চলতি মৌসুমে ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগে বেশ চমক দেখিয়েছে জিরোনা, অ্যাস্টন ভিলা ও বায়ার লেভারকুসেনের মতো ক্লাবগুলো। একইভাবে দলবদলে নতুন ক্লাবে যোগ দিয়ে বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড়ও চমকে দিয়েছেন সবাইকে। আর্সেনালের ছন্দ ধারে রাখার পেছনে যেমন দারুণ ভূমিকা রেখেছেন ডেকলান রাইস।
আর লিভারপুলের মিডফিল্ডে শক্তি বাড়িয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান তরুণ দমিনিক সোবোলসলাই। অ্যাস্টন ভিলা আশ্চর্য উত্থানে বড় অবদান আছে স্প্যানিশ তারকা পাউ তোরেসের। ওয়েস্ট হামের হয়ে মোহাম্মদ কুদুস ও টটেনহামের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন মিকি ফন ডি ভেন। গত দলবদলে ক্লাব পরিবর্তন করে সাফল্যের দ্যুতি ছড়ানো তারকাদের নিয়ে এই আয়োজন।
ডেকলান রাইস
আর্সেনাল
ওয়েস্ট হামে খেলার সময়ই নিজেকে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন ডেকলান রাইস। মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে ধীরে ধীরে দৃষ্টি কাড়েন বড় ক্লাবগুলোরও। সমর্থকদেরও চোখ ছিল তাঁর দলবদলের দিকে। শেষ পর্যন্ত মিকেল আরতেতার হাত ধরে বদলে যাওয়া আর্সেনালেই নিজের ঠিকানা খুঁজে নেন রাইস। এ মৌসুমে আর্সেনালের পারফরম্যান্সে দারুণ প্রভাব রেখেছেন ২৪ বছর বয়সী এই ইংলিশ তারকা।
রাইসের মতো কার্যকর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আসায় আর্সেনালের সমন্বয়ও আগের চেয়ে বেশ ভালো হয়েছে। রাইসের রক্ষণ–সামর্থ্য নিয়ে অবশ্য আগে থেকেই সন্দেহ ছিল সামান্য। বলের দখল নেওয়া এবং বল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাইস ছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু বলের দখল ধরে রাখা, মাঠে আধিপত্য তৈরি করা ও ফাইনাল থার্ডে হুমকি তৈরিতে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে নতুন করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন এই ফুটবলার। প্রিমিয়ার লিগে ১৬ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ৩ গোলও করেছেন রাইস, যার মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লুটন টাউনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে করা জয়সূচক গোলও আছে।
দমিনিক সোবোসলাই
লিভারপুল
গত মৌসুমের পুরোটাজুড়ে মিডফিল্ড দুর্বলতার কারণে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল লিভারপুল। এর মধ্যে জর্ডান হেন্ডারসন, জেমস মিলনার ও নেবি কেইটারা ক্লাব ছাড়লে মিডফিল্ড–শূন্যতা আরও গভীর হয় অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির। যে কারণে মৌসুম শেষ হতে না হতেই নতুন মিডফিল্ডার কেনায় মনোযোগ দেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। প্রথমে আনেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টারকে। এরপর আরবি লিপজিগ থেকে ক্লাবটি নিয়ে আসেন দমিনিক সোবোসলাইকে।
লিপজিগেই নিজের প্রতিভার ছাপ রাখতে শুরু করেন হাঙ্গেরিয়ান এই মিডফিল্ডার। জহুরি ক্লপের চোখ যে হিরে চিনতে ভুল করেনি সে প্রমাণ এরই মধ্যে দিয়েছেন সোবোসলাই। লিভারপুলের মিডফিল্ডে রীতিমতো রোমাঞ্চ সৃষ্টি করেছেন সোবোসলাই। গতি, পাসিংয়ের পাশাপাশি বলের ওপর তাঁর দারুণ নিয়ন্ত্রণ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এর মধ্যে লিগে দুই গোলের সঙ্গে দুটি সহায়তাও আছে তাঁর। চলতি মৌসুমে লিভারপুলের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করছে সোবোসলাইয়ের ছন্দ ধরে রাখার ওপর।
পাউ তোরেস
অ্যাস্টন ভিলা
প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বড় চমকের নাম অ্যাস্টন ভিলা। উনাই এমেরির হাত ধরে পুরোপুরি বদলে গেছে ক্লাবটি। পরপর দুই ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটি ও আর্সেনালকে হারিয়ে ১৬ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকার তিনেও উঠে এসেছে ক্লাবটি। ভিলার এই বদলের পেছনে এমেরির খেলোয়াড় বাছাই করাও রেখেছে বড় ভূমিকা। ক্লাবে শুরুটা ভালো না হলেও পরে দারুণভাবে দলের সঙ্গে মানিয়ে নেন এই স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক। ম্যান সিটি ও আর্সেনালের বিপক্ষে দলের রক্ষণ সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা ছিল এই স্প্যানিশ ফুটবলারের। এ ছাড়া সেট পিসেও দারুণ হুমকি তৈরি করতে পারেন তোরেস। পারেন দলের প্রয়োজনে গোল করেও ম্যাচের রূপ বদলাতে।
মোহাম্মদ কুদুস
ওয়েস্ট হাম
আয়াক্স থেকে ওয়েস্ট হামে এসে বেশ চমকই দেখিয়েছিলেন মোহাম্মদ কুদুস। তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে আয়াক্সের হয়ে দারুণ আলো ছড়িয়েছিলেন ঘানায়ান এই উইঙ্গার। মূলত ডেকলান রাইসের বিকল্প হিসেবে তাঁকে কিনে আনে হ্যামাররা। সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিল না সে প্রমাণ দারুণভাবেই দিচ্ছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার। এখন পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬ গোল করেছেন কুদুস। মাঝমাঠ ও উইঙ্গার দুই দিকেই দারুণ কার্যকর কুদুস। গতি, ড্রিবলিং, নিখুঁত ক্রস আর ফিনিশিংয়ে যেকোনো প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে পারেন এই তরুণ।
মিকি ফন ডি ভেন
টটেনহাম
চলতি মৌসুমে দারুণ নৈপুণ্যে দেখিয়ে শুরুটা করে টটেনহাম। এমনকি দলটিতে পড়েনি হ্যারি কেইনের বিদায়ের প্রভাবও। স্পারদের এমন পারফরম্যান্সের পেছনে মূল ভূমিকা ছিল ডাচ সেন্টার ব্যাক মিকি ফন ডি ভেনের। প্রথম ১০ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট পাওয়ার পর তাদের শিরোপার দাবিদার বলেও ভাবা হচ্ছিল। তবে এরপরই হঠাৎ ছন্দপতন হয় ক্লাবটির। একের পর এক ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে নেমে যায় ৫ নম্বরে। মূলত চেলসির বিপক্ষে ঘরের মাঠে ডি ভেনের চোটই সর্বনাশটা করেছে। তাঁকে হারানোর পর দাপুটে রূপটাও হারিয়ে ফেলে লন্ডনের ক্লাবটি। চেলসির বিপক্ষে ম্যাচটিসহ টানা ৫ ম্যাচে জয়হীন থাকে তারা।