প্রিমিয়ার লিগে পরাশক্তিরা সব মাঠে নেমেছিল আজ রাতে। নানা পরিসংখ্যান ও পরিস্থিতির কারণে সব কটি ম্যাচই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে জয়ের দেখা পেল ম্যানচেস্টার সিটি। সালাহ–জাদুর পরও নিউক্যাসলের সঙ্গে ড্র করেছে শীর্ষে থাকা লিভারপুল। এ ছাড়া অন্য ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে দিয়েছে আর্সেনাল।
টানা ৭ ম্যাচ জয়হীন থাকার পর অবশেষে জয়ে ফিরল ম্যানচেস্টার সিটি। ইতিহাদে নটিংহাম ফরেস্টকে ৩–০ গোলে হারিয়েছে তারা। এটি প্রিমিয়ার লিগে টানা ৪ হারের পর সিটির পাওয়া বহু আরাধ্যের জয়ও বটে।
লিভারপুলের বিপক্ষে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। বড় জয়ে সেই কথাই বোধহয় রাখলেন তিনি। এ জয়ে ১৪ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চারে ওঠে এল সিটি।
টানা হারের বৃত্ত ভাঙতে শুরু থেকেই মরিয়া হয়ে মাঠে নামে সিটি। অতিথি নটিংহাম ফরেস্টকে কোনো সুযোগ না দিয়েই আক্রমণের পর আক্রমণে যায় তারা। ফলে এগিয়ে যেতে ৮ মিনিটের বেশি লাগেনি। কেভিন ডি ব্রুইনার অ্যাসিস্টে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন বের্নার্দো সিলভা।
এরপর ৩১ মিনিটে সেই ডি ব্রুইনাই দারুণ ফিনিশিংয়ে ব্যবধান ২–০ করেন। প্রথমার্ধের বাকি সময়ও গোলের জন্য মরিয়া ছিল সিটি। কিন্তু দুই গোলেই শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বিরতির পর দলটির হয়ে ব্যবধান ৩–০ করেন জেরেমি ডকু। এই তিন গোলেই শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সিটি।
অবিশ্বাস্য— এ মৌসুমে মোহাম্মদ সালাহর পারফরম্যান্সকে এই একটি শব্দেই সম্ভবত বোঝানো যায়। ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করেই চলেছেন এই লিভারপুল তারকা। শুধু তা–ই নয়, আজ দুবার পিছিয়ে পড়া লিভারপুলকেও এক পর্যায়ে এগিয়ে দিয়েছিলেন সালাহই। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জেতাতে পারেননি। ৩–৩ গোলের রোমাঞ্চকর এক ড্রয়ে শেষ হয়েছে ম্যাচটি। এদিন জোড়া গোলের পাশাপাশি লিভারপুলের অন্য গোলটিতে সহায়তাও করেছেন সালাহ। তবে সালাহর এমন পারফরম্যান্সের পরও ড্রয়ের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে লিভারপুলকে।
ঘরের মাঠে টেবিল টপার লিভারপুলকে শুরু থেকেই চেপে ধরে নিউক্যাসল। একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলকে সুযোগ না দিয়েই গোল আদায়ের চেষ্টা করছিল তারা। কয়েকবার কাছাকাছি গিয়েও হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। চাপ সামলে লিভারপুলও চেষ্টা করে লড়াইয়ে ফেরার। ১৪ ও ১৫ মিনিটে পরপর দুবার প্রচেষ্টা নেয় তারা।
প্রথমবার আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টারকে ঠেকান প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। আর দ্বিতীয়বার ম্যাক আলিস্টারের শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। এই দুই প্রচেষ্টা বাদ দিলে লিভারপুলকে প্রথমার্ধে বেশ সংগ্রাম করতে দেখা যায়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিকই লিড নিয়ে নেয় নিউক্যাসল। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে দারুণ এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন আলেক্সান্দার ইসাক। একটু পর আন্তোনিও গর্ডন লিভারপুল গোলরক্ষক কেলেহারকে একা পেয়েও গোল করতে না পারায় ব্যবধান বাড়াতে পারেনি নিউক্যাসল।
বিরতির পর অবশ্য আধিপত্যের সঙ্গে লিডও হারায় নিউক্যাসল। ম্যাচের ৫০ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহর পাস থেকে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান কার্টিস জোনস। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার দুটি সুযোগ আসে লিভারপুলের সামনে, তবে কাছাকাছি গিয়েও গোল পাওয়া হয়নি তাদের।
লিভারপুল না পারলেও ঠিকই পেরেছে নিউক্যাসল। ৬২ মিনিটে গর্ডনের দারুণ এক গোলে আবার ম্যাচে লিড নেয় স্বাগতিক নিউক্যাসল। তবে সালাহ–জাদুতে দ্রুত লিড হারানোর পাশাপাশি পিছিয়েও পড়ে তারা। ম্যাচের ৬৮ ও ৮৩ মিনিটে গোল করেন সালাহ। এ নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে টানা ৭ ম্যাচে ৯ গোল করলেন সালাহ। আর সব মিলিয়ে লিগে তাঁর গোলের সংখ্যা ১১। তবে সালাহ–জাদুতে লিভারপুল যখন জয় দেখছিল, তখনই ম্যাচের ৯০ মিনিটে ফ্যাবিয়ান শার গোল করে সমতায় ফেরান নিউক্যাসলকে। এরপর অবশ্য আর কোনো দল গোল পায়নি। রোমাঞ্চকর ম্যাচটি ড্র হয়েছে ৩–৩ গোলে।
একই রাতের অন্য ম্যাচে রুবেন আমোরিমের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ২–০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে আর্সেনাল। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দুটি গোলই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে। গোলগুলো করেছেন জিরুয়ান টিম্বার ও উইলিয়াম সালিবা। এ জয়ে ১৪ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে থাকল আর্সেনাল। আর ১১ নম্বরে থাকা ইউনাইটেডের পয়েন্ট ১৪ ম্যাচে ১৯।