প্রথমার্ধে গোল করেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। পরে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক আরেক মার্তিনেজ
প্রথমার্ধে গোল করেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। পরে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক আরেক মার্তিনেজ

কোপা আমেরিকা

আবার ‘অতিমানব’ মার্তিনেজ, টাইব্রেকারে ইকুয়েডরকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা ১–১ ইকুয়েডর (নির্ধারিত সময়)

আর্জেন্টিনা ৪–২ ইকুয়েডর (টাইব্রেকার)

আর্জেন্টিনা এমন কিছু হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি।

ম্যাচের ৩৫ মিনিটে পাওয়া গোলে এগিয়ে ছিল কোপা আমেরিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। যোগ করা সময়ের ২ মিনিটে এসে সেই গোল শোধ হয়ে যাবে কে ভেবেছে! একদম বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই সমতাসূচক গোলটি করে ইকুয়েডর। ফ্রি–কিক থেকে উইঙ্গার জন ইয়েবোয়া বলটা বক্সের ভেতর ফেলেছিলেন। ফরোয়ার্ড কেভিন রদ্রিগেজের কুশলী হেড দূরের পোস্ট দিয়ে জড়ায় জালে। প্রায় হেরে বসা ম্যাচে ১-১ গোলে সমতায় ফিরে ইকুয়েডরের খেলোয়াড়দের উল্লাস তখন দেখে কে!

কোপা আমেরিকায় ফাইনাল ছাড়া নকআউট পর্বের কোনো ম্যাচেই অতিরিক্ত সময় নেই। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে শেষ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর্জেন্টিনার হয়ে টাইব্রেকারে প্রথম শটই মিস করেন লিওনেল মেসি। ‘পানেনকা’ শট নিয়ে বল ক্রসবারে মারেন তিনি। হতাশ মেসিকে এসে জড়িয়ে ধরেন ইকুয়েডর গোলকিপার আলেক্সান্দার ডমিনিগুয়েজ।

আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ অবশ্য ‘চাপ’ দীর্ঘায়িত হতে দেননি। ইকুয়েডরের প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় শটটিও ঠেকিয়ে টাইব্রেকারে আবারও ‘অতিমানব’ হয়ে ওঠেন মার্তিনেজ। ইকুয়েডরের হয়ে প্রথম দুটি শট নেওয়া অ্যাঞ্জেল মেনা ও অ্যালান মিন্দার শট ঠেকান মার্তিনেজ।

টাইব্রেকার মিসের পর মেসিকে জড়িয়ে ধরেন ইকুয়েডরের গোলকিপার আলেক্সান্দার ডমিনিগুয়েজ

মেসির পর আর্জেন্টিনার আর কেউ পেনাল্টি মিস না করলে শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলের জয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় আর্জেন্টিনা। অন্য কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ভেনেজুয়েলা ও কানাডার মধ্যে জয়ী দলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠে নামবে লিওনেল স্কালোনির দল।

হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকার এই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সেন্টার-ব্যাক লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। মেসির কর্নার থেকে হেড করে বলটি বাঁ প্রান্তের পোস্টে পাঠান ম্যাক অ্যালিস্টার। সেখানে সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়ানো মার্তিনেজ হেডে গোলটি করেন।

তবে যোগ করা সময়ের আগেই ম্যাচে সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল ইকুয়েডর। ৬১ মিনিটে নিজেদের বক্সে হ্যান্ডবল করে বসেন আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পল। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পটকিক থেকে ইকুয়েডর অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া বল মারেন পোস্টে! ফিরতি বলে লেফট ব্যাক পিয়েরো হিনকাপিও বল মারেন সাইড নেটে। সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয় ইকুয়েডরের।

প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে গোল এনে দেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ

শুধু কী তাই, যোগ করা সময়ে সমতায় ফেরার পর জেতার সুযোগও পেয়েছে ইকুয়েডর। সেটি যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে (৭ মিনিট)। মিন্দার ক্রস থেকে আর্জেন্টিনার বক্সে ফ্রি হেডের সুযোগ পেয়েছিলেন স্ট্রাইকার জর্দি কাইসেদো। এই সুযোগটা তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। একদম অরক্ষিত অবস্থায় থেকেও হেডে বল পোস্টের বাইরে মারেন।

চোটের কারণে এই ম্যাচে মেসির খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে কোচ স্কালোনি তাঁকে শুরু থেকেই খেলিয়েছেন। গোটা ম্যাচে সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি ইন্টার মায়ামি তারকা। টাইব্রেকারেও পানেনকা শটটি বেশি ওপরে মেরেছেন। তবে মেসির মিসের পর আর্জেন্টিনার হয়ে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি হুলিয়ান আলভারেজ, ম্যাক অ্যালিস্টার, গঞ্জালো মন্তিয়েল ও নিকোলাস ওতামেন্দি।

টাইব্রেকার জয়ের পর উদ্‌যাপন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের

প্রথমার্ধে আধঘণ্টা তেমন ভালো খেলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। বরং ২৭ মিনিটে ইকুয়েডরই গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু জোরালো শট নিতে গিয়ে বল পোস্টের বাইরে মারেন কেন্দ্রি পায়েজ। গোল পাওয়ার পর ভালো খেলতে শুরু করে আর্জেন্টিনা। সে ধারাবাহিকতায় ৪১ মিনিটে আসে দারুণ সুযোগ। কিন্তু দি পলের পাস থেকে বল পোস্টের বাইরে মারেন মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ। ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে গোলের তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আর্জেন্টিনা।