাচো কিংবা মার্কাস রাশফোর্ড মাঠে নামলে কিংবা বেঞ্চে বসে থাকলেও জিতে যাবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটি!
না, এফএ কাপ ফাইনাল জেতার কথা বলা হচ্ছে না। একে তো ফাইনাল, তারওপর ‘ম্যানচেস্টার ডার্বি’—শেষ বাঁশি বাজার আগে কিছুই বলা যায় না। ইউনাইটেড জিতবে অন্য একটি জায়গায়—বয়সভিত্তিক প্রকল্প কিংবা নিজেদের একাডেমি থেকে খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেওয়ার ধারাবাহিকতায় ইউনাইটেডের সমকক্ষ ক্লাব যে ইংল্যান্ডে আর একটিও নেই!
একটি পরিসংখ্যান দেখিয়ে দাবিটা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন। আর পরিসংখ্যানটিও বিস্ময়কর—১৯৩৭ সালের অক্টোবর থেকে আজ এফএ কাপ ফাইনাল পর্যন্ত টানা ৪২০৮ ম্যাচ খেলবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, যেখানে প্রতি ম্যাচেই নিজেদের বয়সভিত্তিক প্রকল্প থেকে উঠে আসা অন্তত একজন খেলোয়াড়কে মূল দলে রেখেছে ইউনাইটেড।
এফএ কাপ ফাইনালের স্কোয়াড এখনো জানা না গেলেও ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগের মূল একাদশে বয়সভিত্তিক প্রকল্প থেকে উঠে আসা অন্তত একজন গ্র্যাজুয়েট যে থাকবেন, তা এখনই আন্দাজ করে নেওয়া যায়। কারণ? এই ম্যাচের আগে ইউনাইটেডের এই ধারাবাহিকতায় যে কখনো ছেদ পড়েনি!
তরুণ বা উঠতিদের প্রতি ইউনাইটেডের এই প্রতিশ্রুতি রাখার শুরুটা তিরিশের দশকে। ক্লাবের সেক্রেটারি ওয়াল্টার ক্রিকমার ও প্রধান স্কাউট লুইস রোক্কা মিলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জুনিয়র অ্যাথলেটিক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তরুণ প্রতিভাদের চিহ্নিত করে তাঁরা নিজেরাই খেলোয়াড় তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাতে ক্লাব যেমন ভালো খেলোয়াড় পাবে, তেমনি দলবদলের বাজারেও টাকাপয়সা বাঁচানো যাবে—এই পরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্পটি যাত্রা শুরু করেছিল।
ইউনাইটেডের দুই কিংবদন্তি কোচ স্যার ম্যাট বাসবি ও স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন বরাবরই নিজেদের একাডেমির তরুণদের প্রতি আস্থা রেখেছেন। ফার্গুসনের সময়ে যেমন ইউনাইটেডের একাডেমি থেকে উঠে আসা রায়ান গিগস, পল স্কোলস, ডেভিড বেকহাম, নিকি বাটরা নিজেদের ‘ক্লাস অব ৯২’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফুটবল বিশ্বে।
ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলে অন্যতম সেরা তিন ফুটবলার কিন্তু ইউনাইটেডের একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন—জর্জ বেস্ট, ববি চার্লটন ও ডানকান এডয়ার্ডস। গত বছর ইউনাইটেড ছেড়ে যাওয়া পল পগবাও উঠে এসেছেন ক্লাবটির একাডেমি থেকে।
এখন আরও বড় তারকা হয়ে ওঠার পথে আছেন মার্কাস রাশফোর্ড। শুধু মাঠের পারফরম্যান্সে নয়, অনাহারি শিশুদের পাশে দাঁড়ানো থেকে মাঠের বাইরে আরও কিছু কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে ‘আইকন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে আছেন রাশফোর্ড।
মেইল অনলাইন আরও একটি দারুণ পরিসংখ্যান জানিয়েছে। মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ইংল্যান্ডের সাবেক সেন্টার ফরোয়ার্ড টমি টেলরকে ১৯৫৩ সালের মার্চে বার্নসলে থেকে নিয়ে এসেছিলেন প্রয়াত ম্যাট বাসবি। তখন থেকে ১৯৫৭ সালের ডিসেম্বরে হ্যারি গ্রেগকে নিয়ে আসার এই সময়ের মধ্যে চার বছরে দলবদলের বাজারে এক পয়সাও খরচ করতে হয়নি ইউনাইটেডকে। কারণ? নিজেদের বয়সভিত্তিক প্রকল্পের খেলোয়াড় আছে না!
ইউনাইটেডের সেই ‘ক্লাস অব ৯২’–এর অন্যতম প্রতিনিধি গ্যারি নেভিল একবার বলেছিলেন, ‘যেকোনো পর্যায়ে ইউনাইটেডের প্রতিনিধিত্ব করার মর্যাদাটা তারা আপনার মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেবে।’ নেভিল আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিনিধিত্ব করাটা কত মর্যাদার বিষয়, এসব বোঝানোর মধ্য দিয়েই একাডেমিতে তরুণদের গড়ে তোলা হয়।